বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট: তিন বছরে আয় ‘৩০০ কোটি টাকা’
উৎক্ষেপণের প্রথম তিন বছরে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ থেকে ৩০০ কোটি টাকার বেশির আয় করার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড-বিএসসিএল।
দেশের প্রথম এই কৃত্রিম উপগ্রহ গত তিন বছরে ‘কোনো আয় করতে পারেনি’ বলে যে খবর এসেছে, তা ‘সঠিক নয়’ জানিয়ে সোমবার কোম্পানির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়।
সেখানে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট গত তিন বছর ধরেই আয়ের ধারায় রয়েছে।
”ইতোমধ্যে কোম্পানির মোট আয় ৩০০ কোটি টাকা অতিক্রম করেছে। বর্তমানে কোম্পানির মাসিক আয় প্রায় ১০ কোটি টাকা, যার প্রায় পুরোটাই দেশীয় বাজার থেকে অর্জিত হচ্ছে। ক্রমান্বয়ে এই আয় আরও বৃদ্ধি পাবে।”
২০১৮ সালের ১২ মে পৃথিবীর কক্ষপথে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে নতুন যুগে প্রবেশ করে বাংলাদেশ।
ওই সময়ে স্যাটেলাইট তৈরি ও উৎক্ষেপণে খরচ হয়েছিল প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার মত। ২০১২ সালের ফিজিবিলিটি স্টাডিতে সাত বছরের মধ্যে এই খরচ উঠিয়ে আনার পরিকল্পনা ছিল সরকারের।
প্রথম তিন বছরে ৩০০ কোটি টাকা আয় করলেও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সময় আয়ের যে লক্ষ্য ধরা হয়েছিল, তা থেকে পিছিয়ে থাকার কথাই জানিয়েছেন বিএসসিএলের কর্মকর্তারা।
এর কারণ ব্যাখ্যা করে বিএসসিএলের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহজাহান মাহমুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২০১২ সালে ফিজিবিলিটি স্টাডির সময় একটা লক্ষ্য ধরা হয়েছিল, সে সময় বলা হয়েছিল সাত বছরে টাকাটা উঠে আসবে। কিন্তু আমরা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণই করলাম ২০১৮ সালে এসে।
”আর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট যখন উৎক্ষেপণ করা হয়, তখন আমরা ছিলাম ৫৭তম দেশ। এখন সেটা ৭৫-৭৬টি দেশে পৌঁছেছে। এ কারণে বাজারে ব্যান্ডউইথের সাপ্লাই অনেক বেড়ে গেছে। চাহিদা কম থাকায় আমরা বিক্রি সেভাবে করতে পারছি না।”
করোনাভাইরাস মহামারীও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের বাজার সম্প্রসারণকে বাধাগ্রস্ত করেছে বলে জানান কোম্পানির সিইও।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মধ্যে ২০টি দেশে এবং ২০টি দেশের বাইরে বিক্রি করার কথা ছিল। এখন পর্যন্ত স্যাটেলাইটের মোট ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের ১৫-১৬টি বিক্রি করতে পেরেছে কোম্পানি।
বিদেশের মাটিতে পরিকল্পনা অনুযায়ী বিক্রি করতে না পারায় দেশের বাজারে দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়ার কথা বলেন শাহজাহান মাহমুদ।
তিনি বলেন, ”আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের কার্যক্রম সম্প্রসারণে খুব জোরালো চেষ্টা চালাচ্ছি। কয়েক মাসের মধ্যে সেটির ফলাফল আপনারা দেখতে পাবেন।”
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের বর্তমান বাজার চিত্র তুলে ধরে বিএসসিএলের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমানে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ মোট ৩৮টি টিভি চ্যানেল এবং ডিটিএইচ অপারেটর ’আকাশ’ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে সম্প্রচার করছে।দেশের দুটি ব্যাংক ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ব্যবহার করে তাদের এটিএম সেবা দেওয়া শুরু করেছে।
আরো অনেকগুলো সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা চলমান আছে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “যারা অদূর ভবিষ্যতে চুক্তি স্বাক্ষর সাপেক্ষে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সেবার আওতায় আসবে। সম্প্রতি সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ বিএসসিএলের সাথে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে।
”এর আওতায় বাংলাদেশে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনী এবং ডিজিএফআই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সেবার আওতায় আসবে। বাহিনীগুলো সম্মিলিতভাবে তিনটি ট্রান্সপণ্ডারের মাধ্যমে সেবা গ্রহণ করবে।”
বিএসসিএল ৩১টি দুর্গম ও প্রত্যন্ত দ্বীপাঞ্চলের ১১২টি স্থানে টেলিযোগাযোগ সেবা দিচ্ছে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “অদূর ভবিষ্যতে আরও বেশি সংখ্যক দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকার সুবিধাবঞ্চিত জনগণকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সেবার আওতায় আনার কার্যক্রম চলমান আছে।”
বিএসসিএল বলছে, চাহিদার তুলনায় বিশ্ব বাজারে স্যাটেলাইট ব্যান্ডউইথের সরবরাহ বেশি থাকায় এবং কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে বিদেশের বাজারে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর বিপণন কার্যক্রম ব্যহত হয়।
প্রতি মাসে যে ১০ কোটি টাকা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আয় করে, তার মধ্যে এক-দশমাংশ রক্ষণাবক্ষণ ব্যয়, বেতনভাতা ও অন্যান্য খরচে চলে যায় বলে জানান বিএসসিএল সিইও।