বহরমপুরের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত: বিজিবি প্রধান
দক্ষিণাঞ্চল ডেক্স
ঠাকুরগাঁওয়ের বহরমপুর গ্রামে গরু জব্দ করা নিয়ে সংঘর্ষের মধ্যে বিজিবির গুলিতে তিনজনের মৃত্যুর ঘটনাকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ হিসেবে বর্ণনা করে ভবিষ্যতে সব পক্ষকে সতর্ক থাকার আহŸান জানিয়েছেন সীমান্ত রক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম। সোমবার ঠাকুরগাঁও সার্কিট হাউজে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে মত বিনিময়ের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, “এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। ওই এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, তাদের কাছেও এটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা, আমাদের কাছেও তাই। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের কোনো ঘটনা না ঘটে সেজন্য এলাকাবাসী এবং বিজিবি উভয়ে সতর্ক থাকবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ৪ হাজার ৪২৭ কিলোমিটার সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব পালন করে আসছে বিজিবি। সীমান্তে বসবাসরত জনগণের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে তাদের সহযোগিতা নিয়েই বিজিবি সেই দায়িত্ব পালন করে থাকে। জেলা প্রশাসনের ভাষ্য অনুযায়ী, চোরাই গরু ঢুকেছে সন্দেহে বিজিবি সদস্যরা গত ১২ ফেব্রুয়ারি হরিপুর উপজেলার বকুয়া ইউনিয়নের বহরমপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে কয়েকটি গরু জব্দ করে ট্রাকে তুললে গ্রামবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে। বিজিবি সদস্যরা তখন গুলি চালালে দুই কৃষক এবং একজন এসএসসি পরীক্ষার্থী নিহত হন, আহত হন অন্তত ২০ জন। বিজিবির দাবি, জব্দ করা গরু বিওপিতে নেওয়ার সময় চোরা কারবারিরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। ওই পরিস্থিতিতে বিজিবি সদস্যরা গুলি চালাতে বাধ্য হয়। অন্যদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, তাদের ঘরের গরু বিক্রির জন্য বাজারে নেওয়ার সময় বিজিবি সেগুলো জব্দ করে ট্রাকে তোলে। ওই গ্রামে এক মাস ধরেই বিজিবি সদস্যরা গৃহস্থের গরু নিয়ে যাচ্ছিল বলে গ্রামবাসীর অভিযোগ। ওই ঘটনায় হরিপুর থানায় বিজিবির পক্ষ থেকে দুটি মামলা করা হয়েছে। গুলিতে নিহতদের মধ্যে দুজনসহ মোট ১৯ জনের নাম উলেখ করে, অজ্ঞাত পরিচয় আরও ২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে সেখানে। বিজিবির পক্ষ থেকে গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করা হবে কি না জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে আমরা ডিসি-এসপির সঙ্গে আলোচনা করেছি। বিষয়টি আমরা দেখব ইনশালাহ। বহরমপুরের ঘটনা তদন্তে বিজিবির পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের একটি ‘উচ্চ পর্যায়ের’ তদন্ত কমিটি করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কমিটির প্রতিবেদেনের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গুলিবর্ষণ ছাড়া অন্য কোনোভাবে সমস্যা মেটানো যেত কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে বিজিবির মহাপরিচালক বলেন, “বিষয়টি তদন্তাধীন। তদন্তেই বেরিয়ে আসবে যে কী করা উচিৎ ছিল, কেন গুলি করা হল। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করতে পারব না। ঠাকুরগাঁও আসার কারণ ব্যাখ্যা করে সাফিনুল ইসলাম বলেন, এখানে এসে বহরমপুর গ্রামের কিছু মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি এবং ডিসি, এসপির সঙ্গে মতবিনিময় করে বিষয়টি অনুধাবন করার চেষ্টা করেছি। বিজিবির পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে কোনো সহযোগিতা করা হবে কি না জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, তদন্ত শেষ হওয়ার পর যাকে যে ধরনের সহযোগিতা করা প্রয়োজন, আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করব তা করার। তিনি বলেন, আমরা এ রকম অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাই না। আমরা যে যার দায়িত্ব পালন করতে চাই; দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সাংবাদিকরা যারা আছেন, আপনারা আমাদেরকে সহযোগিতা করবেন, যেন ভবিষ্যতে আমরা সকলে মিলে সীমান্তকে শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ করতে পারি। সীমান্তের জনগণ যেন শান্তিতে বসবাস করতে পারে। ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসন কেএম কামরুজ্জামান সেলিম, পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান মনির, ঠাকুরগাঁও ৫০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তুহিন মো. মাসুদ, বিজিবির ঠাকুরগাঁও অঞ্চলের সেক্টর কমান্ডার সামশুল আরেফিনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মতবিনিময়ে উপস্থিত ছিলেন।