বনানীর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত ২৫ জনের মরদেহ হস্তান্তর
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে জানিয়ে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবু ফতেহ মো. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, তাদের সবার মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল থেকে ১০ জনের, কুর্মিটোলা হাসপাতাল থেকে ৬ জনের, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল- সিএমএইচ থেকে ৪ জনের, ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে ৩ জনের এবং অ্যাপোলো হাসপাতাল থেকে একজনের এবং বনানী ক্লিনিক থেকে একজনের মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
নিহত এই ২৫ জনের নাম-ঠিকানাসহ একটি তালিকা প্রকাশ করেছে বনানী থানা পুলিশ। এর মধ্য দিয়ে এফআর টাওয়ারে নিহতের সংখ্যা নিয়ে অস্পষ্টতার অবসান ঘটল। কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ের ২২ তলা ওই ভবনে বৃহস্পতিবার দুপুরে আগুন লাগার পর প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টার চেষ্টায় তা পুরোপুরি নেভাতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিসের ২১টি ইউনিট।
পুলিশের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার রাতেই ২৫ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হলেও ফায়ার ব্রিগেডের হিসাবে ওই সংখ্যা ছিল ১৯। তাদের মৃত্যু হয়েছে আগুনে পুড়ে, ধোঁয়ায় শ্বাসরোধ হয়ে এবং বাঁচার চেষ্টায় ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে। তবে অধিকাংশ মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়া হস্তান্তর হওয়ায় কীভাবে কয়জনের মৃত্যু হয়েছে সেই হিসাব পাওয়া কঠিন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জানান, নিহতদের মধ্যে কেবল একজনের লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে। স্বজনদের অনুরোধে ময়নাতদন্ত ছাড়াই বাকিদের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। আগুনে থেকে বাঁচতে ওই ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে মারা যাওয়া শ্রীলঙ্কান নাগরিক নিরস ভিগনারাজার মরদেহ তার দেশের দূতাবাসের প্রতিনিধির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান শফিকুল ইসলাম।
বনানী থানার এসআই গুলশান আরা জানান, হাসপাতাল ও স্বজনদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তারা নিহত ২৫ জনের তালিকা তৈরি করেছেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত আর কেউ নিখোঁজ থাকার তথ্য পুলিশের হাতে নেই।
নিহতদের তালিকা : ১. সৈয়দা আমিনা ইয়াসমিন, পিতা সৈয়দ মহিউদ্দিন আহম্মেদ, গ্রাম-রামপাশা, কেরামতনগর, থানা-কমলগঞ্জ, জেলা-মৌলভীবাজার। ঢাকায় থাকতে এ/পি-২০৬ কাফরুলে।
২. মো. মনির হোসেন সর্দার (৫২), পিতা-মৃত মোতাহার হোসেন সর্দার, উত্তর কড়াপুর (সর্দারবাড়ী) থানা- বিমানবন্দর, জেলা- বরিশাল। ঢাকায় থাকতেন ৬৮৫/২, মোলার রোড, পূর্ব মনিপুরে।
৩. মো. মাকসুদুর রহমান (৩২), পিতা-মৃত মিজানুর রহমান, ১১ আলমগঞ্জ, থানা- গেণ্ডারিয়া, জেলা-ঢাকা।
৪. আবদুলাহ আল মামুন (৪০), পিতা-মৃত আবুল কাশেম; ১৫/৬/২, রোড-১, কল্যাণপুর, থানা-মিরপুর, ঢাকা-১২১৬।
