November 24, 2024
আন্তর্জাতিক

বৈরী আবহাওয়ায় ইউরোপে ৪০ বছরে প্রায় দেড় লাখ মৃত্যু: গবেষণা

বৈরী ও চরম আবহাওয়াজনিত বিশেষ করে তাপপ্রবাহ ও বন্যার কারণে ইউরোপে গত ৪০ বছরে ক্ষতি হয়েছে ৫১০ বিলিয়ন ইউরো অর্থাৎ ৭৭৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। শুধু তাই নয় এমন পরিস্থিতিতে প্রাণ গেছে অন্তত এক লাখ ৪২ হাজার মানুষের। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

ইউরোপের পরিবেশবিষয়ক সংস্থা (ইইএ) এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ব্যক্তি ও রাষ্ট্রীয় উভয় পর্যায়ে অভিযোজন সমুন্নত রাখার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ১৯৮০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত আর্থিক ক্ষতির প্রায় ৬০ শতাংশের জন্য কয়েকটি বড় ঘটনাই দায়ী। মানুষের প্রাণহানির কথা বিবেচনায় নিলে দেখা যায় যে, ৯১ শতাংশ মানুষের মৃত্যুর জন্য তাপপ্রবাহ দায়ী। ২০০৩ সালে গ্রীষ্মকালীন তাপপ্রবাহে ইউরোপে অন্তত ৮০ হাজার মানুষ মারা যায়।

কিন্তু একই তাপপ্রবাহে পরবর্তীতে মৃত্যুর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কমে যায়। বিভিন্ন দেশ সে সময় ভিন্ন ভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল বলে ধারণা করছেন গবেষকরা। বিশেষ করে এয়ার-কন্ডিশনার স্থাপন ছিল উল্লেখযোগ্য ব্যাপার।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার করা অনুমান বলছে, গত ৫০ বছরে আবহাওয়া-সম্পর্কিত বিপর্যয় বেড়ে গেছে। এতে বহু ক্ষয়ক্ষতি হলেও বিগত বছরগুলোতে মৃত্যু কম হয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের কারণে ইউরোপে গত ৪০ বছরে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নিরুপণ করা খুব সহজ নয়। ইইএ সংস্থাটি বলছে, গত ৪০ বছরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বিষয়টি নিয়ে উপসংহারে পৌঁছানো যাবে না। কেননা একেক বছরের ক্ষয়ক্ষতির একেক রকম তথ্য দেয় জলবায়ু ও আবহাওয়া সম্পর্কিত তথ্য-উপাত্ত।

ইইএ’র বিশেষজ্ঞ ওয়াউটার ভ্যানেউভাইল বলেন, জলবায়ুর অবস্থার ওপর আবহাওয়া এবং জলবায়ু সম্পর্কিত বিপর্যয় ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের এক্ষেত্রে প্রভাবিত করতে পারে। কিন্তু শুধু জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের কারণে যে ক্ষয়ক্ষতি হয় তা এক নয়।

তিনি বলেন, সম্প্রতি গবেষণায় আরও একটি বিষয় উঠে এসেছে যে, জলবায়ু পরিবর্তনে ইন্টারগর্ভনমেন্টাল প্যানেলের কাজ লক্ষ্য করলে যেটি পাওয় যায় তা হলো এখন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খরা ও দাবানলও বিপর্যয় ডেকে আনছে।

Europe1

এছাড়া রয়েছে শিলাবৃষ্টিও। যদিও এখনও তথ্য প্রমাণের অভাব রয়েছে। ইউরোপে এখনো আকস্মিক ঝড়ের বিষয়টি অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। ফলে এর তথ্য উপাত্ত স্পষ্ট নয়।

শুধু ভূমধ্যসাগরেই নয়, ইউরোপের বেশিরভাগ অংশে জলবায়ু পূর্বাভাসের উপর ভিত্তি করে খরার মতো অবস্থা আরও তীব্র হতে পারে।

গত চার দশকে ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে জার্মানি। আবহাওয়াজনিত কারণে দেশটির ১০৭ মিলিয়ন ইউরো ক্ষতি হয়েছে এবং ভুক্তভোগীর সংখ্যা ৪২ হাজার। একই সময়ে ফ্রান্সে ক্ষতি হয়েছে ৯৯ বিলিয়ন ইউরো এবং মারা গেছে ২৬ হাজার ৭শ জন। ইতালিতে ক্ষতি হয়েছে ৯০ বিলিয়ন ইউরো এবং মারা গেছে ২১ হাজার ৬শ জন।

আর্থিক ক্ষতির ২৩ শতাংশ বিমার মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব হয়েছে। যদিও দেশভেদে বৈষম্যও প্রকট। রোমানিয়া ও লিথুনিয়ায় ১ শতাংশ ক্ষতিপূরণ পায় যেখানে নেদাল্যান্ডস ও ডেনমার্কে দেওয়া হয় ৫৫ ও ৫৬ শতাংশ।

একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া সংস্থা এনওএএ’র তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮০ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র আবহাওয়াজনিত ৩১০টি দুর্যোগের কবলে পড়ে এবং ক্ষতি হয়েছে ২ হাজার ১৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এসব আবহাওয়াজনিত দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যানে ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *