বর্ধমান বিস্ফোরণ: চার বাংলাদেশিসহ ১৯ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
ভারতের বর্ধমানে খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলায় চার বাংলাদেশিসহ ১৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির একটি আদালত। এনআইএর বিশেষ আদালতের বিচারক কলকাতার নগর দায়রা জজ সিদ্ধার্থ কাঞ্জিলাল গতকাল শুক্রবার এই রায় ঘোষণা করেন বলে খবর দিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো।
টাইমস অব ইনডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, দোষী সাব্যস্ত ১৯ জনের মধ্যে চার বাংলাদেশিকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক। সাজা খাটা শেষ হলে তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর আদেশ হয়েছে রায়ে।
ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা- এনআইএর তথ্য অনুযায়ী এই চার বাংলাদেশি হলেন- শেখ রামতুলা ওরফে সাজিদ ওরফে বোরহান শেখ; সাদিক ওরফে সুমন ওরফে তরিকুল ইসলাম ওরফে রায়হান শেখ; লিয়াকত আলী প্রামাণিক ওরফে রফিক ওরফে মোহাম্মদ রুবেল এবং হাবিবুর রহমান ওরফে জাহিদুল ইসলাম ওরফে জাবিরুর ইসলাম ওরফে জাফর।
আসামিদের মধ্যে দুই নারী ও তরুণকে ছয় বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। দোষী সাব্যস্ত বাকি ১২ জনকে দেওয়া হয়েছে আট থেকে ১০ বছরের কারাদণ্ড।
পাঁচ বছর আগের আলোচিত এ মামলার মোট ৩১ জনকে বিচারের মুখোমুখি করেছে এনআইএ। তাদের মধ্যে ১৯ জন আদালতে দোষ স্বীকার করে নেওয়ায় তাদের দোষী সাব্যস্ত করে শুক্রবার সাজা ঘোষণা করল আদালত।
বাকি ১২ জন এখনও নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। মামলায় তাদের অংশের শুনানি এখনও শেষ হয়নি বলে জানিয়েছে টাইমস অব ইনডিয়া।
আনন্দবাজার লিখেছে, যারা দোষ স্বীকার করেননি তাদের মধ্যে বাংলাদেশে যাবজ্জীবন সাজার আসামি জাহিদুল ইসলাম মিজান ওরফে বোমা মিজানও রয়েছেন।
২০১৪ সালের ২৬ ফেব্র“য়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে এক পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে জেএমবির যে তিন শীর্ষ নেতাকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল, বোমা মিজান তাদেরই একজন।
ওই বছর ২ অক্টোবর কলকাতা থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে বর্ধমান জেলার খাগড়াগড় এলাকায় এক বাড়িতে বিস্ফোরণে শাকিল আহমেদ ও শোভন মণ্ডল নামের দুজন নিহত হন। পরে ওই বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক।
এর জঙ্গে জঙ্গিবাদের সংশ্লিষ্টতা মেলায় তদন্তের দায়িত্ব যায় এনআইএর হাতে। জানা যায়, বিস্ফোরণে নিহত ওই দুইজন বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি দল জেএমবির ভারতীয় শাখার সদস্য ছিলেন।
ওই বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে জেএমবি, ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন (আইএম) ও আল জিহাদের সম্পৃক্ততায় গড়ে ওঠা ‘আন্তঃদেশীয় সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক’ এর তথ্য বেরিয়ে আসে। তদন্তের অংশ হিসেবে এনআইএ সদস্যরা বাংলাদেশে এসে পুলিশ ও র্যাবের সঙ্গেও বৈঠক করে।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে মোট ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করে এনআইএ। তাদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হয়। চার দফা সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়ার পর মামলাটি বিচারে আসে। এনআইয়ের অভিযোগপত্রে বলা হয়, খাগড়াগড় বিস্ফোরণে জড়িত জেএমবি জঙ্গিরা ভারত ও বাংলাদেশে ‘খিলাফত কায়েম করার পরিকল্পনায়’ কাজ করছিল।