November 28, 2024
আঞ্চলিক

বর্ষবরণের জন্য প্রস্তুত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলা নতুন বছরের প্রথম সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে পহেলা বৈশাখকে বরণ করতে নানা প্রস্তুতিসহ অপেক্ষা করছে বাঙালিরা। সার্বজনীন এই উৎসব ঘিরে এবং নতুন বছরকে বরণ করতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) চারুকলা প্রাঙ্গণে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। করোনা মহামারির কারণে দুই বছর সব ধরণের আয়োজন বন্ধ থাকার পর আবারও উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে খুবির চারুকলা প্রাঙ্গণ। বাংলা নববর্ষ আয়োজনের পরিকল্পনা অনুযায়ী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন চারুকলা স্কুলের বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গল শোভাযাত্রায় আবহমান বাংলার ঐতিহ্যের নানা অনুষঙ্গের প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে শিক্ষার্থীরা। লোকজ সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দিয়ে রাজা-রানির পেপার ম্যাশ, বাঘ ও পেঁচার মুখোশ এবং ঘোড়া প্রভৃতি বানানোর কাজে উৎসবমুখর পুরো চারুকলা প্রাঙ্গণ। এ সব কাজে ভালোলাগার বহিঃপ্রকাশ আর আবেগ প্রকাশ পাচ্ছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে।

এদিকে বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে নানা ধরনের কর্মসূচি গ্রহন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এবার পহেলা বৈশাখে সকাল ৭.৪৫ মিনিটে বর্ষ আবাহন, সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা এবং সকাল ৯.৪৫ মিনিট থেকে লাঠিখেলা, ম্যাজিক শো, বানরখেলা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া, বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে সাংস্কৃতিক আয়োজন থাকবে।

এছাড়াও আজ বুধবার বিকেল ৪টায় চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন ঘুড়ি উড়িয়ে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন। এর পরপরই বিভিন্ন আকার, আকৃতি ও রঙ-বেরঙের বহুসংখ্যক ঘুড়িতে আকাশ ছেঁয়ে যায় খুবি’র আকাশ।

বর্ষবরণের প্রস্তুতি সম্পর্কে আলপনা ও মঞ্চ কমিটির সদস্য মো. সাইমুম ইসলাম রাফি বলেন, বাঙালির সবচেয়ে বড় অসম্প্রদায়িক ও সার্বজনীন লোক উৎসব আয়োজন করতে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি৷ আনন্দঘন পরিবেশে নতুন বছরকে বরণ করে নিতে নানা আয়োজনে মেতে উঠেছে সবাই। এই উৎসবে শামিল হতে পেরে আমিও আনন্দিত।

তিনি আরও বলেন, করোনা প্রাদুর্ভাব পুরোপুরি কাটিয়ে না ওঠায় এবং পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষ্যে এবারও খুব পরিসরে আয়োজন করতে পারছি না। তবে গত দুই বছর সব ধরণের আয়োজন বন্ধ থাকায় বাঙালির যে চিরচেনা ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছিলো, সেই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে আমাদের এই প্রয়াস।

শিক্ষার্থীরা বলেন, বাংলা বর্ষবরণ উৎসব আমাদের প্রাণের উৎসব। এটা কোনো নির্দিষ্ট ধর্ম বা গোষ্ঠীর উৎসব নয়। সকল ধর্ম, বর্ণ, পেশা ছাপিয়ে এটা আমাদের বাঙালির মহোৎসবে পরিণত হয়েছে।

চারুকলা প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীদের সাথে রঙ তুলিতে ব্যস্ত সময় পার করা ড্রয়িং এন্ড পেইন্টিং ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক শাপলা সিংহ বলেন, বাংলা নববর্ষের এ ঐতিহ্য মাটি ও মানুষের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। এখানে কোনো জাতিভেদ ও ধর্মভেদ নেই। বাঙালির আদি সাংস্কৃতিক পরিচয় বহনকারী এ অসাম্প্রদায়িক উৎসব বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে আমাদের বিশেষ প্রেরণা জুগিয়েছে। করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে দুই বছর সব ধরণের আয়োজন বন্ধ ছিলো। এ বছরও মুসলিম সম্প্রদায়ের পবিত্র রমজান মাস ও নানাবিধ সীমাবদ্ধতায় সীমিত আকারে আয়োজন করতে হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও চারুকলা স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. নিহার রঞ্জন সিংহ বলেন, করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে দুই বছর পর নববর্ষ উদযাপনের আয়োজন করতে পেরে আমরা সত্যিই আনন্দিত। ধর্ম-সম্প্রদায় নির্বিশেষে বাংলা ভূখণ্ডের সব মানুষের প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। পহেলা বৈশাখকে আরও বেশি মহিমান্বিত করেছে লোকজ সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দিয়ে তৈরী বিভিন্ন মুখোশ ও মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন। তবে এবার আয়োজনে আমাদের বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা ছিলো। সবকিছু পেরিয়ে নতুন বছর সবার জীবনে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধির বার্তা বয়ে আনবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *