বঙ্গবন্ধুর নামে হবে খুবি’র সম্প্রসারিত ক্যাম্পাস
২০৩ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব
খুবি প্রতিনিধি
আগামী একশত বছরের একাডেমিক ও অবকাঠামোগত চাহিদা মাথায় রেখে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য বর্তমান ১০৬ একর জমির সাথে ক্যাম্পাস সংলগ্ন ২০৩ একর খালি/পতিত জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। আর বিশ্ববিদ্যালয়টির সম্প্রসারিত এই নতুন ক্যাম্পাস করা হবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নামে। নাম হবে ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু ক্যাম্পাস’। জমি অধিগ্রহণের ব্যাপারে খুলনা জেলা প্রশাসকের কাছে পত্র দেয়া হয়েছে।
এছাড়া গণপূর্ত ও গৃহায়ণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং একই মন্ত্রণালয়ের সচিবকেও এ ব্যাপারে অবগতির জন্য পত্র দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত এলাকায় কোনো বাড়িঘর নির্মাণের পরিকল্পনা অনুমোদন না দেওয়া বা ওই জমিতে কেডিএ কর্তৃক কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ না করার জন্য অনুরোধ জানিয়ে ওই কর্তৃপক্ষের চেয়ারমানকেও নিকট বেশ কয়েকবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃৃপক্ষ পত্র প্রদান করেছে। জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাবের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এসব উদ্যোগের বিষয় জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক এস এম আতিয়ার রহমান নিশ্চিত করেছেন।
নতুন এই ক্যাম্পাসে আগামী দিনের চাহিদার আলোকে যুগোপযোগী শিক্ষা, গবেষণাসহ জ্ঞান-বিজ্ঞানের নতুন নতুন বিষয় খোলার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। সামুদ্রিকসম্পদ বিকাশ, আহরণ, সংরক্ষণের মাধ্যমে সুনীল অর্থনীতির বিকাশ, জলবায়ু ও উপকূলীয় পরিবেশ ও প্রতিবেশ, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, সুন্দরবন নিয়ে অধিকতর গবেষণা, মহাকাশ বিজ্ঞানসহ নতুন নতুন কারিগরি ও প্রযুক্তিগত বিষয়, সামাজিক ও মানবিক বিদ্যার নতুন নতুন শাখায় উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার ওপর আগামী দিনে জোর দেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে কোনো বদ্ধ জলাশয় হিসেবে চিন্তা করলে চলবে না। যুগের চাহিদা অনুযায়ী জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসারে নিরন্তর গবেষণার গুরুত্ব অপরিসীম। একই সাথে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে এবং সকল ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দিকনির্দেনা পাওয়া যায়। তাই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সে দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধির প্রধান অন্তরায় হবে জায়গার অভাব। এই এলাকাটি জোবা (নরম) মাটির হওয়ার পরও আমরা বহুতল ভবন নির্মাণের দিকে এগোচ্ছি। কিন্তু তার পরও আগামী পাঁচ-দশ বছর পর জায়গা সংকট তীব্র হয়ে দেখা দেবে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে যদি আগামী পঞ্চাশ বা একশ বছরের ভবিষ্যৎ চিন্তা বা পরিকল্পনার কথা ভাবা হয় তা হলে বর্তমান ক্যাম্পাস সংলগ্ন ২০৩ একর জমি অধিগ্রহণ খুবই জরুরী। তা না হলে এসব জায়গায় অসংখ্য ঘরবাড়ি নির্মিত হলে ভবিষ্যতে নানাভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার আশংকা রয়েছে। তাই আমরা সার্বিক বিষয় চিন্তা করে সংলগ্ন ২০৩একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করেছি।
তিনি আরও বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস আমরা বঙ্গবন্ধুর নামে করতে চাই এ কারণে যে দেশের অন্যতম মুক্তিযুদ্ধের বধ্যভূমিতে গড়ে ওঠা একমাত্র এই বিশ্ববিদ্যালয় যতোদিন থাকবে বঙ্গবন্ধুর নাম ও স্মৃতি অম্লান হয়ে থাকবে। শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ আপামর মানুষ অনুপ্রাণিত হবে। একই সাথে দেশের সাধারণ মানুষের অসংখ্য সন্তান এখান থেকে উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ লাভ করে দেশ মাতৃকার সেবায় নিয়োজিত হতে পারবে, যা ছিলো জাতির পিতার স্বপ্ন।
এ ব্যাপারে বৃহত্তর উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব শেখ আশরাফ-উজ জামান বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ক্যাম্পাস সম্প্রসারণের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই এবং এটি একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। কারণ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এতদাঞ্চলের আপমার মানুষের প্রাণের দাবিতে এবং দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামমের ফসল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ৩০ বছরের একাডেমিক কার্যক্রমে দেশে-বিদেশে সতন্ত্র সুনাম ও ভাবমূর্তি অর্জনে সক্ষম হয়েছে। আমরা বৃহত্তর খুলনাবাসী অত্যন্ত খুশি। এখন এ বিশ্ববিদ্যালয় আগামী একশত বছরের প্রয়োজনকে সামনে রেখে সম্প্রসারণের জন্য বর্তমান ক্যাম্পাস সংলগ্ন জমি অধিগ্রহণের যে প্রস্তাব করেছে তা খুবই যুক্তিযুক্ত।
দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ এম জে এফ