November 23, 2024
আঞ্চলিক

বাগেরহাটে স্বামীর প্রতারণায় সন্তানকে নিয়ে দ্বারে দ্বারে অসহায় স্ত্রী

 

বাগেরহাট প্রতিনিধি

স্বামীর প্রতারণায় একমাত্র সন্তানকে নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন এক অসহায় মা শারমীন আক্তার (২৮)। বাগেরহাট সদর উপজেলার নোনাডাঙ্গা গ্রামের দরিদ্র আকুব আলী শেখের মেয়ে শারমিন আক্তার। স্বামীর গুলের (তামাক দিয়ে তৈরি) ব্যবসা করায় সংসারে আর্থিক স্বচ্ছলতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থা (এনজিও) থেকে ঋণ তুলে স্বামীকে সহায়তা করেছিলেন শারমীন। আর এই সব এনজিও থেকে ঋণ নিতে প্রয়োজন হয়েছিল ব্যাংকের চেক। স্বামীর বাড়ি জয়পুরহাট জেলায় হওয়ায় রুপালী বাংকের জয়পুরহাটের আক্কেলপুর শাখায় একটি হিসাব খোলেন শারমিন। সেই চেকের পাতা দিয়ে ঋণ নিয়ে স্বামীকে টাকা দিয়ে ছিলেন তিনি। কিন্তু এই ব্যাংক চেকই যে তার জীবনের এমন ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি করবে এটি কল্পনাও করেনি সহজ সরল গৃহবধু শারমিন আক্তার।

পারিবারিক কলহের পর সেই অবহৃত চেকের একটি পাতায় তার স্বাক্ষর জালিয়াতি করে স্বামীর এক কর্মচারী ফিরোজকে দিয়ে জয়পুরহাট আদালতে ১০ লাখ টাকা চেক ডিজঅনার মামলা করে। স্বামীর এমন প্রতারণা থেকে বাঁচতে শারমিন বাগেরহাট অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন।

মামলার বিবরণ ও শারমিন আক্তার জানান, ২০১২ সালে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার দক্ষিন কানপুর গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে নাজমুল আহম্মেদের সাথে পারিবারিক ভাবে তার বিয়ে হয়। এই সংসারে তাদের নুসরাত নামের ৬ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। স্বামীর একধিক নারীর সাথে পরকিয়া সম্পর্কের কারনে অনেক আগে থেকেই তাদের পারিবারিক কলহ চলে আসছিল। একাধিক নারীর সাথে জনতা ও পুলিশের হাতে কয়েকবার ধরা পড়ার পর স্থানীয় ভাবে শালিশ বৈঠকও হয়েছে কয়েক বার। শারিরীক ও মানুষিক নির্যাতনের ঘটনায় তিনি মামলা দায়েরও করেছিলেন আদালতে। কিন্তু পিতার অসচ্ছলতা ও ফুটফুটে সন্তানের কথা চিন্তা করে শালিশ বৈঠকে মিমাংসা হয় বিষয়টি।

শারমিন আক্তার অভিযোগ করেন, তার স্বামী গুলের ব্যবসা করে। এখানে টাকার প্রয়োজন হলে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নেয়ার জন্য তাকে দিয়ে রুপালী বাংকের জয়পুরহাটের আক্কেলপুর শাখায় একটি অ্যাকাউন্ট করায়। ২০২১ সালে জানুয়ারী মাসে সে তার শিশু কন্যাকে নিয়ে পিতার বাড়ি বাগেরহাটে বেড়াতে আসেন। এবছরের জুলাই মাসে তার স্বামী এক কর্মচারীকে নিয়ে তাদের বাড়িতে এসে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নেয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে ৭টি পাতাসহ চেক বইটি নিয়ে যায়।

পরবর্তিতে তাকে বাড়িতে নেয়ার কথা বললে, তার স্বামী বলেন,‘ তাকে নিয়ে আর সংসার করবে না। সেচ্ছায় তাকে তালাক দিতে হবে। না হলে ওই চেকের পাতা দিয়ে তার ও তার পিতার পরিবারের নামে ২০ লাখ টাকার প্রতারণা মামলা দিবে বলে হুমকি দেয়। পরবর্তিতে তার স্বামী তার কারখানার ফিরোজ নামের এক কর্মচারীকে দিয়ে চেকের পাতায় তার স্বাক্ষর জালিয়াতি করে জয়পুরহাট সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিট্রেট আদালতে ১০ লাখ টাকার চেক ডিজঅনার মামলা দিয়েছে। এই মামলা মাথায় নিয়ে তিনি দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন বলে জানান। শারমিন জানান, তার একমাত্র সন্তানের জন্ম নিবন্ধনসহ সকল কাগজপত্র তার স্বামী আটকে রেখেছে। ফলে তাকে কোন বিদ্যালয়েও ভর্তি করাতে পারছেন না।

শারমিনের পিতা বৃদ্ধ আকুব আলী শেখ জানান, যাদের খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে তাদের নামে ১০ লাখ টাকার মামলা। এই বৃদ্ধ বয়সে মেয়েকে নিয়ে তিনি বিপাকে পড়েছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এবিষয়ে বাগেরহাট জজ কোর্টের সিনিয়র আইনজীবি অ্যাড. শেখ আনিছুর রহমান বলেন, পারিবারিক কলহ যেকোন সময় যে কারো সংসারে লাগতেই পারে। তাই বলে স্ত্রীর চেক দিয়ে এধরনের মামলা করা অনেক বড় ধরনের প্রতারণা। এই মামলার ফাঁদে পড়ে অসহায় এই পরিবারটি দিশেহারা হয়ে পড়েছে।

এবিষয়ে শারমিনের স্বামী নাজমুল আহম্মেদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারটি বন্দ পাওয়া গেছে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *