বিধিনিষেধেও ঈদযাত্রায় সড়কে ঝরল ২৮৩ প্রাণ
মহামারি করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সরকারঘোষিত বিধিনিষেধের মধ্যেও এবারের পবিত্র ঈদুল ফিতরে দেশের সড়ক-মহাসড়কে ২২৪টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন ২৮৩ জন। আর আহত হয়েছেন ৩১৯ জন।
আজ শনিবার (২২ মে) যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ এ তথ্য জানিয়েছে।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. সামসুদ্দীন চৌধুরী জানান, সংগঠনটির দুর্ঘটনা গবেষণা ও মনিটরিং সেল ও প্যাসেঞ্জার ভয়েস ডটনেট যৌথভাবে সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এতে নৌপথে বাংলাবাজার ফেরিঘাটে ফেরিতে হুড়াহুড়িতে পদদলিত হয়ে ৫ জন নিহত ও শতাধিক অসুস্থ হওয়ার তথ্যও তুলে ধরা হয়েছে।
সংগঠনটি বলছে, মহামারি করোনার কারণে গত বছরের মতো এ বছরও প্রথম রমজান থেকে বিধিনিষেধ ছিল সারাদেশে। সারাদেশে গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও পণ্য পরিবহনের যান ও ব্যক্তিগত গাড়িতে ঈদযাত্রা অব্যাহত ছিল। তবুও ঈদের আগে ও পরে সড়ক দুর্ঘটনা ছিল আগের তুলনায় বেশি।
৮ মে থেকে ২০ মে পর্যন্ত ১৩ দিনে ২২৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৮৩ জন নিহত ও ৩১৯ জন আহত হয়েছেন। এ সময়ে রেলপথে ট্রেনেকাটা পড়ে ১ জন নিহত হয়েছেন। একই সময়ে নৌ-পথে বিচ্ছিন্ন দুর্ঘটনায় ৬ জন নিহত হয়েছেন।
যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের দুর্ঘটনা গবেষণা ও মনিটরিং সেলের সদস্যরা দেশের বহুল প্রচারিত বিশ্বাসযোগ্য ১৩টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি আঞ্চলিক দৈনিক ও ১০টি অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদের তথ্য মনিটরিং করে এ প্রতিবেদন তৈরি করে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৮ মে ২৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৮ জন নিহত এবং ১৯ জন আহত হয়েছেন। ৯ মে ১৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৫ জন নিহত এবং ১৬ জন আহত হয়েছেন। ১০ মে ১৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৯ জন নিহত এবং ১৭ জন আহত হয়েছেন।
১১ মে ১৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৫ জন নিহত এবং ২৬ জন আহত হয়েছেন। ১২ থেকে ১৬ মে ৮০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১০৮ জন নিহত এবং ১৬৬ জন আহত হয়েছেন।
এছাড়া ১৭ মে ২০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৭ জন নিহত এবং ২৩ জনআহত হয়েছেন। ১৮ মে ১৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৫ জন নিহত এবং ১০ জন আহত হয়েছেন। ১৯ মে ২৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৪ জন নিহত এবং ১২ জন আহত হয়েছেন। আর ২০ মে ১৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২২ জন নিহত এবং ৩০ আহত হয়েছেন।
যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের তথ্যমতে, ২০১৯ সালের ঈদুল ফিতরের ঈদযাত্রায় ১৮৫ সড়ক দুর্ঘটনায় ২২১ জন নিহত ও ৬৫২ জন আহত হয়েছিল। এছাড়া ২০২০ সালের ঈদুল ফিতরে ১৪৩ সড়ক দুর্ঘটনায় ১৬২ জন নিহত এবং ২৭১ জন আহত হন। গত বছরের চেয়ে এবারের ঈদযাত্রায় নিহতের সংখ্যা বেড়েছে ৭৪ শতাংশ।
এবারের ঈদে নরসিংদীতে যাত্রীবাহী বাস ও মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে রাজধানীর নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের ডা. জহিরুল হক ও ডা. তুহিন, গাজীপুরে র্যাব-৪ এর সার্জেন্ট খায়রুল ইসলাম, সাভারে মিরপুর কম্বাইন্ড স্কুলের শিক্ষিকা মিরা আরফিন, লালমনিরহাট জেলা মটর মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ এবং আরজি পরিবহনের মালিক অনুপ কুমার বাপ্পী, পটুয়াখালীতে সাবিনা আক্তার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সেলিনা আক্তার, সিলেট ব্রাক্ষণগ্রাম হযরত শাহজালাল (র.) ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আমিরুল ইসলাম প্রমূখ মারা গেছেন।
এছাড়াও ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম, কালীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শিবলী নোমানী, নাটোরের বড়াইগ্রামে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্বিবিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. শামীম হোসেন ও তার স্ত্রী-পুত্র দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন।
পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, মোট যানবাহনের ১৯টি বাস-মিনিবাস, ৬৭টি ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ও পিকআপ, ৩৪টি কার-মাইক্রো, ৪৫টি নছিমন-করিমন, ভটভটি-ইজিবাইক, অটোরিকশা, ৯৩টি মোটরসাইকেল, ১৭টি অন্যান্য যানবাহন এসব দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৬৩টি গাড়িচাপায়, ৮০টি সংঘর্ষ, ১৬টি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, অন্যান্য কারণে ৬৫টি দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়।
যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ পর্যবেক্ষণে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য ১০টি কারণ উঠে এসছে। সেগুলো হলো—
> লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ছোট যানবাহনে যাত্রী চাপ।
> ফাঁকা রাস্তায় চালকদের প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব ও অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো।
> অতিরিক্ত ভাড়া আদায়।
> অদক্ষ চালক হাতে দৈনিক চুক্তিতে যানবাহন ভাড়া দেয়া।
> ফিটনেসবিহীন যানবাহনে যাত্রী বহন।
> মহাসড়কে অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, নছিমন-করিমন অবাধে চলাচল।
> বিপজ্জনক ওভারটেকিং।
> পণ্য পরিবহনের যানে ঝুঁকিপূর্ণভাবে যাত্রী বহন।
> যাত্রীদের ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার অভাব।
> টিনএজারদের বেপরোয়া গতির মোটরসাইকেল।