বিশ্বকাপ জিততে শেষবারের মত প্রস্তুত মেসি
ফুটবলে সেরা খেলোয়াড়দের নামের তালিকা করা হলে পেলে-ম্যারাডোনার পরই আসে লিওনেল মেসির নাম। কোনো কোনো দিক থেকে সাবেক ওই দুই কিংবদন্তি খেলোয়াড়দেরও ছাড়িয়ে গেছে তিনি। ফুটবলে সেরার আসনে হয়ে থাকার জন্য সব অর্জনই রয়েছে তার; কিন্তু একটি ক্ষেত্রেই তিনি পিছিয়ে। কারণ, মেসি এখনো বিশ্বকাপ ট্রফি জিততে পারেননি।
এর আগে ৪টি ফুটবল বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেছেন মেসি। এবারের কাতার বিশ্বকাপসহ হবে তার পঞ্চম বিশ্বকাপ। হয়তো এবারই তিনি শেষবারের মত অংশগ্রহণ করবেন বিশ্বকাপে। একটাই কারণ, মেসির খেলায় জাদুকরি ছন্দ থাকলেও বাধা দিচ্ছে বয়স। তার বর্তমান বয়স ৩৫।
এবারের কাতার বিশ্বকাপ জয়ের জন্য যদি ফেবারিট কয়েকটি দলের তালিকা করা হয়, এরমধ্যে জায়গা করে নেবে লিওনেল মেসির দেশ আর্জেন্টিনাও। এখনও পর্যন্ত ৩৫টি ম্যাচ অপরাজিত থাকার কারণে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপের অন্যতম ফেবারিট হিসেবে ধরা হচ্ছে। এর মধ্যে আবার রয়েছে একটি মেজর ট্রফিও। ২০২১ কোপা আমেরিকায় লাতিন আমেরিকার অন্যতম সেরা দল ব্রাজিলকে হারিয়ে ১৯৯৩ সালের পর প্রথম কোপা আমেরিকা ট্রফি জয় করে আর্জেন্টিনা।
শুধু মেসির কারণেই নয়, বিশ্বের অন্যতম সেরা সেরা ফুটবলাররা রয়েছে আর্জেন্টিনা দলটি। বর্তমান প্রজন্মের ফুটবল জাদুকর মেসিকে পেয়ে তারা যেন আরও উজ্জীবিত। তারাও চান তাদের সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করছে মেসির হাতে বিশ্বকাপ ট্রফি তুলে দিয়ে তার সকল অর্জনকে পরিপূর্ণ করতে।
২০০৬ বিশ্বকাপে মাত্র ১৯ বছর বয়সে প্রথমবার মত আর্জেন্টিনার জার্সিতে অংশগ্রহণ করেন মেসি। সেবার প্রথম ম্যাচে সুযোগ পাননি, তবে দ্বিতীয় ম্যাচে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে নেমেই করেছিলেন বাজিমাত। সার্বিয়া এবং মন্টেনেগ্রোর বিপক্ষে খেলার ৭৫তম মিনিটে রদ্রিগেজের বদলি হিসেবে মাঠে নামার ১৩ মিনিটের মাথায় গোল করেন তিনি। ওই ম্যাচে আর্জেন্টিনা ৬-০ গোলে জয়লাভ করে।
মেসির খেলা তৃতীয় বিশ্বকাপে শিরোপা জয়ের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলো তারা। কিন্তু ২০১৪ বিশ্বকাপে শিরোপার এত কাছাকাছি গিয়েও ভাগ্য সহায় হয়নি তার। গ্রুপ পর্ব, নক আউট পর্ব- সবই দুর্দান্তভাবে পার করেছিল তারা। কিন্তু ফাইনালে এসে ইউরোপ জায়ান্ট জার্মানির কাছে ১-০ গোলে হেরে যায় তারা। ফাইনালে নির্ধারিত সময় ৯০ মিনিট পর্যস্দ আর্জেন্টিনা গোলশূন্য ফলাফল ধরে রাখলেও ম্যাচের ১১৯তম মিনিটে হজম করতে হয় পরাজয়সূচক গোল। সেই বিশ্বকাপে দলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন তিনি। ২০১৮ বিশ্বকাপে নকআউট পর্বে ফ্রান্সের সঙ্গে হেরে বিদায় নেয়।
অথচ, জাতীয় দল থেকে মেসি বেশি অর্জন করেছেন তার ক্লাব ক্যারিয়ারে। ২০০০ সালে বার্সেলোনা ক্লাবের ফুটবল একাডেমি লা মাসিয়ার সঙ্গে যুক্ত হন। ‘বি’ ‘সি’ দলে খেলে ফুটবল নৈপূন্যতা দেখিয়ে মাত্র ১৭ বছর বয়সেই, ২০০৪ সালে জায়গা করে নেন বার্সার মূল দলে। সে সময় বার্সায় রোনালদিনহো, জাভি, ইনিয়েস্তা, পুয়োলদের মত তারকা খেলোয়াড়দের উপস্থিতি ছিলো। যদিও তারকাদের সান্নিধ্যে আসার পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
২০২১ সাল পর্যন্ত বার্সায় কাটান আর্জেন্টাইন তারকা। এর মধ্যে জিতেছেন ৭টি ব্যালন ডি’অর, ৪টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ট্রফি, ৩বার ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ, ৩ বার উয়েফা সেরা খেলোয়াড়, ১০ বার লা লিগা ট্রফির মত আরো অনেক অনেক অর্জন। সবশেষ তিনি ২০২১-২২ মৌসুমে যোগ দেন ফ্রান্সের ক্লাব প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ে (পিএসজি)। এ ক্লাবে প্রথম মৌসুম খারাপ পার করলেও দ্বিতীয় মৌসুমে ফিরে এসেছে চিরচেনা ছন্দে।
পিএসজির হয়ে গত ১৮ ম্যাচে নিজে গোল করেছেন ১২ টি এবং অন্যকে দিয়ে গোল করিয়েছেন ১৪টি। মেসির এমন ছন্দে ফেরায়, আশা করাই যায় আর্জেন্টিনা এবার হয়তো ছোঁয়া পাবে বিশ্বকাপ ট্রফিটির।