বাসের স্টিয়ারিং হাতে প্রথমদিনেই কৃষ্ণাকে চাপা দেন মোরশেদ
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
ট্রাস্ট ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির বাসচালক হিসেবে স্টিয়ারিং হাতে নেওয়ার প্রথম দিনেই বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তা কৃষ্ণা রানী চৌধুরীকে চাপা দেন মোরশেদ। ২৭ আগস্ট সকাল থেকে তিনি দুইবার ডিওএইচএস-শাহবাগ যাওয়া-আসা করলেও তৃতীয় যাত্রাতেই ঘটান দুর্ঘটনা।
গ্রেপ্তারের পর মোরশেদ পুলিশকে জানিয়েছেন, তার গাড়ি চালানোর লাইসেন্স থাকলেও সেটি মিডিয়াম ক্যাটাগরির। ট্রাস্ট কোম্পানির বাসটি চালানোর মতো লাইসেন্স তার নেই।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এই লাইসেন্সধারীরা মিনিবাস, ছোট পিক-আপ ও কভার্ড ভ্যান গাড়ি চালাতে পারেন। আর ২৮ এর বেশি আসনের বাস চালাতে লাগে ‘হেভি লাইসেন্স’।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) অর্থ বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক কৃষ্ণা (৫২) গত ২৭ আগস্ট অফিস শেষে বাংলামোটরের ফুটপাতে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। সে সময় ট্রাস্ট ট্রান্সপোর্টের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফুটপাতে উঠে গেলে চাপা পড়েন তিনি। হাসপাতালে নেওয়ার পর তার বাঁ পা কেটে ফেলতে হয়। ওই ঘটনায় পরদিন মোরশেদের সঙ্গে বাসের মালিক ও চালকের সহকারীকে আসামি করে হাতিরঝিল থানায় একটি মামলা করেন কৃষ্ণার স্বামী রাধে দেব চৌধুরী। রোববার রাতে মিরপুরের কাজীপাড়া এলাকা থেকে মোরশেদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন- পিবিআই।
পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার বশির আহমেদ বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মোরশেদ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার পরপরই সে বাংলামোটর থেকে ইব্রাহিমপুরের ভাড়া বাসায় যায়। পরে মোবাইল ফোনের সিম পাল্টে চলে যায় কিশোরগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে। দুর্ঘটনার পর মোরশেদ সেখানেই ছিলেন জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, গতকাল সে ঢাকায় ঢুকেই ধরা পড়ে।
গ্রেপ্তারের পর মোরশেদের কাছে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া যায়নি জানিয়ে বশির আহমেদ বলেন, তবে সে দাবি করছে, তার কাছে মিডিয়াম ক্যাটাগরির লাইসেন্স রয়েছে। সে বলেছে, ২০০৫ সাল থেকে তার ড্রাইভিং লাইসেন্স রয়েছে।
শাহজাহান মিয়া নামের একজন ট্রাফিক পরিদর্শক বলেন, ২৮ এর কম আসনের বাস মিডিয়াম ক্যাটাগরির লাইসেন্স দিয়ে চালানো যায়। এছাড়া ১৫০০ থেকে তিন হাজার কেজি মালামাল বহনে সক্ষম পিক-আপ ও কর্ভাড ভ্যানও চালানো যাবে।
আর হাতিরঝিল থানার পরিদর্শক তদন্ত ইকবাল হোসেন জানিয়েছেন, ট্রাস্ট ট্রান্সপোর্টের বাসটি চালাতে হেভি লাইসেন্স লাগবে। অর্থাৎ বাসটিতে আসনসংখ্যা ২৮টির বেশি।
পিবিআই কর্মকর্তা বশির আহমেদ জানান, মোরশেদ ট্রাস্ট কোম্পানিতে যোগ দেওয়ার আগে কিছুদিন বেকার ছিলেন। এরও আগে কয়েকদিন চালিয়েছেন প্রাইভেট কার। এরপর ওইদিনই (২৭ আগস্ট) সে ট্রাস্ট ট্রান্সপোর্টের গাডড়ি চালানোর চাকরি পায়। আর সেদিন তৃতীয় ট্রিপেই ঘটায় দুর্ঘটনা। মোরশেদের দেওয়া তথ্য যাচাই করে দেখা হচ্ছে বলে জানান পুলিশ সুপার বশির।
এদিকে শেরেবাংলা নগরের জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন কৃষ্ণার শারীরিক অবস্থা জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা খন্দকার মাসুম হাসান বলেন, রোববার কেটে ফেলা পায়ের ক্ষতে অংশে পচন ধরায় আরও কিছু অংশ কেটে ফেলতে হয়েছে। সংক্রমণ যাতে আর বাড়তে না পারে সেজন্য চিকিৎসকরা বোর্ড বসিয়ে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এছাড়া কৃষ্ণা রায়ের কৃত্রিম পা লাগানোর সিদ্ধান্তও নিয়েছে বোর্ড।
কৃষ্ণা রায়ের চিকিৎসার জন্য তার পরিবারের পক্ষ থেকে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে আর্থিক সহায়তা চেয়ে আবেদন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। দুর্ঘটনার পর ট্রাস্ট ট্রান্সপোর্ট কর্তৃপক্ষ কৃষ্ণাকে দুই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে চাইলেও তা ফিরিয়ে দিয়েছে বিআইডব্লিউটিসি। শুরু থেকেই বিআইডব্লিউটিসি এবং তার পরিবার চিকিৎসা চালিয়ে আসছে।