বৈরুতে বিস্ফোরণ: প্রতিবাদে কাঁদুনে গ্যাস, গুলি, আগুন
বৈরুতের ধ্বংসাত্মক বিস্ফোরণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে লেবাননের রাজধানীতে ব্যাপক সরকারবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে।
শনিবার বৈরুতের শহীদদের চত্বরে প্রায় ১০ হাজার বিক্ষোভকারী জড়ো হয়ে সরকারবিরোধী শ্লোগান দেয়, তাদের কেউ কেউ পুলিশের দিকে পাথর নিক্ষেপ করে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
বিক্ষোভকারীরা অবরোধ ভেঙে পার্লামেন্ট ভবনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এ সময় গুলির শব্দ শোনা যায়।
সংঘর্ষে ১১০ জনেরও বেশি লোক আহত হয়েছেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছে রেডক্রস। শহীদদের চত্বরের কেন্দ্রস্থলে আগুন জ্বলতেও দেখা গেছে।
কয়েক ডজন প্রতিবাদকারী লেবাননের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ঢুকে প্রেসিডেন্ট মিশেল আউনের একটি বাঁধাই করা ছবি পুড়িয়ে দেয়। কয়েক দশক ধরে দেশটিকে শাসন করা বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক শ্রেণির প্রতিনিধি আউন এবং লেবাননের গভীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সঙ্কটের জন্য এদেরেই দায় দিয়েছেন প্রতিবাদকারীরা।মেগাফোনে এক বিক্ষোভকারী বলেন, “আমরা এখানে অবস্থান করছি। সব মন্ত্রণালয়গুলো দখল করে নিতে লেবাননি জনগণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি আমরা।”
রয়টার্সের একজন সাংবাদিক জানিয়েছেন, কিছু বিক্ষোভকারী পার্লামেন্ট ভবনের দিকে যাওয়া একটি সড়কে বসানো অবরোধ ভাঙার চেষ্টা করলে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে।
গুলি ও রাবার বুলেট ছোড়ার কথা নিশ্চিত করেছে পুলিশ। তবে কারা গুলি ছুড়েছে তাৎক্ষণিকভাবে তা পরিষ্কার হয়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
মঙ্গলবারের ভয়াবহ বিস্ফোরণের জন্য রাজনীতিবিদদের অবহেলাকে দায়ী করে তাদের ফাঁসিতে ঝোলানো উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বিক্ষোভকারীরা। তাদের শাস্তি দাবি করেছেন তারা।বৈরুত বন্দরের একটি গুদামে সংঘটিত ওই বিশাল বিস্ফোরণে লেবাননের রাজধানীর বিশাল অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। ১৫৮ জন নিহত ও ছয় হাজারেরও বেশি লোক আহত হন। গৃহহারা হয় আড়াই লাখেরও বেশি মানুষ।
‘জনগণ সরকারের পতন চায়’ বলে শ্লোগান দেয় বিক্ষোভকারীরা; এই শ্লোগান ২০১১ সালে ‘আরব বসন্ত’ গণঅভ্যুত্থানের সময় অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। বিক্ষোভকারীদের হাতে থাকা পোস্টারে লেখা ছিল, ‘বিপ্লব, বিপ্লব’, ‘চলে যাও, তোমরা সবাই হত্যাকারী’, ‘চলে যাও সব আবর্জনা’।
আগাম পার্লামেন্ট নির্বাচনই এই পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার একমাত্র পথ বলে মন্তব্য করেছেন লেবাননের প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব।
শাসক অভিজাত শ্রেণির দুর্নীতি, অদক্ষ প্রশাসন ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে গত অক্টোবরে হাজার হাজার লোক বৈরুতের রাস্তায় নেমে এসেছিল, তারপর থেকে এই প্রথম সরকারবিরোধী এত বড় বিক্ষোভ হল।
“তোমাদের কোনো বিবেক নেই, কোনো নীতি নেই। বাড়ি যাও! চলে যাও! পদত্যাগ কর, অনেক হয়েছে,” বলে চিৎকার করেন একজন প্রতিবাদকারী।
“তোমরা আমাদের দারিদ্র, মৃত্যু ও ধ্বংস দিয়েছ; আর কী চাও তোমরা?” বলেন আরেকজন।সংঘর্ষ চলার সময় মেশিনগান বসানো গাড়িতে করে ওই এলাকায় টহল দেয় সৈন্যরা। ঘটনাস্থলে অ্যাম্বুলেন্স জড়ো হয়। কাঁদুনে গ্যাসের আঘাতে একজন কিশোর অজ্ঞান হয়ে পড়েন।
“সত্যি সেনাবাহিনী এখানে এসেছে? আমাদের গুলি করতে তোমরা এখানে এসেছ? আমাদের সঙ্গে যোগ দাও, আমরা একসঙ্গে সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারবো,” চিৎকার করে বলেন একজন নারী।
বৈরুতের ইতিহাসে মঙ্গলবারের বিস্ফোরণই সবচেয়ে বড় বিস্ফোরণ। বিশাল এলাকা ধ্বংস করে দেওয়া ওই বিস্ফোরণের পর থেকে ২১ জন নিখোঁজ রয়েছেন আর হিসাবকৃত মোট ক্ষতির পরিমাণ ১৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।