January 20, 2025
জাতীয়লেটেস্টশীর্ষ সংবাদ

বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদের আশ্রয় পর্যালোচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি রাশেদ চৌধুরীকে আশ্রয় দেয়ার সিদ্ধান্ত পর্যালোচনার ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন বিচার বিভাগ। বাংলাদেশে দণ্ডপ্রাপ্ত এ আসামির আশ্রয়ের আবেদন প্রায় ১৫ বছর আগে মঞ্জুর করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার মার্কিন সাময়িকী পলিটিকো জানিয়েছে, সম্প্রতি ওই সিদ্ধান্ত পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার।

রাশেদ চৌধুরীর আইনজীবীদের দাবি, এই প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়ের সুযোগ হারাতে পারেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক এই কর্মকর্তা। আর এর মাধ্যমে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হলে এদেশে মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হতে পারেন জাতির পিতার এ খুনি।

পলিটিকো জানিয়েছে, বাংলাদেশ সরকার বহু বছর ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ‘ঠাণ্ডা মস্তিষ্কের খুনি’ রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। উইলিয়াম বারের সাম্প্রতিক এ উদ্যোগে দেশটি অবশ্যই অত্যন্ত উৎফুল্ল হয়ে উঠবে।

রাশেদ চৌধুরীর আশ্রয় পর্যালোচনার জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র পাঠাতে গত ১৭ জুন যুক্তরাষ্ট্রের বোর্ড অব ইমিগ্রেশন আপিলসকে (বিআইএ) চিঠি দিয়েছেন উইলিয়াম বার। চিঠিতে একজন গুরুতর অপরাধীকে আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে বোর্ড কোনও ভুল করেছিল কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল।

জানা যায়, ১৯৯৬ সালে পর্যটক ভিসায় সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন রাশেদ চৌধুরী। এর দুই মাসের মধ্যেই দেশটিতে আশ্রয়ের আবেদন করেন তিন। প্রায় দশ বছর পর মার্কিন আদালতে তার আশ্রয়ের আবেদন মঞ্জুর হয়।

ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে রাশেদ চৌধুরী দাবি করেছিলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তিনি কিছু সহকর্মীর কাছ থেকে জানতে পারেন তারা সামরিক অভ্যুত্থান করতে যাচ্ছেন। এর কিছুক্ষণ পরেই সত্যি সত্যি অভ্যুত্থান শুরু হয়ে যায়।

খুনি রাশেদের দাবি, অভ্যুত্থানের সময় তাকে প্রধান রেডিও স্টেশনের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। তার নেতৃত্বাধীন দলটি স্টেশনে প্রবেশ করতেই সেখানকার নিরাপত্তাকর্মীরা স্বেচ্ছায় তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। সেই সময় অভ্যুত্থানে অংশ নেয়া অন্যান্য সেনা কর্মকর্তারা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করেন।

তার এ সাক্ষ্যের ভিত্তিতে মার্কিন আদালত রায় দেয়, রাশেদ চৌধুরী অভ্যুত্থানে বড় কোনও ভূমিকায় জড়িত ছিলেন না। এর সঙ্গে অভিবাসন আদালতের বিচারকও মেনে নেন, তিনি কোনও হত্যাকাণ্ডে অংশ নেননি। তবে আদালতের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (ডিএইচএস)। এক্ষেত্রে তাদের যুক্তি ছিল, সেনা অভ্যুত্থানে জড়িত থাকায় রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় পাওয়ার যোগ্য নন।

পলিটিকোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনা অভ্যুত্থানের কিছুদিন পরেই এতে অংশগ্রহণকারীদের দায়মুক্তির জন্য তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার সংবিধান সংশোধন করে। এরপর প্রায় দুই দশক রাশেদ চৌধুরী বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের কূটনৈতিক প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা জয়লাভের পর অভ্যুত্থানকারীদের দায়মুক্তির অধ্যাদেশ বাতিল করেন এবং হত্যাকারীদের বিচারের প্রক্রিয়া শুরু করেন।

৯৬ সালে ব্রাজিলে বাংলাদেশ দূতাবাসের শীর্ষ কূটনীতিক ছিলেন রাশেদ চৌধুরী। শেখ হাসিনা প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পরপরই খুনি রাশেদকে দ্রুত দেশে ফেরার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু বিচারের ভয়ে তখন তিনি সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যান। এরপর থেকেই তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। গত এপ্রিলেও মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলারের কাছে এই অনুরোধ জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *