বিক্ষোভকারীদের হাত থেকে বাঁচতে ১৫ ফুট উঁচু থেকে লাফিয়ে পড়ছে পুলিশ
ভারতে নতুন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে দিল্লিতে আন্দোলনকারী কৃষকরা ট্রাক্টর নিয়ে মিছিল করার সময় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিভিন্ন রাস্তায় আন্দোলনকারীদের ঢুকতে বাধা দেয় পুলিশ। আন্দোলনকারীরাও পাল্টা তেড়ে যায় পুলিশের দিকে। লালকেল্লা থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। কিন্তু সেখানেও মারমুখী হতে দেখা যায় আন্দোলনকারীদের একাংশকে।
এই ঘটনার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে সংবাদ সংস্থা এএনআই। সেখানে দেখা গেছে, আন্দোলনকারীদের হাত থেকে বাঁচতে ১৫ ফুট উঁচু দেওয়াল থেকে লাফিয়ে পড়ছেন পুলিশ সদস্যরা।
ভিডিওতে দেখা গেছে, লালকেল্লার একটি দেওয়ালের কাছে থাকা পুলিশকর্মীদের লাঠি নিয়ে তাড়া করছেন আন্দোলনকারীরা। তাদের অনেকের হাতেই সে সময় হলুদ পতাকা ছিল। তারা সংখ্যাতেও বেশি ছিলেন। ফলে সেখান থেকে সাময়িকভাবে পিছু হঠতে বাধ্য হয় পুলিশ। সে সময় মারমুখী আন্দোলনকারীদের হাত থেকে উঁচু দেওয়াল থেকে লাফিয়ে নামতে থাকেন পুলিশ সদস্যরা। কয়েকজন পুলিশকর্মী আবার দেওয়ালে ঝুলেই আন্দোলনকারীদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
রাজধানীতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে বেশ কয়েজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, আন্দোলনরত কৃষকদের হামলায় ৮৬ জন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন। তাদের রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা সঙ্কটজনক বলে জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার অর্থাৎ প্রজাতন্ত্র দিবসে দু’পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। কৃষকদের লাঠিপেটা করেছে পুলিশ, ছোড়া হয়েছে কাঁদানে গ্যাস। সহিংসতায় ট্রাক্টর উল্টে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো। যদিও বিক্ষোভকারীদের দাবি, পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন ওই ব্যক্তি।
কয়েক দফা আলোচনার পর দিল্লি পুলিশ মঙ্গলবারের সমাবেশের অনুমতি দিয়েছিল। তবে শর্ত ছিল, প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে কোনোভাবেই বিঘ্ন ঘটানো যাবে না। দিল্লির ছয়টি প্রবেশপথ থেকে কর্মসূচি শুরুর পরিকল্পনা ছিল কৃষকদের। কিন্তু পুলিশ এর সবগুলো অবরোধ করে নতুন একটি রুট ঠিক করে দেয়।
তবে মঙ্গলবার সিংঘু, টিকরি ও গাজিপুর এলাকায় পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙ্গে ট্রাক্টর নিয়ে এগিয়ে যান আন্দোলনকারীরা। একপর্যায়ে একদল বিক্ষোভকারী মুঘল শাসকদের তৈরি ঐতিহাসিক লাল কেল্লা কমপ্লেক্সের ভেতরে ঢুকে পড়ে এবং স্তম্ভ বেয়ে উঠে শিখদের প্রতীক খালসা পতাকা টাঙিয়ে দেয়। তবে বিক্ষোভকারীরা ভারতের জাতীয় পতাকায় হাত দেয়নি বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো।
এদিকে পুলিশের অভিযোগ, বহু সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করেছেন আন্দোলনকারীরা। পুলিশ জানিয়েছে, ৩শ’ ব্যারিকেড ভেঙেছেন আন্দোলনকারীরা। ১৭টি সরকারি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৮টি ডিটিসির বাসে ভাঙচুর করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। পাণ্ডব নগর এবং সীমাপুরী এবং গাজিপুর থানায় মোট চারটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
রাজধানীতে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। পরিস্থিতি সামলাতে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংবাদ সংস্থা এএনআইকে একটি সরকারি সূত্র জানিয়েছে, দিল্লিতে আরও বেশি আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হতে পারে।