বৃষ্টি ও ধসে বিপর্যস্ত হিমাচল, উত্তরাখন্ড
টানা বৃষ্টি, বন্যা ও ধসে বিপর্যস্ত ভারতের হিমাচল ও উত্তরাখন্ড প্রদেশ। পাঞ্জাব ও আসামে বন্যা পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। দিল্লিতে যমুনার পানি বাড়ছে।
হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখু জানিয়েছেন, এ রকম প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে হিমাচল আগে কখনো পড়েনি। এখনই মোট ১০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
শুধু হিমাচলেই ৬০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা সিমলা ও মান্ডির। দুদিন আগেই সিমলার সামারহিলে একটা মন্দির ধসে পড়ে। সেখান থেকে এখন পর্যন্ত ১৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
সামার হিল ছাড়াও সিমলার কৃষ্ণনগর ও ফাগলিতে বড় ধস নেমেছে। দুটি জায়গায় উদ্ধারকাজ চলছে। সিমলায় একসঙ্গে এত ধস সাম্প্রতিক কালে দেখা যায়নি। ফাগলি থেকে পাঁচটি এবং কৃষ্ণনগর থেকে দুটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনটি জায়গায় ধসের ফলে পাকা ও কাঁচা বাড়ি কাদামাটির তলায় চাপা পড়েছে। পাকা বাড়ি ভেঙে যাওয়ায় মানুষ কংক্রিটের ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছেন। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, আরও অনেকের মরদেহ উদ্ধার হতে পারে।
মঙ্গলবার সিমলার প্রায় কেন্দ্রে থাকা কৃষ্ণনগরে বৃষ্টি ও ধসের কারণে আটটি বাড়ি ভেঙে যায়। ১০ জন পানির তোড়ে ভেসে যান। তাঁদের মধ্যে দুজন মারা গেছেন। বাকিরা আহত হয়েছেন।
সিমলার এসডিএম ভানু গুপ্তা জানিয়েছেন, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলার কর্মী, রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা সংস্থার কর্মীরা ছাড়াও সেনা, পুলিশ ও হোমগার্ডরা উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছেন। উদ্ধারকারী দলের ধারণা, এখনো ধ্বংসস্তূপের তলায় কিছু মানুষ বেঁচে থাকতে পারেন। তাই খুব সাবধানে কাজ করা হচ্ছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সব স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ১৯ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে।
মান্ডিতে ভয়ংকর বন্যায় অসংখ্য মানুষ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন। তার ওপর জলাধার থেকে পানি ছাড়ার পর মান্ডিতে ৫০০ মানুষ বিপদের মুখে পড়েন। তাঁদের দ্রুত নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মান্ডিতে ধসের ফলে পাঁচটি বাড়ি ভেঙে পড়েছে।
সোলানে বন্যায় সাতজন মারা গেছেন। বর্ষার শুরু থেকে এ পর্যন্ত হিমাচলে ১৭০টি ক্লাউডবার্স্ট হয়েছে ও ধস নেমেছে। সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৬০০ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সিমলা, সোলান, মান্ডি, হামিরপুর ও কাংরার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ।
প্রবল বৃষ্টির পর উত্তরাখন্ডের পৌরিতে ভয়ংকর ধস নেমেছে। এর ফলে অন্তত তিনজন মারা গেছেন। চারধামযাত্রা পরপর দুদিন স্থগিত রাখা হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে ঋষিকেশে। এক দিনে ৪২ সেন্টিমিটার বৃষ্টি হয়েছে এখানে।
প্রবল বৃষ্টির পর জোশিমঠে বিভিন্ন রাস্তা ও বাড়িতে ফাটল আরও বেড়েছে। পাঁচটি পরিবারকে ত্রাণশিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গত জানুয়ারিতে জোশিমঠে বিভিন্ন বাড়িতে ফাটল দেখা দেয়। ভেঙে গেছে অসংখ্য বাড়ি। অনেক পরিবারকে ত্রাণশিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
জোশিমঠের কাছে হেলাংয়ে বাড়ি ভেঙে পড়ে তিনজন আহত হয়েছেন। কয়েকজন এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আসামের বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অন্তত ৭৫ হাজার মানুষ। ব্রহ্মপুত্রসহ চারটি নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দরং, শিবসাগর, চিরাং ও ধেমাজির অবস্থা খারাপ।
উত্তরাখন্ডে বৃষ্টির কারণে দিল্লিতে যমুনার পানি আবারও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। কিছুদিন আগেই যমুনার বন্যায় দিল্লির নিচু এলাকা তলিয়ে গিয়েছিল। লাল কেল্লার পাশে যমুনার পানি চলে এসেছিল। আগ্রায় তাজমহলের দেয়াল পর্যন্ত যমুনার পানি পৌঁছে গিয়েছিল।
পাঞ্জাবে ১৯টি জেলায় প্রায় দেড় হাজার গ্রাম বন্যার কবলে পড়েছে। বিপাশা ও শতদ্রুর পানি অনেকটা বেড়ে গেছে। ভাকরা জলাধার থেকে প্রচুর পরিমাণে পানিও ছাড়া হয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক