বাংলাদেশের রাজনীতিতে খুনি-লুটেরাদের উত্থান জনগণ আর মেনে নেবে না : নাছিম
খুলনায় আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
এফ এম হাফিজুল ইসলাম
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেছেন, বিএনপি-জামায়াতের শাসনামল ছিল খুনি-লুটেরাদের যুগ। ওই সময়ে গুম, খুন, লুটপাট, দুর্নীতিসহ নৈরাজ্যে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলো দেশের মানুষ। যা পরবর্তীতে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দূর হয়েছে। দেশ এখন উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। সুতরাং এ দেশের রাজনীনিতে আর কখনও খুনি-লুটেরাদের উত্থান জনগণ মেনে নেবে না।
তিনি বলেন, করোনার সময় যখন গোটা বিশ্ব বিপর্যস্ত, তখন আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ দলের নেতাকর্মীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সততা, দক্ষতা ও দূরদর্শিতায় দেশ আজ করোনামুক্তির পথে। অথচ দেশবিরোধী চক্র করোনার শুরুতে নানা রকম অপপ্রচারে লিপ্ত ছিলো। তারা দেশের মধ্যে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করেছিলো কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন আজ দুস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। দেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। করোনায় মৃত্যুর হার কমেছে। আর এসব কিছুই সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়।
তিনি আরও বলেন, দেশ যখন সারাবিশ্বের রোল মডেল হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে; ঠিক তখনই গত দুর্গাপূজার সময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টা করা হয়েছে। হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এক সময়ে দেশ থেকে বিদেশে টাকা পাচারকারী তারেক রহমান ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বারবার ধর্মের নামে উস্কানি দিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন। কিন্তু শেখ হাসিনা তাঁর বাবার আদর্শে ধর্ম নিরপেক্ষ রাজনীতি করেন বিধায়, ষড়যন্ত্রকারীদের শক্ত হাতে প্রতিহত করেছেন।
কৃষিবিদ বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, যারা ক্ষমতায় থেকে লুটপাট করে বিদেশে অর্থপাচারে জড়িত, তারা দেশের উন্নতি সহ্য করতে পারে না। তাই এরা বারবার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছে। তারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে হেয়প্রতিপন্ন করতে চায়। শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চায়। রাজনীতির পট পরিবর্তন করতে চায়। কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্র সফল হতে দেওয়া যাবে না। দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই ষড়যন্ত্রকারী, খুনি-লুটেরাদের প্রতিহত করতে হবে। শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এই সংগঠনে সৎ, আদর্শিক, নির্ভীক, ত্যাগী কর্মীদের জায়গা দিতে হবে। নীতিহীনদের স্থান দেওয়া যাবে না। দলের নেতাকর্মীদের মানুষের কাছাকাছি যেতে হবে। তাদের সমর্থন যোগাতে হবে। আমাদের আরও ত্যাগের মানসিকতা থাকতে হবে এবং আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে হবে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবে দেশ। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা হবে।
গতকাল শনিবার দুপুরে নগরীর শহীদ হাদিস পার্কে খুলনা মহানগর ও জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে বেলুন ও কবুতর উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ। উদ্বোধনের আগে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর গাওয়া হয় জাতীয় সংগীত।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল। প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এ কে এম আফজালুর রহমান বাবু। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন নগর আ’লীগের সভাপতি ও সিটি মেয়র আলহাজ¦ তালুকদার আব্দুল খালেক, জেলা আ’লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ, আ’লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, আ’লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এ্যাড. আমিরুল আলম মিলন এমপি ও গেøারিয়া ঝর্ণা সরকার এমপি, নগর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা, জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. সুজিত অধিকারী, আকতারুজ্জামান বাবু এমপি, আব্দুস সালাম মুর্শেদী এমপি, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সৈয়দ নাসির উদ্দীন ও নির্মল কুমার চ্যাটার্জি, যুগ্ম সম্পাদক মোবাশ্বের হোসেন চৌধুরী ও খায়রুল হাসান জুয়েল, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল সায়েম, দপ্তর সম্পাদক আজিজুল হক আজিজ, নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি শেখ মোশাররফ হোসেন, প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক জেড এ মাহমুদ ডন, নগর যুবলীগের আহŸায়ক সফিকুর রহমান পলাশ ও যুগ্ম আহŸায়ক শেখ শাহাজালাল হোসেন সুজন।
এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বিসিবির পরিচালক শেখ সোহেল উদ্দিন, নৌ-পরিবহন মালিক গ্রæপের সহ-সভাপতি শেখ জালাল উদ্দিন রুবেল।
সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহŸায়ক মীর বরকত আলী। সঞ্চালনা করেন সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির যুগ্ম আহŸায়ক মোতালেব হোসেন, খান সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব এম এ নাসিম। প্রথম অধিবেশনের শেষে সম্মেলন প্রস্তুত কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। পরবর্তীতে নেতৃবৃন্দের সিদ্ধান্তে জেলা ও নগরে কমিটি ঘোষণা করা হয়।
এর আগে সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও উপজেলার নেতাকর্মীরা মিছিল সহকারে শহীদ হাদিস পার্কে উপস্থিত হতে থাকে। দুপুরের মধ্যেই সম্মেলনস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন পর এমন একটি দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য নেতাকর্মীদের উপস্থিতির কোন কমতি ছিলো। সম্মেলন ঘিরে মহানগর জুড়ে ছিল সাজ সাজ রব। সম্মেলনস্থলেও নির্মাণ করা হয় তোরণ, ব্যানার আর ফেস্টুনে ছেয়ে ফেলা হয় চত্বরটি।