বিএনপির মনোনয়ন বাণিজ্যে সুইস ব্যাংকে টাকা বেড়েছে : প্রধানমন্ত্রী
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিএনপির ‘মনোনয়ন বাণিজ্যের’ অর্থের সন্ধান করলেই সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকা বৃদ্ধির হিসাব বেরিয়ে আসবে। গতকাল শনিবার জাতীয় সংসদে অর্থবিল ২০১৯ এর জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাবের আলোচনায় একথা বলেন তিনি।
স¤প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে, গত বছর সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা, যা আগের বছরের থেকে ১২৭৪ কোটি টাকা বেশি।
অর্থবিল নিয়ে জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাবের আলোচনায় বিএনপির সাংসদ রুমিন ফারহানা সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকার বিষয়টি আনেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আরেকজন বললেন, সুইস ব্যাংকে টাকার কথা। উনাকে আমি বলব, সুইস ব্যাংকে টাকাওয়ালা হিসেবে কাদের নাম লিস্টে এসেছে উনি যেন একটু গিয়ে দেখেন। যাদের প্রশংসায় তারা পঞ্চমুখ থাকেন আর যাদের কথা তারা এত বেশি বলেন, তাদের কথাটাই এসেছে।
শুধু তাই নয় এমন কথাও এসেছে, এই যে নির্বাচনটা হল ২০১৮ সালে। যারা একেকটা নির্বাচনে ৩০০টা সিটে, আমি বিএনপির কথাই বলছি। ৩০০ সিটে ৬৯২ জন মনোনয়ন পেল। একটা সিটে কোথাও তিনের অধিক, কোথাও দুয়ের অধিক নমিনেশন দিয়ে এই যে নির্বাচন বাণিজ্যটা করে সেই টাকাগুলো কোথায় রাখল? এই খোঁজটা করলে সুইস ব্যাংকের হিসাব তিনি পেয়ে যাবেন।
ঋণ খেলাপি বিষয়ে এক সাংসদের বক্তবের পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অবৈধভাবে মিলিটারি ডিক্টেটররা ক্ষমতা দখল করে দল গঠন করতে গিয়ে কিছু লোককে অবৈধভাবে সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দিতে ব্যাংক থেকে অকাতরে ঋণ দেওয়া এবং ঋণ শোধ না করার সংস্কৃতি চালু করে।
১৯৭৫-এর পর যে মিলিটারি ডিক্টেটর জিয়া ক্ষমতায় এসেছিল তখন থেকেই ঋণ খেলাপির কালচার শুরু হয়েছে। এরপর তো একের পর এক একইভাবে ক্ষমতা দখল। কাজেই সেখান থেকে বের করে আনা অত্যন্ত কষ্টকর।
খেলাপি কমানোর জন্য ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছেন বলে দাবি করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ হ্রাসের জন্য অর্থমন্ত্রী যেই উদ্যোগের ঘোষণা দিয়েছেন তা অত্যন্ত সময় উপযোগী।
পাশাপাশি আমার সুপারিশ থাকবে যেন ব্যাংক ঋণের উপর সুদের হার এক অংকের মধ্যে রাখা হয় অর্থাৎ সিঙ্গেল ডিজিট। এটি করা গেলে শিল্প ও ব্যবসা খাতকে প্রতিযোগিতা সক্ষম করে গড়ে তোলা সক্ষম হবে। কারণ উচ্চহারে সুদ থাকলে কোনো ইন্ডাস্ট্রি বিকশিত হবে না।
প্রস্তাবিত বাজেটে আবাসন ও অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প বিনিয়োগে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। অর্থবিল নিয়ে জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাবের আলোচনায় এক সাংসদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সংসদ নেতা বলেন, আর কালো টাকা সাদা। অনেক সময় মানুষের কিছু অপ্রদর্শিত অর্থ আসে। কিন্তু এই অপ্রদর্শিত অর্থটা কোনও কাজে লাগানো যায় না। এখন তাকে যদি সুযোগ দেওয়া হয় যেন এই টাকা মূলধারায় চলে আসে।
সে কারণেই এই সুযোগটা দেওয়া হচ্ছে। তবে এটা ঠিক যদি দেথি এখানে দুর্নীতি বাড়ছে সেটা আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব। দুর্নীতিকে আমরা কখনো প্রশ্রয় দেব না। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশকে কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কল্যাণ রাষ্ট্রই যদি না হবে তাহলে আজকের বাংলাদেশ দারিদ্র্যমুক্ত হয় না, আজকে বাংলাদেশের মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছায় না, শিক্ষার হার বৃদ্ধি পায় না, মানুষের জীবন-মান উন্নত হয় না।
বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় শেখ হাসিনা জানান, আগামী অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ২০ শতাংশ ধরা হলেও ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ পেরিয়ে যাবে। আগামী অর্থবছরের বাজেট এমনভাবে করা হয়েছে যা প্রবৃদ্ধি দুই অংকের ঘরে নিয়ে যেতে ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের প্রত্যেক জনগণ এই বাজেট থেকে উপকৃত হবে। সাধারণ আলোচনায় পুঁজিবাজারের স্টক লভ্যাংশ এবং রিজার্ভের ওপর অতিরিক্ত করারোপসহ বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে বাজেটে যে প্রস্তাব আনা হয়েছিল, তা পরিবর্তনের সুপারিশ করেছেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, একটি সমৃদ্ধ অর্থনীতির জন্য প্রয়োজন বিকশিত একটি পুঁজিবাজার। এই বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য অনেক প্রণোদনা থাকছে। এই সব প্রস্তাব বাস্তবায়নের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের স¤প্রসারণ হবে। এভাবে পুঁজিবাজার তার কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা পালনে সক্ষম হবে বলে আমি আশা করি। সরকার তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগাতে চায় মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাজেটে স্টার্টআপদের (তরুণ নতুন উদ্যোক্তা) জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা অত্যন্ত সময়োপযোগী।
পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো অর্থের উপর আগামী অর্থবছর থেকে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনার প্রস্তাবের ফলে রেমিটেন্স পাঠাতে ব্যয় কমবে। এর ফলে বৈধ পথে অর্থ পাঠাতে প্রবাসীরা উৎসাহিত হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ১০ বছরে যে ‘অভূতপূর্ব উন্নতি’ করেছে তা দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা আমাদের একটি বড় সাফল্য।
উন্নয়ন বাজেটে বৈদেশিক নির্ভরশীলতা কমানোর তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে পেরেছি বলেই বাজেটে বৈদেশিক অনুদান মাত্র দশমিক ৮ শতাংশ। আমরা পরনির্ভরশীলতা কমিয়ে আত্মনির্ভরশীল হয়েছি।
রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক ও বস্ত্র শিল্পের জন্য বড় ধরনের কর অব্যাহতির যে সুযোগ চলতি অর্থবছরে শেষ হওয়ার কথা ছিল, তা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব রাখা হয়েছে বাজেটে। এছাড়া বর্তমানে তৈরি পোশাকের চারটি খাত ৪ শতাংশ রপ্তানি প্রণোদনার পাশাপাশি আগামী অর্থবছর থেকে তৈরি পোশাকের বাকি সব খাতের জন্য এক শতাংশ রপ্তানি প্রণোদনা প্রস্তাব করা হয়েছে।
পোশাক খাত নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তৈরি পোশাক দ্রুত বিকাশমান ও সব থেকে সম্ভাবনাময় খাত। তৈরি পোশাকের সব খাতের রপ্তানির ক্ষেত্রে এক শতাংশ প্রণোদনার যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা ‘যুগান্তকারী পদক্ষেপ’। এতে তৈরি পোশাক খাত আরও বিকশিত হবে। কর্মসংস্থানে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক সব ক্ষেত্রে দূরদর্শী সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে সামগ্রিক অর্থনীতি স্থিতিশীল, বাজেট ঘাটতি সহনশীল, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পর্যাপ্ত এবং মুদ্রা বিনিময় হার বাণিজ্য সহায়ক। বাজেট ঘাতটি সব সময় ৫ শতাংশ ধরে রাখছি।