November 27, 2024
আন্তর্জাতিক

বাতাসে কয়েক ঘণ্টা টিকতে পারে করোনাভাইরাস : গবেষণা

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বাতাসে কয়েক ঘণ্টা টিকে থাকতে পারে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি এক গবেষণায় বলা হয়, উচ্চমাত্রার সংক্রামক নভেল করোনাভাইরাস বাতাসে কয়েক ঘণ্টা ও কোনো কিছুর উপরিভাগে কয়েকদিন পর্যন্ত সংক্রামক হিসেবে কার্যকর থাকতে পারে। গবেষণা প্রতিবেদনটি মঙ্গলবার নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

রয়টার্স জানিয়েছে, শ্বাসতন্ত্রের এই রোগ থেকে রক্ষায় নির্দেশনা দিতে জাতীয় স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের অধীন ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের (এনআইএআইডি) বিজ্ঞানীরা গবেষণাটি চালান। ভাইরাসটির নকল তৈরিতে কাশি বা হাঁচির ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র তরল ফোঁটায় যন্ত্রের সাহায্যে অ্যারোসল ছিটিয়ে দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

বাড়ি বা হাসপাতালে কাশি বা বস্তুর সংস্পর্শের মাধ্যমে নিত্য ব্যবহার্য কোনো কিছুতে সংক্রমিত ব্যক্তির শরীরে থাকা ভাইরাস প্রতিস্থাপন করে তারা অনুসন্ধান করে দেখেছেন যে, এসবের উপরিভাগে ভাইরাসটি কতক্ষণ টিকে থাকে।

পরীক্ষায় দেখা গেছে, হাঁচি বা কাশির তরল ফোঁটায় বাহিত হলে অ্যারোসলের মধ্যে নতুন করোনাভাইরাস অন্তত তিন ঘণ্টা কার্যকর থাকে। প্লাস্টিক ও স্টেইনলেস স্টিলে তিন দিন পরেও ভাইরাসটিকে কার্যর অবস্থায় পাওয়া গেছে। তবে কার্ডবোর্ডে ২৪ ঘণ্টা পরে ভাইরাসটিকে কার্যকর পাওয়া যায়নি। আর তামার মধ্যে নুতন করোনাভাইরাস অকার্যকর হতে ৪ ঘণ্টা লেগেছে।

অ্যারোসলের ফোঁটায় ভাইরাসটির অর্ধেক (হাফ-লাইফ) অকার্যকর হতে ৬৬ মিনিট সময় লাগে বলে গবেষণা দল খুঁজে পেয়েছে। কিন্তু আরও একঘণ্টা ছয় মিনিট পর ভাইরাসটির মাত্র তিন চতুর্থাংশ অকার্যকর হয়। গবেষক দলের নেতৃত্বে থাকা এনআইএআইডির রকি মাউন্টেইন ল্যাবরেটরির নিল্ট্জ ভ্যান ডোরেমালেনের মতে, তৃতীয় ঘণ্টার পর কার্যকর ভাইরাসের পরিমাণ দাঁড়ায় সাড়ে ১২ শতাংশ।

আর স্টেইনলেস স্টিলে ভাইরাসটির অর্ধেক কার্যকারিতা হারাতে ৫ ঘণ্টা ৩৮ মিনিট এবং প্লাস্টিকে ৬ ঘণ্টা ৪৯ মিনিট সময় লেগেছে বলে গবেষকরা দেখেছেন। কার্ডবোর্ডে ভাইরাসটির অর্ধেক জীবন নেমে আসে সাড়ে তিন ঘণ্টায়। তবে ওই সব ফলাফলে নির্ধারিত ছাঁচ না পাওয়ায় সংখ্যাগুলোর ব্যাখ্যা দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক করেছেন গবেষকরা। ভারইরাসটির সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত জীবন পাওয়া গেছে তামায়, যেখানে ভাইরাসটি ৪৬ মিনিটের মধ্যে অর্ধেক অকার্যকর হয়ে যায়।

গত ডিসেম্বরের ৩১ তারিখে ভাইরাসটি সর্বপ্রথম শনাক্ত হয় চীনের হুবেই প্রদেশ থেকে। বর্তমানে দেশটিতে ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা একদমই নিচে। ইতিমধ্যেই চীনের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে আসা স্বাস্থ্য কর্মীদের আনুষ্ঠিকভাবে উহান থেকে বিদায় নিতে শুরু করেছেন। এখন পর্যন্ত দেশটিতে করোনায় প্রাণহানি হয়েছে মোট ৩ হাজার ২২৬ জনের। আক্রান্ত হয়েছেন ৮২ হাজার ৭ জন মানুষ।

চীনে করোনার ভয়াবহতা শেষ হলেও বাড়ছে ইউরোপের দেশ ইতালিতে। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরা দেশটির নাগরিক সুরক্ষা সংস্থার বরাত দিয়ে জানায় ইতালিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজার ৫০৬ জনে। ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২ হাজার ৫০৩।

বুধবার আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৮ হাজার ৪১৮ জনের। আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৯৮ হাজার ৩৬৩। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৮২ হাজার ২২৬ জন। মৃত্যুর হার ৪ দশমিক ২ শতাংশ। সুস্থ হওয়ার হার ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ।

 

 

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *