বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরীকে ফেরত দিতে অনাগ্রহী কানাডা
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরীকে ফেরত দিতে কানাডা আগ্রহী নয়। বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) এক অনুষ্ঠানে কানাডার রাষ্ট্রদূত বেনোয়া প্রিফনটেইন এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান।
ডিপ্লোমেটিক করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ আয়োজিত ডিক্যাব টকে তিনি বলেন, ‘ফেরত পাঠানো হলে মৃত্যুদণ্ড হতে পারে এমন ব্যক্তিকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে কানাডা ঐতিহাসিকভাবে অত্যন্ত নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে।’
কানাডিয়ানদের জন্য মৌলিক বিষয় হচ্ছে যাকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে তার কি মৃত্যুদণ্ড হবে, কারণ আমরা নিজেরাই বিষয়টির বিরোধিতা করে থাকি। উলেখ্য, কানাডাতে শাস্তি হিসাবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান নেই। তিনি আরও বলেন, বিষয়টি এখন বিচারাধীন আছে এবং কানাডার অনাগ্রহের জায়গা কোনটি, সেটি ছাড়া অন্য কোনও কিছু বলা আমার জন্য ঠিক হবে না।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘কি করা যায় এবং কেন ফেরত পাঠানো হবে না সে বিষয়ে বাংলাদেশের সরকার (কোর্টেও কাছে) একটি পর্যবেক্ষণ চেয়েছে।’
এখানে উলেখ্য, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি এস এইচ এম বি নূর চৌধুরীকে কানাডা থেকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগের অংশ হিসাবে বাংলাদেশের করা মামলার শুনানি হয়েছে গত মার্চে। কানাডার ফেডারেল কোর্টে করা ওই মামলায় বাংলাদেশের আইনজীবী এবং কানাডার অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের আইনজীবীরা নিজেদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। যুক্তিতর্ক শেষে বিচারপতি জানান তিনি তার সিদ্ধান্ত পরে জানাবেন।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই নূর চৌধুরী কানাডার অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসে একটি প্রি-রিমোভাল রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট দরখাস্ত করে জানায় তাকে যদি ওই দেশ থেকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়, তবে তাকে ফাঁসি দেওয়া হবে। গত ১০ বছর কানাডার সরকার এই দরখাস্তটি গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান না করে ঝুলিয়ে রেখেছে ।
২০১৮ এর জুন মাসে কানাডার ফেডারেল কোর্টে বাংলাদেশ এ বিষয়ে একটি রিট অব ম্যানডামাস দাখিল করেছে এবং কোর্টের কাছে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত চেয়েছে। কোর্টের কাছ থেকে অবশ্য পালনীয় নির্দেশনা চেয়ে এই রিট অব ম্যানডামাস দাখিল করা হয়।
বাংলাদেশ চায় নূর চৌধুরীর দরখাস্তের বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত দেওয়ার জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসকে আদালত নির্দেশ দিক। অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস নূর চৌধুরীর দরখাস্ত গ্রহণ বা প্রত্যাখান যেকোনোটি করতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশ চায় তারা একটি সিদ্ধান্ত আসুক।
১৯৯৯ সালে কানাডার একটি কোর্ট নূরের শরণার্থী সংক্রান্ত একটি আবেদন খারিজ করে তাকে বহিষ্কারের আদেশ দেয়। এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে ২০০৭ সালে নিম্নকোর্টের আদেশ বহাল রাখে উচ্চ আদালত এবং তাকে আবার বহিষ্কারের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে তাকে ফেরত পাঠানোর জন্য ২০০৭ সালে কানাডিয়ান সরকার একটি চিঠি দেয় বাংলাদেশকে। কিন্তু তৎকালীন সরকারের অনাগ্রহের সুযোগ নিয়ে কানাডায় অবস্থান করছে নূর চৌধুরী। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার এফআইআর হয় এবং এর বিচার সম্পূর্ণভাবে শেষ হয় ২০০৯ সালে।