বৃষ্টি কেড়ে নিলো বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখার স্বপ্ন
চা বাগান আর সবুজে ঘেরা সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে অবিরাম ঝরতে থাকা বৃষ্টি যেন নৈসর্গিক দৃশ্য। কিন্তু নিগার সুলতানা জ্যোতিদের কাছে এই বৃষ্টি ঝরছে বিষাদের কাব্য হয়ে। প্রতিটি জলকণা ধাবিত করেছে দুঃস্বপ্নের দিকে। শেষ পর্যন্ত এই বৃষ্টি কেড়ে নিলো বাংলাদেশের এশিয়া কাপ শিরোপা ধরে রাখার স্বপ্ন।
মঞ্চ প্রস্তুত ছিল। প্রয়োজন ছিল একটি জয়। প্রতিপক্ষ পুচকে আরব আমিরাত। বলে কয়ে উড়িয়ে দেওয়ার মতো। কিন্তু প্রকৃতির সঙ্গে কি আর পারা যায়। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টায় টস হওয়ার কথা ছিল। অঝোরে ঝরতে থাকা বৃষ্টির কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। বাড়তে থাকে অপেক্ষা। বৃষ্টি থামার কোনও সম্ভাবনাই দেখা যায়নি। ১০টা ৫৪ মিনিটে ম্যাচ পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয়।
শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের সেমিফাইনালে ওঠার স্বপ্ন। স্বাগতিকদের টপকে ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে থাইল্যান্ড নিশ্চিত করে সেমিফাইনাল।
আমিরাতের বিপক্ষে জিতলে বাংলাদেশের পয়েন্ট থাইদের সমান ৬ হতো। রান রেটে এগিয়ে থাকায় এক প্রকার নিশ্চিত ছিল সেমিফাইনাল। বৃষ্টি আর তা হতে দিলো কই।
টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছিল সেই থাইল্যান্ডকে উড়িয়ে। পরের ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণের পর মালয়েশিয়ার বিপক্ষে আবার উড়ন্ত জয়। এরপর টানা দুই ম্যাচে ভারত-শ্রীলঙ্কার কাছে হার। ভারতের কাছে হার প্রত্যাশিত থাকলেও লঙ্কানদের বিপক্ষে না পারাটা ছিল হতাশার। এখানেই পিছিয়ে যায় বাংলাদেশ।
ম্যাচটিতে বৃষ্টি আইনে ৭ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৪১। ৪২ বলে ৪১। হাতে ১০ উইকেট। সিঙ্গেল নিলেও হয়ে যায় এটি। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা তা পারেননি। ষষ্ঠ ওভারে মাত্র ৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ম্যাচটাই হাতছাড়া করে। অথচ লঙ্কানদের বিপক্ষে জিতলে অন্যের ফলের দিকে তাকিয়ে থাকতো হতো না।
সিলেট ছিল মেয়েদের চেনা মাঠ। এখানের প্রতিটি বালুকণা তাদের চেনা। কিন্তু এখানেই নিজেদের সেরাটা খেলাটা খেলতে পারেনি। বড় দলগুলোর বিপক্ষে নিয়মিত না খেলার অজুহাতও দিয়েছেন মেয়েরা। তাই বলে এভাবে হারবে ম্যাচ? সেটি তারা নিজেরাও বিশ্বাস করতে পারেননি। আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাছাইয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে নিজেদের মাঠে এশিয়া কাপ খেলতে নেমে এমন ভরাডুবি, মেনে নেওয়া কঠিন বটে। তাই তো লঙ্কানদের বিপক্ষে হারের পর জলে ভেসেছিল জ্যোতিদের চোখ।
২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ও ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ছেলেদের নকআউটে ওঠার পেছনে বড় প্রভাবক ছিল বৃষ্টি। এবার সেই বৃষ্টি মেয়েদের ক্রিকেটের যেন হন্তারক।
গতবার মালয়েশিয়ায় ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা এবার ৫ ম্যাচের ৩টিতে হেরে সেমিতে ওঠার আগেই বাদ। তাই তো আক্ষেপ করে জাহানারা বলছিলেন, ‘হোম গ্রাউন্ডে খেলা, ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন আমরা। যদি কোনও কারণে সেমিফাইনালে মিস করি আমাদের দলের থেকে মনে হয় না অন্য কারও খারাপ লাগাটা কাজ করবে।’
বাদ পড়ার পর অবশ্য প্রতিক্রিয়া জানা সম্ভব হয়নি, ম্যাচ বাতিলের পর সংবাদ সম্মেলনের যে ব্যবস্থা ছিল না!