বঙ্গভবনের ‘বন্দি দশায়’ রাষ্ট্রপতি হামিদের ৬ বছর
দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্বে এক বছর পার করলেন মো. আবদুল হামিদ
গত বছরের ২৪ এপ্রিল দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন আবদুল হামিদ। মেয়াদের পুরোটা সময় দায়িত্ব পালন করতে পারলে আবদুল হামিদই হবেন বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের রাষ্ট্রপতি।
এর আগে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রথমবার শপথ নেন আবদুল হামিদ। সংবিধানে সর্বোচ্চ দুই বার রাষ্ট্রপতি পদে থাকার সুযোগ থাকায় এটাই হবে তার শেষ মেয়াদ।
গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের একবিংশতম রাষ্ট্রপতি পদে বর্তমান রাষ্ট্রপ্রধান মো. আবদুল হামিদকে নির্বাচিত ঘোষণা করে ইসি।
মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আবদুল হামিদকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেন এ নির্বাচনের নির্বাচনী কর্তার দায়িত্বে থাকা প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা।
বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রে ফেরার পর শুধু ১৯৯১ সালেই রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন হয়েছিল। এরপর সবাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব পাওয়ার পর এক অনুষ্ঠানে বঙ্গভবনের পরিবেশ নিয়ে রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেছিলেন, “জিয়াউর রহমানের আমলে জেলে ছিলাম। এখনও জেলে আছি। পার্থক্য আগে স্যালুট দিত না, এখন দেয়।”
আইনের ডিগ্রিধারী আবদুল হামিদ কিশোরগঞ্জ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন সাতবার, স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেছেন দুই দফা।
১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আবদুল হামিদ। তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৫৯ সালে, ছাত্রলীগে যোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে ময়মনসিংহ-১৮ আসন থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে ২০১৩ সালে আবদুল হামিদকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয়।
১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ, ১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ, ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ এবং সর্বশেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
সপ্তম সংসদে ১৯৯৬ সালের ১৩ জুলাই থেকে ২০০১ এর ১০ জুলাই পর্যন্ত ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালনের পর ২০০১ এর ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত স্পিকার হিসাবে সংসদ পরিচালনা করেন আবদুল হামিদ।আর নবম সংসদে নির্বাচিত হওয়ার পর দ্বিতীয়বারের মতো স্পিকার হন।
২০১৩ সালে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর বঙ্গভবনের বাসিন্দা হন আবদুল হামিদ। এই দায়িত্বে ধরাবাঁধা নিয়মের ছকে থেকেও বিভিন্ন অনুষ্ঠান স্বভাবসুলভ হাস্যরসের মধ্যে দিয়ে তিনি পৌঁছে গেছেন মানুষের খুব কাছে।
‘মিতব্যয়ী’ আবদুল হামিদ প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর চিকিৎসার জন্য বাইরে গিয়ে নিজের এবং সফরসঙ্গীদের খরচ কমিয়ে সংবাদের শিরোনামে আসেন।
২০১৪ সালের ২৬ এপ্রিল এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “বিদেশ সফরে হোটেলের ভাড়া কমিয়েছি। সিঙ্গাপুরে আমার হোটেলের ভাড়া ছিল ৬ হাজার সিঙ্গাপুরি ডলার। সেটা কমিয়ে ৬০০ ডলারে এনেছি। স্পিকার থাকার সময় একা যেতাম। এখনতো আর সে উপায় নেই। সফরসঙ্গীদের হোটেল ভাড়াও অর্ধেক করেছি।”
রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণ বেড়ে যাওয়া নিয়েও কথা বলেছেন আবদুল হামিদ। ২০১৫ সালের অক্টোবরে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ ব্যবসায়ীদের হাতে থাকা দেশের জন্য ‘কলঙ্কজনক’।