বাংলাদেশের জয়ের পথে বাধা রস টেলর কিন্তু ‘লম্বা রেসের ঘোড়া’
মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ের একমাত্র বাধা এখন রস টেলর। আজ চতুর্থ দিন এবাদত হোসেনের আগুন ঝরানো বোলিংয়ের মুখে যখন কিউই ব্যাটসম্যানরা খাবি খেয়েছেন, সেখানে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছেন টেলর। ইতিহাস গড়তে হলে যে এই দেয়াল ভাঙতেই হবে টাইগারদের।
পাঁচ প্রতিষ্ঠিত ব্যাটার অধিনায়ক টম ল্যাথাম (১৪), উইল ইয়াং (৬৯), ডেভন কনওয়ে (১৩), হেনরি নিকোলস (০) ও টম ব্ল্যান্ডেল (০) সাজঘরে। ব্যাটসম্যান নামধারিদের মধ্যে কেবল অপরাজিত রস টেলর (৩৭ রানে)।
চাপের মুখে টেলরের পারফর্ম করার অতীত আছে ভুরিভুরি। বাংলাদেশ কিন্তু এই দুশ্চিন্তাকে ঝেড়ে ফেলার উপলক্ষ্য একাধিকবার পেয়েছিল টেস্টের চতুর্থ দিনই। ব্যক্তিগত ১৭ রানের মাথায় মেহেদি হাসান মিরাজের বলে ডিপমিডউইকেটে সাদমানের হাত ফস্কে বেরিয়ে যান টেলর।
দিনের শেষবেলায়ও বাংলাদেশের সুযোগ এসেছিল আরেকটি। ৩৫ রানে প্রায় রানআউট হয়ে যাচ্ছিলেন টেলর। ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগ থেকে শরিফুল ইসলামের থ্রো উইকেটে লাগলে নির্ঘাত সাজঘরে ফিরতে হতো তাকে। কিন্তু ভাগ্য এবারও সহায় হয় কিউই তারকার।
ম্যাচের ফল কী হবে? বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন অনেকেই। তবে ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা। তাই আগাম ভবিষ্যৎবাণী করার উপায় নেই।
এতটুকু ধরেই নেয়া যায়, কাল বুধবার সকালে রস টেলর যত কম সময়ের মধ্যে সাজঘরে পা বাড়াবেন, ততই জয়ের সম্ভাবনা বেশি থাকবে বাংলাদেশের।
ব্যাটাররা কেউ নেই সঙ্গে। স্পিনার রাচিন রবিন্দ্র আর চার ফাস্টবোলার ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদি, নেইল ওয়েগনার ও কাইল জেমিসন টেলরকে কতটা সঙ্গ দিতে পারবেন? নাকি টেলরই সকাল সকাল সবার আগে সাজঘরে ফিরবেন? আগেভাগেই কিছু বলার উপায় নেই।
তবে ইতিহাস জানাচ্ছে, রস টেলর কিন্তু ‘লম্বা রেসের ঘোড়া’। বড় ইনিংস খেলার সহজাত বৈশিষ্ট্য আছে তার। টেস্টে আছে তিন-তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি।
১১১ টেস্টে ১৯ সেঞ্চুরিতে তিনবার দুশোর ঘরে পা রেখেছেন এ কিউই মিডল অর্ডার। এর মধ্যে একটি আবার বাংলাদেশেরই বিপক্ষে (ওয়েলিংটনে ২০১৯ সালের মার্চে ২১২ বলে ১৯ বাউন্ডারি ও ৪ ছক্কায় ২০০)।
বাকি দুটিও ভালো বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে। ২০১৩ সালে ডানেডিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২১৭ আর ২০১৫ সালে পার্থে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলেন ২৯০ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস।
বলাই বাহুল্য, পরিবেশ-পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারলে লম্বা ইনিংস খেলার পর্যাপ্ত সামর্থ্য রাখেন টেলর। বাংলাদেশের বিপক্ষে ১০ টেস্টে টেলরের রান ৭১৫। একটি সেঞ্চুরি এবং সেটাই ডাবল সেঞ্চুরি। হাফসেঞ্চুরি আছে ৫টি।
তবে আশাবাদী হওয়ার খোরাকও আছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ৩৪ মাস আগে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকানোর পর বড় ইনিংস খেলার রেকর্ড বেশ কম তার। পরের ৩১ ইনিংসে (একবার ব্যাট করেননি) সেঞ্চুরি মোটে একটি, ফিফটি ৫টি। এর মধ্যে তিনবার গেছেন আশির ঘর পর্যন্ত (৮৬, ৮০, ৮০)। একটি ৭০ আর অপরটি ৫৩।
তবে ৩৮ ছুঁইছুঁই টেলরের শেষ টেস্ট সিরিজ বলেই একটু দুশ্চিন্তা থেকেই যাচ্ছে। টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের আগে ক্যারিয়ারকে স্মরণীয় করে রাখার একটা প্লাটফর্ম তার সামনে।
এ ম্যাচ বাঁচাতে পারলে টেলর ‘বীর’ হবেন নিঃসন্দেহে। আর ক্যারিয়ারের শেষবেলায় এমন সুযোগ কিছুতেই হাতছাড়া করতে চাইবেন না তিনি। স্বাভাবিকভাবেই নিজের সবটুকু সামর্থ্য আর অভিজ্ঞতা উজাড় করে দেবেন টেস্টের পঞ্চম দিনে।
নিউজিল্যান্ডে যখন খেলা শুরু হয়, তারও প্রায় ঘন্টা দুয়েক পর সূর্য ওঠে বাংলাদেশে। বুধবার ভোরের সূর্য ওঠার আগে রস টেলর আউট হয়ে গেলেই ইতিহাস গড়ার পথ মসৃণ হয়ে যাবে মুমিনুল বাহিনীর। এবাদত-শরিফুল-মিরাজ-তাসকিনরা কি সেটা পারবেন? উত্তরটা সময়ের হাতেই তোলা থাক!