বাজারে যেন কোনো জিনিসের অভাব না হয়: প্রধানমন্ত্রী
করোনাভাইরাসের মহামারীর মধ্যে উৎপাদিত পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করে যথাযথ দূরত্ব বজায় রেখে হাট-বাজারে বেচাকেনা চালু রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকা বিভাগের কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ এবং ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোর কর্মকর্তাদের এ নির্দেশনা দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উৎপাদিত পণ্য সরবরাহের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে; যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। কোনো বাজারে যেন কোনো জিনিসের অভাব না হয়। বড় খোলা জায়গায় যথাযথ দূরত্ব বজায় রেখে হাট-বাজার পরিচালনা করতে হবে।
করোনাভাইরাসের মহামারীর চলমান পরিস্থিতে রোজার মাসে খাদ্য সরবরাহের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “ইনশাআল্লাহ আমাদের খাদ্যের কোনো অভাব হবে না। …”
“এখন ধান কাটাও শুরু হয়ে গেছে, আগামীতেও ফসল উঠবে। সেই সাথে অন্য যা প্রয়োজন-তরিতরকারি, ফলমূল যে যা পারবেন উৎপাদন করবেন- আমরা সেটাই চাই।”
সরকারের দেওয়া ধান সংগ্রহের ঘোষণার কথা উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, “সাধারণত বোরোতে আগে আমরা যা নিতাম তার থেকে অনেক বেশি আমরা এখন নিচ্ছি। এখন আমরা ৮ লাখ মেট্রিক টন ধান,১০ লাখ মেট্রিক টন চাল, ২ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন আতপ এবং ৮০ হাজার মেট্রিক টন গমসহ সর্বমোট ২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য সংগ্রহ করব।
“এটা আমরা ক্রয় করব।…তাতে আমাদের আর ভবিষ্যতে কোনো অভাব হবে না। আমরা মানুষকে খাবার সহযোগিতা দিতে পারব।”
সামাজিক সুরক্ষায় সরকারের দেওয়া অর্থ ও ভাতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তাছাড়া আমরা ১০ টাকা কিলোতে ওএমএস চালু করেছি। সেটা আমরা ৫০ লক্ষ লোকের রেশন কার্ড আছে যারা এই ১০ টাকায় ওএমএস এই চালটা কিনতে পারে।”
যারা সরকারে কোনো সহায়তা পাচ্ছেন না, অথচ কারো কাছে হাত পাততেও পারছেন না তাদের তালিকা তৈরি করে ৫০ লাখ নতুন রেশন কার্ড করে দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন শেখ হাসিনা।
“ওএমএসে চালটাও ১০ টাকা দিয়েছি সেখানে আরো ৫০ লক্ষ পরিবারের জন্য আমরা কার্ড করে দেব। সেই তালিকাও আমরা করতে বলেছি যেটা একেবারে ডেটাবেইজ করা থাকবে।
“তাতে আমরা হিসেব করে দেখেছি, প্রায় ৫ কোটি মানুষ অর্থাৎ একটা পরিবারকে যদি আমরা চার সদস্য বা পাঁচ সদস্য হিসেবে ধরি তাহলে কিন্তু ৫ কোটি মানুষই কিন্তু এর উপর পাবে। অর্থাৎ প্রতিটা মানুষ যেন অন্তত খাদ্য পায়।”
কোভিড ১৯ মোকাবেলায় সারাদেশে সারারণ ছুটি ও গণপরিবহন বন্ধ থাকার মধ্যেও শ্রমজীবি মানুষরা যাতে ধান কাটার কাজ করতে পারেন সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
সরকারপ্রধান বলেন, “আমাদের খাদ্যটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আজকে এই করোনাভাইরাসের জন্য সারা বিশ্বব্যাপী যে খাদ্য মন্দা সৃষ্টি হবে আগামীতে হয়ত বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে কিন্তু বাংলাদেশে আমরা যদি খাদ্য উৎপাদন করে আমাদের মজুদ রাখতে পারি তাহলে আমরা সেই দুর্ভিক্ষে পড়ব না বরং আমরা অনেককে সাহায্য করতে পারব। আমাদের সেই ব্যবস্থা এখন থেকে নিতে হবে।”
কোনো জমি যেন অনাবাদি না থাকে সেদিকে দৃষ্টি দিতে কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন তিনি।
দেশবাসীকে উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “কারো এতটুকু জমি যেন অনাবাদি পড়ে না থাকে। প্রত্যেকেই যে যা পারেন কিছু চাষ করেন, কিছু তৈরি করেন বা এই যে ধান কাটার পরেও সেখানে আরেকটা ফসল কি করা যায় আমাদের করা উচিত।”
মহামারীর অর্থনৈতিক অভিঘাত মোকাবিলায় প্রণোদনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “প্রায় ৯৫ হাজার কোটি টাকার উপরে ইতিমধ্যে আমরা প্রণোদনা ঘোষণা করেছি। আমরা কেন করেছি এটা? এইজন্য করেছি, আমাদের অর্থনীতিটাকে সচল রাখার জন্য।
“কোনো সেক্টর বাদ যাচ্ছে না, সব সেক্টরের জন্য আমরা বিশেষ প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছি।”
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। ভিডিও কনফারেন্সের গণভবন প্রান্তে অন্যদের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন।