November 25, 2024
জাতীয়লেটেস্ট

বঙ্গবন্ধুর নামে পুরস্কার দেবে ইউনেস্কো

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে একটি পুরস্কার প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউনেস্কো। সংস্থাটির নির্বাহী বোর্ড সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সম্প্রতি ইউনেস্কোর ২১০তম নির্বাহী বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়। ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠিত এই সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে আন্তর্জাতিক একটি পুরস্কার প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অর্থনীতিতে যুবকদের অবদানের জন্য এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

ইউনেস্কোর ওই নির্বাহী বোর্ড সভা দুই ভাগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রথম দফার সভা ২ থেকে ১১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানেই বঙ্গবন্ধুর নামে পুরস্কার প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন রোববার (১৩ ডিসেম্বর) সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুকে অনন্য সম্মান দেওয়ার জন্য জাতিসংঘের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ইন দ্য ফিল্ড অব ক্রিয়েটিভ ইকোনমি’ নামে একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত ১১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ইউনেস্কো নির্বাহী পরিষদের শরৎকালীন অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই প্রথম জাতিসংঘের কোনো অঙ্গ সংস্থা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তন করলো।

ইউনেস্কো শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রভৃতিসহ স্বীয় অধিক্ষেত্রে বিভিন্ন অঙ্গনে অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ সদস্য রাষ্ট্রসমূহের আর্থিক সহযোগিতায় আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তন করে থাকে। ইউনেস্কো অধিক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খ্যাতিমান ব্যক্তি তথা প্রতিষ্ঠানের নামে ২৩টি ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তিত রয়েছে। এই প্রথম বাংলাদেশের কোনো প্রথিতযশা সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তির নামে ইউনেস্কো পুরস্কার প্রবর্তন করলো।

ড. মোমেন বলেন, ‘সংস্কৃতি’ ইউনেস্কোর একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধিক্ষেত্র। সমসাময়িককালে বহুল আলোচিত ও চর্চিত বিষয় ‘সৃজনশীল অর্থনীতি’ অঙ্গনে এ আন্তর্জাতিক পুরষ্কার প্রবর্তিত হয়েছে। এ পুরষ্কার সৃজনশীল অর্থনীতিতে যুবসমাজের উন্নয়নে সংস্কৃতিকর্মী, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা কর্তৃক গৃহীত ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগকে স্বীকৃতি দেবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, মানব সৃজনশীলতায় অর্থনৈতিক কার্যক্রমের মেলবন্ধনই ‘সৃজনশীল অর্থনীতি’ যেখানে সংস্কৃতি ভিত্তিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিকাশ পরিলক্ষিত হয়। এর মাধ্যমে শিল্পীর শিল্প বা উদ্ভাবনের স্বত্ব সংরক্ষণ সুনিশ্চিত রেখে সংস্কৃতির সাথে অর্থনীতির বিকাশ সাধিত হয়। ‘সৃজনশীল শিল্প’ এর ভিত্তি হলো—  সাহিত্য, সংগীত, হস্তশিল্প, চিত্রকলা, চলচ্চিত্রসহ সৃষ্টিশীলতার নানা মাধ্যম। ইউনেস্কো প্রায় এক যুগ ধরে এ বিষয়ে কাজ করে আসছে।

ড. মোমেন বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন দূরদর্শী চিন্তক ছিলেন। বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশে তার অবদান অনস্বীকার্য। ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনে তার অংশগ্রহণ, বাক-স্বাধীনতার বিকাশে তার সংগ্রাম, স্বাধীনতার পর বাঙালি সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ সৃষ্টিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্থাপন জাতি কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সৃষ্টির পর পর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এবং বাংলাদেশ লোক ও কারু শিল্প ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা সৃজনশীল অর্থনীতির ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর অবদানের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তার অসাম্প্রদায়িক চেতনা, সংস্কৃতির প্রতি মমত্ববোধ, মাতৃভাষার প্রতি আবেগ সর্বোপরি তার জীবনাদর্শ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরতে তার নামে একটি পুরস্কার প্রবর্তনের কথা আমরা চিন্তা করি। সংস্কৃতি ক্ষেত্রে জাতিসংঘের একমাত্র বিশেষায়িত সংস্থা ইউনেস্কো। ১৯৩ সদস্যবিশিষ্ট ইউনেস্কোর মূলনীতি শান্তি ও সম্প্রীতি তৈরিতে সংস্কৃতি শক্তিশালী উপাদান যা বঙ্গবন্ধু দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শনের আন্তর্জাতিকীকরণ ও তা বিশ্বময় ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য একটি ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তন সবচেয়ে উপযোগী মাধ্যম হবে বলে আমরা মনে করেছি।

তিনি বলেন, এ প্রেক্ষাপটে সৃজনশীল অর্থনীতির ক্ষেত্রে পুরস্কার প্রবর্তনে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়। ২০১৯ সালের আগস্টে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর প্যারিসস্থ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও ইউনেস্কোতে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির মাধ্যমে ইউনেস্কো মহাপরিচালক বরাবর আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব আমরা প্রেরণ করি। ইউনেস্কো এর অধিক্ষেত্র যেমন শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, বাকস্বাধীনতা প্রভৃতি ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর অবদান ও বাংলাদেশ সরকারের ইউনেস্কোর প্রতি অঙ্গীকারের কথা বিবেচনায় নিয়ে ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর নামে পুরস্কার প্রবর্তনে সম্মতি দেয়। ইউনেস্কো সচিবালয় গত ২-১১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ৫৮ সদস্য বিশিষ্ট ইউনেস্কো নির্বাহী পরিষদের ২১০তম অধিবেশনের প্রথম পর্বে এ প্রস্তাবটি বিবেচনার জন্য ইউনেস্কো সচিবালয় উত্থাপন করে। ১১ ডিসেম্বর নির্বাহী পরিষদের প্ল্যানারি সেশনে সর্বসম্মতিক্রমে এ প্রস্তাব গৃহীত হয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, আমরা মনে করি, ইউনেস্কোর মতো জাতিসংঘের একটি অঙ্গসংস্থা কর্তৃক প্রবর্তিত এ পুরস্কার বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ বিশ্বময় ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ তৈরি করবে, বিশ্বময় সংস্কৃতিকর্মীদের সৃজনশীল অর্থনীতির বিকাশে অনুপ্রেরণা যোগাবে। বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু যে এক ও অভিন্ন তা পুরস্কারের শিরোনামে প্রস্ফুটিত হয়েছে। এ পুরস্কার বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং ও ইমেজ বিল্ডিং-এ বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আমরা মনে করি।

প্রতি দুই বছর অন্তর এ পুরস্কার দেওয়া হবে, যার অর্থমান ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। পুরস্কারটি প্রথমবারের মতো ২০২১ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য ইউনেস্কোর ৪১তম সাধারণ সভা চলাকালে দেওয়া হবে।

ইউনেস্কো তাদের কার্যক্রমে নারী-পুরুষ সমতা এবং যুব উন্নয়নকে নীতিগত প্রাধান্য দিয়ে থাকে। সে দিক থেকেও এ পুরস্কার ইউনেস্কো কার্যক্রমের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে সমাজের অনগ্রসর নারী, অভিবাসী ও প্রবাসী জনগোষ্ঠীর সৃজনশীল অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।

ড. মোমেন বলেন, গত বছর ইউনেস্কোর ৪০তম সাধারণ সভায় বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন ইউনেস্কো-এর ‘শতবার্ষিকী কর্মসূচি তালিকা’য় অন্তর্ভুক্ত করে। মুজিববর্ষে এ পুরস্কার প্রবর্তনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে ইউনেস্কো সরাসরিভাবে সম্পৃক্ত হলো।

ইউনেস্কো ২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ আন্তর্জাতিক রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত করে। এর আগে ১৯৯৯ সালে, ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ঘোষণা করার মাধ্যমেও ইউনেস্কো বাংলাদেশকে সম্মানিত করে। এছাড়া ষাট গম্বুজ মসজিদ, পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার এবং সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে এবং বাউল গান, জামদানি, মঙ্গল শোভাযাত্রা ও শীতল পাটি বিশ্ব অপরিমেয় ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশকে সুপরিচিত করেছে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *