November 28, 2024
লেটেস্টশিক্ষাসাক্ষাৎকার ও মতামত

বাজেট নিয়ে তারুণ্যের ভাবনা

মোঃ মুহতাসিম আবশাদ জিসান : পরিকল্পনা মাফিক এবং সুষ্ঠু বন্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশের আর্থিক সংকট কিছুটা নিরসন করা সম্ভব। আমরা বিগত দুই মাসে লক্ষ্য করেছি যে, মানুষের কর্মসংস্থান বন্ধ হয়ে গেলেও কমে যায়নি আমাদের চাহিদা। ফলে এই চাহিদা পূরণ করতে হচ্ছে সরকারকে। কিন্তু এতে আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়ে যাচ্ছে। তাই যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং ঝুঁকিমুক্ত পদ্ধতিতে যদি আমাদের জনবলকে কোন ভাবে কাজে লাগানো যায় তাহলে হয়তো তা আমাদের অর্থনীতির উপর কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সক্ষম হবে।

এ ব্যপারে আমার একটি ইমপাওয়ারমেন্ট  পরিকল্পনা রয়েছে। আমাদের দেশের  অর্থনীতির অন্যতম সহায়ক হলো আমাদের পোশাক শিল্প। আমাদের দক্ষ পোশাক শ্রমিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে আমরা ইতিমধ্যে ব্যাপক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে এই কর্মক্ষম মানুষ গুলো বেকার হয়ে পড়েছে। তাই আমার পরিকল্পনা হলো আমাদের আশেপাশে এরকম কর্মক্ষম মানুষ দের জন্য একটি করে সেলাই মেশিন উপহার দিলে তারা কিছু কাজ করে খেতে পারবে ।
শুধু সেলাই মেশিন নয় যাদের বসত বাড়িতে ফাকা যায়গা আছে তারা যদি , হাস-মুরগির খামার, মাছ চাষ ইত্যাদি কাজে আগ্রহী হয় তাহলে আমরা তাদের সেই সুযোগ করে দিতে পারি। সেই সাথে এই মহামারির সময়ে কর্মহীন হয়ে পরা বেকার যুবকদের একটা কর্মক্ষম জনশক্তিতে পরিণত করতে পারলে দেশের অর্থনীতির চাকাও সচল থাকবে সেই সাথে এই পরিবারগুলো স্বনির্ভর হতে পারবে।
মোট কথায় আমি চাচ্ছি আমাদের জনশক্তিকে বসিয়ে না রেখে কাজে লাগাতে। এতে এই ক্রান্তিলগ্নেও তাদের কারো বোঝা হয়ে থাকতে হবে না।
ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সরকার এর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পটির প্রতি আরো বিশেষ ভাবে জোর দিতে পারি আমরা। এতে মানুষ লকডাউন মেনেই কাজ করতে পারবে।
এছাড়াও আরো কয়েকটি খাত এ আমার কিছু পরিকল্পনা আছে যা বাস্তবায়ন করতে পারলে আমরা উপকৃত হবো ইনশাহআল্লাহ।
স্বাস্থ্য খাতঃ করোনা মহামারিতে আতঙ্কের শিকার হয়ে অন্যান্য রোগের রোগীরা যাতে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত না হয় সে ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। টেলিমেডিসিন বা ভার্চুয়াল মেডিকেল ক্যাম্পেইন এর মাধ্যমে রোগী দের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জিজ্ঞাসা এবং সমাধান এর ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই করা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে আরো সুযোগ-সুবিধা প্রদান এবং নিরপত্তা ব্যাবস্থা মেনে তৃণমূল পর্যায়ে এই কার্যক্রম পরিচালনার ব্যপারে সচেতন থাকতে হবে।
বর্তমান সময় এর আলোচিত আরেকটি সমস্যা হলো অকারণে মূল্য বৃদ্ধি। যার কবল থেকে রক্ষা পাচ্ছেনা ঔষধ এবং চিকিৎসা সামগ্রী। তাই এই ব্যপারে সরকার কে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
নারী স্বাস্থ্যঃ মহামারির এই সময়ে স্বাস্থ্যগত দিক থেকে পিছিয়ে পড়ছে নারীরা। কারণ তারা অসচেতনতা এবং জড়তার ফলে অনেক গোপনীয় রোগ বা প্রয়োজন ব্যক্ত করতে চায় না। যার ফল স্বরুপ তারা বিভিন্ন ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছেন। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় গর্ভবতী মহিলাদের পরামর্শদাতা হিসেবে যেসকল স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করতেন তাদের দায়িত্ব পালন হয়তো নিয়মিত সম্ভব হচ্ছে না। তাই গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরামর্শের জন্য বিশেষ হটলাইন নাম্বার চালু রাখার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে । এছাড়া মহিলাদের জন্য স্যানেটারি ন্যাপকিন একটি গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির এই মুহূর্তে হয়তো আমরা এটি সহজলভ্য ভাবে তাদের  হাতে পৌঁছে  দিতে পারছিনা। ফলে অসচেতনতা প্রভাবে নারীরা জরায়ু ক্যান্সার, অনিয়ন্ত্রিত ঋতুস্রাব ইত্যাদি কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই স্বল্পমূল্যে এবং সহজে যাতে তারা স্যানেটারি ন্যাপকিন এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য বিষয়ক সামগ্রী পেতে পারেন সেদিকে নজর রাখতে হবে। এছাড়া গ্রামঅঞ্চলের গুরুতর রোগীদের জন্য এই পরিস্থিতিতে হাসপাতালে আশা খুবই কষ্টকর। তাই সেই দিক বিবেচনা করে জরুরি অ্যাম্বুলেন্স সেবা নিশ্চিত করার অনুরোধ রইল।
কৃষি খাতঃ আমাদের অর্থনীতির এই ব্যাপক ক্ষতি পূরণ করতে হলে কৃষি ক্ষাতের তুলনা নেই। কারণ আমাদের অর্থনীতি অনেকটাই কৃষি নির্ভর। তাই চাষাবাদের প্রতি আমাদের বিশেষ ভাবে নজর দিতে হবে। যেমন অনেক দরিদ্র কৃষক বর্তমানে অর্থাভাবে তাদের কৃষিজ উৎপাদন সচল রাখতে পারছে না। এছাড়াও অনাকাঙ্ক্ষিত প্রাকৃতিক দূর্যোগ আম্পানের প্রভাবে সৃষ্ট বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা হয়তো তাদের শেষ পুঁজিটুকুও হারিয়েছেন। তাই এসকল চাষিদের জন্য স্বল্প বা বিনামূল্যে বীজ এবং  সার প্রদান করা প্রয়োজন।
এছাড়া বসতবাড়ীর আশেপাশের ফাকা স্থানে সবজি ক্ষেত, হাস-মুরগি পালন, মাছ চাষ ইত্যাদির প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে । সেই সাথে উৎপাদিত ফসল ন্যায্য মূল্যে বিক্রি এবং মজুত ব্যাবস্থা নিশ্চিত করতে হবে । কৃষক বাঁচলে দেশ বাচবে।
শিল্প খাতঃ গ্রাম গঞ্জে অনেক কারুশিল্পী রয়েছেন যারা বিভিন্ন হাতের কাজ, ডালি-কুলা, বাঁশের আসবাব পত্র, কুমোর শিল্প, তাঁত শিল্প, হস্ত ও কুটির শিল্পসহ বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত ছিলেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতির কারনে তারা তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে পারছে না বা বিক্রি করলেও ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই দেশের গ্রামীণ শিল্প গুলো কে বাঁচিয়ে রাখতে এই ক্ষাত গুলোতে বিশেষ ভাবে নজরদারি বাড়াতে হবে । প্র‍য়োজনে ব্যাক্তি উদ্যোগে উৎপাদনের ব্যাবস্থা করে দেয়া এবং তার সুষ্ঠু বিপণন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
পরিশেষে বলতে চাই আমার মূল প্রস্তাবনা হলো আমরা ত্রাণ দিয়ে মানুষের  চাহিদা শেষ করতে পারবো না। আর দিতে পারবোই বা কতদিন?
তাই যদি পরিকল্পিত কিছু কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়া যায় তাহলে সাধারণ মানুষ নিজস্ব চাহিদা নিজেরাই পূরণ করতে পারবে সেই সাথে স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকবে দেশের অর্থনীতি। তাই এই মুহূর্তে মেগা প্রজেক্টগুলোর তুলনায় ইমপাওয়ারমেন্ট প্রজেক্ট এর উপর বেশি জোর দিতে হবে ।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর যোগ্য নেতৃত্বে যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছিলাম আমরা।
লেখকঃ শিক্ষার্থী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *