November 24, 2024
জাতীয়

‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ বাজার থেকে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ হাইকোর্টের

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
ইতিহাস ‘বিকৃতির’ কারণে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ বইটির সব কপি বাজার থেকে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। বাংলাদেশ ব্যাংকের বইয়ে ‘ইতিহাস বিকৃতি’ তদন্তের নির্দেশ হাই কোটের। ওই বই যেন কোনোভাবেই আর বাজারে বা বইমেলায় না যায়, সে বিষয়েও আদালত সতর্ক থাকতে বলেছে।
বইটি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুসন্ধান কমিটি প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাই কোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেয়। অনুসন্ধান কমিটি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’বইয়ে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান, পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খানের ছবি ছাপা হলেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি না ছেপে ‘ইতিহাস বিকৃতি’ করা হয়েছে। বইটির সম্পাদক শুভঙ্কর সাহাকে আগামী ১২ মার্চ আদালতে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলেছে হাই কোর্ট।
আতিউর রহমান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর থাকাকালে ২০১৩ সালে এ বইয়ের পাণ্ডুলিপি তৈরি ও প্রকাশনার সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে উপদেষ্টা কমিটি ও সম্পাদনা কমিটি নামে দুটি কমিটি করা হয় সে সময়। বইটি প্রকাশের আগে সম্পাদনার দায়িত্বে বেশ কয়েকবার রদবদল হয়। সর্বশেষ এ দায়িত্বে ছিলেন ব্যাংকের তখনকার নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভংকর সাহা। তার আগে দায়িত্ব পালন করেন আরেক নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মাহাফুজুর রহমান। তারা দুজনই অবসরে গেছেন।
পাণ্ডুলিপি চূড়ান্ত করার পর ২০১৭ সালে ডিসেম্বরে প্রকাশিত হয় ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’। ২০১৮ সালের ২৫ মার্চ অনুষ্ঠানিকভাবে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন বর্তমান গভর্নর ফজলে কবির।
এরপর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে দৈনিক খোলা কাগজে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস বইতে পাকিস্তানের ভূত- ঠাঁই পাননি বঙ্গবন্ধু, আছে স্বৈরাচার আইয়ুব খান’ এবং পত্রিকাটির অনলাইন সংস্করণে, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস বইয়ে পাকিস্তানের ভূত- দুরবিনেও মেলে না প্রধানমন্ত্রী ও আ. লীগের অবদান’ শীর্ষক দুটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বইটি নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে গতবছর ১৫ সেপ্টেম্বর বইটির বিতরণ বন্ধ করার নির্দেশ দেন গভর্নর। পাশাপাশি বইটি নতুন করে সম্পাদনা করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে একজন ডেপুটি গভর্নরের নেতৃত্বে একটি রিভিউ কমিটি গঠন করে দেন। এরই মধ্যে পত্রিকায় প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন যুক্ত করে এফবিসিসিআই পরিচালক কাজী এরতেজা হাসান হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গতবছর ২ অক্টোবর হাই কোর্ট ইতিহাস বিকৃতি অভিযোগ তদন্তের জন্য একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়। সেই সঙ্গে জারি হয় রুল।
‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ গ্রন্থে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান, পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খানের ছবি অন্তর্ভুক্ত করা হলেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি অন্তর্ভুক্ত না করে ইতিহাস বিকৃতি করা কেন আইনগত কর্তৃত্ব বর্হিভূত ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।
হাই কোর্টের নির্দেশে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অর্থ বিভাগ) মো. জাফর উদ্দীনকে আহŸায়ক করে গঠিত অনুসন্ধান কমিটি সোমবার তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়।
প্রতিবেদনের মতামত অংশে বলা হয়, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ ব্যাংকের নামকরণ করেন। …গ্রন্থটির দ্বিতীয় অধ্যায়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিবৃত রয়েছে। এ কারণে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা অত্যাবশ্যক ছিল।”
অনুসন্ধান কমিটি বলেছে, “বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট বঙ্গবন্ধুর ছবি খুঁজে পাওয়া যায়নি-এ যুক্তিতে বঙ্গবন্ধুর ছবি বইয়ে অন্তর্ভুক্ত না করার বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত। গ্রন্থটিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি অন্তর্ভুক্ত না করায় ইতিহাস বিকৃত হয়েছে মর্মে কমিটি মনে করে।”
এ কারণে বইটি প্রকাশের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছয় কর্মকর্তাকে চিহ্নিত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “বইটি প্রকাশের জন্য গঠিত গবেষণা কমিটি ও সম্পাদনা কমিটির কাজের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ছিল।”
মঙ্গলবার ওই প্রতিবেদনের বিষয়ে হাই কোর্টে শুনানি হয়। রিট আবেদনকারী পক্ষে আইনজীবী এ বি এম আলতাফ হোসেন, রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আল আমিন সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে আইনজীবী যোবায়ের রহমান শুনানিতে অংশ নেন।
আদেশের পর আলতাফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “আদালত বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস গ্রন্থের সম্পাদক শুভঙ্কর সাহাকে তলব করেছেন ১২ মার্চ। তিনি এসে বলবেন, কেন বঙ্গবন্ধুর ছবি পাওয়া যায়নি। কেন বঙ্গবন্ধুর ছবির পরিবর্তে মোনায়েম খান, আইয়ুব খানের ছবি ওখানে লাগানো হয়েছে। তাকে সে ব্যাখ্যা দিতে হবে।
“তাছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস বইটির পুরনো যত কপি আছে, সেগুলো সরিয়ে ফেলতে বলেছে আদালত। এ বই যেন বাজারে না ছাড়া হয়, মেলায় যেন না আসে। আদালত বলেছে, ইতিহাস বিকৃতি অমার্জনীয় অপরাধ।”
অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “গ্রন্থটিতে তদানিন্তন পকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান এবং তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তান গভর্নর মোনায়েম খান এর ছবি সংযোজন না করা শ্রেয় ছিল এবং সেটি সবার ভুল মর্মে বইটির সম্পাদক স্বীকার করেন।”

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *