বনানী অগ্নিকাণ্ড: ১৮ মরদেহ হস্তান্তর, সংখ্যায় অস্পষ্টতা কাটেনি
রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ১৮ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবু ফতেহ মো. শফিকুল ইসলাম শুক্রবার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওই ১৮ জনের মধ্যে কেবল একজনের লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে। স্বজনদের অনুরোধে ময়নাতদন্ত ছাড়াই বাকিদের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল থেকে ১০ জনের, ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল- সিএমএইচ থেকে চারজনের, ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে তিনজনের এবং অ্যাপোলো হাসপাতাল থেকে একজনের মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক।
হস্তান্তর করা হয়নি এরকম কতটি মৃতদেহ মর্গে আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “নাম মিলিয়ে এটা বলা যাবে। কোনোটা দুইবার গণনা করা হয়েছে কিনা তা মিলিয়ে বলা উচিত হবে।”
কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ের ২২ তলা ওই ভবনে বৃহস্পতিবার দুপুরে আগুন লাগার পর প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টার চেষ্টায় তা পুরোপুরি নেভাতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিসের ২১টি ইউনিট।তবে ঠিক কতজন ওই ঘটনায় মারা গেছে, সেই তথ্য শুক্রবার সকাল পর্যন্ত স্পষ্ট হয়নি। ফায়ার ব্রিগেডের হিসাবে এই সংখ্যা ১৯। আর পুলিশ বলছে ২৫ জনের কথা।
তাদের মৃত্যু হয়েছে আগুনে পুড়ে, ধোঁয়ায় শ্বাসরোধ হয়ে এবং বাঁচার চেষ্টায় ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে। তবে অধিকাংশ মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়া হস্তান্তর হওয়ায় কীভাবে কয়জনের মৃত্যু হয়েছে সেই হিসাব পাওয়াও কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ কমিশনার মুশতাক হোসেন শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে এফআর টাওয়ারের সামনে সাংবাদিকদের বলেন, “এখন পর্যন্ত ২৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সবার লাশ শনাক্ত করা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে ২৪ জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি একজনের লাশ ঢাকা মেডিকেলে আছে। তাকেও শনাক্ত করা হয়েছে। সেটিও হস্তান্তর করা হবে।”
রাত থেকে সকাল পর্যন্ত নতুন করে কেউ নিখোঁজ থাকার তথ্য দেননি বা সন্ধান নিতে আসেননি বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।অন্যদিকে এফআর টাওয়ার থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করে বডিব্যাগে ভরে হাসপাতালে পাঠানোর কাজটি করেছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।
ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা রাসেল সিকদার শুক্রবার সকালেও বলেন, তাদের কাছে ১৯ জন নিহত হওয়ার তথ্য রয়েছে। তবে হস্তান্তরের হিসাব তাদের কাছে নেই।
ঢাকা জেলার নির্বাহী হাকিম ঢাকা মেডিকেল থেকে যে ১০ জনের মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছেন তাদের সবার নাম জানা গেছে।
তারা হলেন- মীর্জা আতিকুর রহমান, আমির হোসেন, জারিন তাসনিম বৃষ্টি, আনজির সিদ্দিক আবীর, মনজুর হাসান, ফজলে রাব্বি, আব্দুল্লাহ আল ফারুক তমাল, রুমকি আক্তার, ইফতিয়ার হোসেন মিঠু ও আহমেদ জাফর।
ঢাকা জেলার নির্বাহী হাকিম রাকিব হাসান জানান, বৃহস্পতিবার বিকালে দুজনকে ঢাকা মেডিকেলে আনার পর মৃত ঘোষণা করা হয়। রাতে ঘটনাস্থল থেকে সাতটি এবং পরে আরও একটি মরদেহ ঢাকা মেডিকেলে আসে।ওই দশজনের মধ্যে শুক্রবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে সর্বশেষ আহমেদ জাফরের মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয়। কেবল তার লাশেরই ময়নাতদন্ত হয়েছে ঢাকা মেডিকেলে।
আহমেদ জাফরের চাচা আব্দুল কাদের জানান, জাফর সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা ছিলেন। গতবছর নভেম্বরের মাসে তিনি এলপিআরে যান। মাস তিনেক আগে এফআর টাওয়ারে ‘আসিফ ইন্টারন্যাশনাল’ নামে একটি কোম্পানিতে তিনি চাকরি নেন।
এক ছেলের জনক জাফরের বাসা মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদিয়া হাউজিংয়ে। তার মৃতদেহ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হবে বলে জানান আব্দুল কাদের।