বাড়ছে না সময়, ৩১ জানুয়ারিই পর্দা নামছে বাণিজ্যমেলার
করোনা ভাইরাসের শঙ্কার মধ্যেই দুই বছর পর পূর্বাচলে স্থায়ী ভবনে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা-২০২২ আয়োজন করে সন্তুষ্ট আয়োজকসহ ব্যবসায়ীরা। ফলে এবার বাড়ছে না সময়।
নির্দিষ্ট দিন ৩১ জানুয়ারিই পর্দা নামছে মেলার। শনিবার (২৯ জানুয়ারি) রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এবিষয়ে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ও বাণিজ্যমেলার পরিচালক মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, দুই বছর পর বাণিজ্যমেলার আয়োজন করে আমরা সন্তুষ্ট। আমরা শঙ্কিত ছিলাম রাস্তার জন্য দর্শনার্থীদের আগমণ নিয়ে। কিন্তু আমাদের সে শঙ্কা মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে। আগামী ৩১ জানুয়ারি বাণিজ্য মেলার সমাপনী অনুষ্ঠান হবে। সে আয়োজনও প্রায় সম্পন্ন, সময়টা পরে জানানো হবে। করোনা পরিস্থিতিতে মেলার সময় এবছর আর বাড়ছে না। কঠোর স্বাস্থ্য বিধি মেনে এ পর্যন্ত যে মেলার কার্যক্রম চালাতে পেরেছি এজন্য শুকরিয়া। স্বাস্থ্য বিধি মানাতে মোবাইল কোর্ট থেকে শুরু করে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে এত লোকের মধ্যে সেটা মানানো সম্ভব না। এখানে ব্যাক্তি সচেতনতাই বড় বিষয়।
তিনি বলেন, এবছর পূর্বাচলে বাণিজ্য মেলার স্থায়ী ভবনে ব্যবসায়ীরা শঙ্কা নিয়ে আসলেও কেউ লাভ ছাড়া যাবে না। ব্যবসায়ীরা লাভে আছে। এটা কেউ স্বীকার করে না, কারণ যাতে মেলার সময় বাড়াতে পারে। আমার ছোট বড় যে সব ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয়েছে, তারা বলেছেন লাভে আছেন।
তিনি আরও বলেন, এবছর মেলা প্রাঙ্গণে প্রথম ১৫ দিন দর্শনার্থী কম থাকলেও শেষের দিকে সমাগম অনেক বেড়েছে। ছুটির দিনগুলোতে ২ লাখের বেশি দর্শনার্থী এসেছে। শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) এক সময় মনে হয়েছিল মেলার গেট বন্ধ করে দেব। আগের মেলার মতো লোকজন এসেছে। কেউ চিন্তা করতে পারেনি এখানে এতো লোকজন আসবে। চ্যালেঞ্জ থাকলেও দর্শনার্থীর উপস্থিতিতে সন্তুষ্ট ছিলেন ব্যবসায়ীরা। এবছর শহরের দর্শনার্থী থেকে গ্রামের মানুষ বেশি এসেছেন। তবে আগামী বছর শহরের লোকও আসাও বাড়বে। কারণ সে সময় রাস্তার কাজ শেষ হয়ে যাবে।
এদিকে শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে করোনা ভাইরাসজনিত রোগ কোডিড-১৯ এর বিস্তার রোধকল্পে সার্বিক কার্যাবলী, চলাচলে ৬ দফা বিধি-নিষেধ আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এই বিধি- নিষেধের মধ্যে মেলা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, শপিংমলসহ অন্যান্য মার্কেটগুলো খোলা রাখা যাবে। যেহেতু বাণিজ্যমেলাও শপিংমলের মতো, তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনেই এর কার্যক্রম চলবে। বিধিনিষেধ মেনে বাণিজ্যমেলার কার্যক্রম চলবে তাতে অসুবিধা নেই। তবে মেলায় দর্শনার্থীরা যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে সেদিকে কঠোর নজরদারি থাকবে বলে জানান তিনি
প্রজ্ঞাপণে বলা হয়েছে, ২১ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত-স্কুল কলেজ ও সমপর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও নিজ নিজ ক্ষেত্রে অনুরূপ ব্যবস্থা নেবে। সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়, রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে ১০০ জনের বেশি জনসমাবেশ করা যাবে না। এসব ক্ষেত্রে যারা যোগদান করবে তাদের অবশ্যই টিকা সনদ/২৪ ঘণ্টার মধ্যে পিসিআর সার্টিফিকেট আনতে হবে। সরকারি, বেসরকারি অফিস, শিল্প কারখানায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টিকা সনদ গ্রহণ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে দায়িত্ব বহন করবেন।
বাজার, শপিং মল, মসজিদ, বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চঘাট, রেলস্টেশনসহ সবধরনের জনসমাবেশে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহারসহ যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মনিটর করবে।
প্রসঙ্গত, গত ১ জানুয়ারি থেকে পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা-২০২২ শুরু হয়েছে। মাসব্যাপী এ মেলা চলবে ৩১ জানুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত। এবারের বাণিজ্য মেলায় ১১টি দেশের ২২৭টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। এরমধ্যে বিভিন্ন ক্যাটাগরির ২৩টি প্যাভিলিয়ন, ২৭টি মিনি প্যাভিলিয়ন, ১৬২টি স্টল এবং ১৫টি খাবারের দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়। বরাবরের মতো এবারও মেলায় বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন নির্মাণ করা হয়েছে। মুজিব বর্ষ, মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনারবাংলা বিনির্মাণের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সহ শীততাপ নিয়ন্ত্রিত এক্সিবিশন সেন্টারের ১,৫৫,০০০ বর্গফুট আয়তনের ২টি হলে সব স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কোভিড-১৯ বিবেচনায় নিয়ে মেলা চলাকালীন স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করা হবে।