৫. মো. মোস্তাফিজুর রহমান (৩৬), পিতা-মৃত আবদুর রশিদ মুন্সি, স্থায়ী ঠিকানা- চতরা, থানা-পীরগঞ্জ, জেলা-রংপুর। ঢাকায় থাকতেন ২/এ/২/১৬/ মিরপুর-২ ঠিকানায়।
৬. মো. মিজানুর রহমান, স্থায়ী ঠিকানা-কোদলা, থানা-তেরখাদা, জেলা-খুলনা। চাকরি করতেন এফআর টাওয়ারের দশম তলার হেরিটেজ এয়ার এক্সপ্রেসে।
৭. ফ্লোরিডা খানম পলি (৪৫), স্বামী-ইউসুফ ওসমান, বাসা-২, রোড-৪, রূপনগর হাউজিং, থানা-রূপনগর, ঢাকা।
৮. আতাউর রহমান (৬২), পিতা-মৃত হাবিবুর রহমান, বাসা-১৭/২, তাজমহল রোড, ব্লক-সি, থানা-মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
৯. মো. রেজাউল করিম রাজু (৪০), পিতা-নাজমুল হাসান, স্থায়ী ঠিকানা-দক্ষিণ নাগদা, থানা-মতলব দক্ষিণ, জেলা-চাঁদপুর। ঢাকায় থাকতেন বাড়ি নম্বর-১৬, রোড-২৩, ফ্ল্যাট বি/২, বনানী ঠিকানায়।
১০. আহম্মদ জাফর (৫৯), পিতা- মৃত হাজি হেলাল উদ্দিন, স্থায়ী ঠিকানা- নবীনগর, থানা-সোনারগাঁও, জেলা-নারায়ণগঞ্জ।
১১. জেবুন্নেছা (৩০), পিতা-আবদুল ওয়াহাব, স্থায়ী ঠিকানা- ল²ীনারায়ণপুর, থানা-বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী। ঢাকায় থাকতেন ৬৬/৩, পশ্চিম রাজাবাজারে।
১২. মো. সালাউদ্দিন মিঠু (২৫), পিতা-সামসুদ্দিন, বাসা-৩৪৯, মধুবাগ মগবাজার, রমনা, ঢাকা।
১৩. নাহিদুল ইসলাম তুষার (৩৫), পিতা-মো. ইছাহাক আলী, স্থায়ী ঠিকানা-ভানুয়ানগর, থানা-মির্জাপুর, জেলা- টাঙ্গাইল।
১৪. তানজিলা মৌলি (২৫), স্বামী-রায়হানুল ইসলাম, স্থায়ী ঠিকানা- সান্তাহার বলিপুর, থানা-আদমদীঘি, জেলা-বগুড়া। ঢাকায় থাকতেন বাড়ি ই/৩, মিতালী হাউজিং, দক্ষিণ কাফরুল ঠিকানায়।
১৫. মো. পারভেজ সাজ্জাদ (৪৬), পিতা-মৃত নজরুল ইসলাম মৃধা,স্থায়ী ঠিকানা-বালুগ্রাম, কাশিয়ানী, জেলা-গোপালগঞ্জ।
১৬. নিরস ভিগনারাজা (৩৫), বাবা- ভিগনারাজা,দেশ- শ্রীলংকা। ঢাকায় থাকতেন বাসা- ৭৬, রোড-১৮, ব্লক-এ, বনানীতে।
১৭. ইফতিয়ার হোসেন মিঠু (৩৭), পিতা-মো. ইছহাক, স্থায়ী ঠিকানা-বানিয়াপাড়া, কুমারখালী, কুষ্টিয়া।
১৮. শেখ জারিন তাসনিম বৃষ্টি (২৫), পিতা-শেখ মোজাহিদুল ইসলাম, স্থায়ী ঠিকানা-বেস্টপাড়া, মেইন রোড, যশোর। ঢাকায় থাকতেন ৮৪/১ খিলক্ষেত বটতলা ঠিকানায়।
১৯. মো. ফজলে রাব্বী (৩০), পিতা-মো. জহিরুল হক, উত্তর ভূঁইঘর, থানা-ফতুলা, জেলা- নারায়ণগঞ্জ।
২০. আতিকুর রহমান (৪২), পিতা- মৃত আবদুল কাদির মির্জা, স্থায়ী ঠিকানা-পূর্ব সারেনগা শৈলাপাড়া, থানা-পালং, জেলা-শরীয়তপুর। ঢাকায় থাকতেন ক্যান্টনমেন্টের মানিকদী আমতলা এলাকায়।
২১. আনজিব সিদ্দীকি আবির (২৭), পিতা-আবু বক্কর সিদ্দিকী, স্থায়ী ঠিকানা- কলেজ রোড, পাটগ্রাম, জেলা-লালমনিরহাট। ঢাকায় থাকতেন ৮৫ মধ্য পাইকপাড়া, মিরপুরে।
২২. আবদুলাহ আল ফারুক (৬২), পিতা-মৃত মকবুল আহম্মেদ, পূর্ব বগাইর, থানা-ডেমরা, জেলা- ঢাকা।
২৩. রুমকি আক্তার, স্বামী-মাকসুদুর রহমান, স্থায়ী ঠিকানা- জলঢাকা, নীলফামারী;
২৪. মো. মঞ্জুর হাসান (৪৯), পিতা- মৃত মনসুর রহমান, স্থায়ী ঠিকানা- বোয়ালিয়া, থানা- নওগাঁ, জেলা-নওগাঁ। ঢাকায় থাকতেন কাফরুলের ইব্রাহিমপুরের ছাপড়া মসজিদ এলাকায়।
২৫. মো. আমির হোসেন রাব্বী (২৯), পিতা-মো. আইয়ুব আলী, স্থায়ী ঠিকানা- গাঙ্গহাটি (চরপাড়া), থানা- আতাইকুলা, জেলা-পাবনা। ঢাকায় থাকতেন বাসা-২৩, রোড-৯, ব্লক-এ, নিকুঞ্জ-২, খিলক্ষেত ঠিকানায়।