ফোর্বসের ১০০ প্রভাবশালী নারীর তালিকায় ৪০ জনই সিইও
বিশ্বে প্রভাব বাড়ছে নারী ব্যবসায়ীদের। এখন বড় বড় বহু প্রতিষ্ঠানের শীর্ষপদে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন নারীরা। দেশ ও জাতির অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়নে আদর্শ উদাহরণ হয়ে উঠছেন তারা। এর নমুনা দেখা গেছে মার্কিন সাময়িকী ফোর্বসের শীর্ষ ১০০ প্রভাবশালী নারীর তালিকায়। তাদের নজরে এ বছর বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ১০০ নারীর মধ্যে ৪০ জনই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা সিইও।
প্রতি বছর বিশ্বের শীর্ষ ক্ষমতাধর নারীর তালিকা প্রকাশ করে ফোর্বস। গত ৭ ডিসেম্বর প্রকাশিত হয়েছে তাদের ১৮তম তালিকা। সেখানে ঠাঁই পেয়েছেন ৪০ জন সিইও। ২০১৫ সালের পর এ তালিকায় এত বেশি নারী ব্যবসায়ী আর দেখা যায়নি। এই ৪০ জন মিলে রেকর্ড ৩ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন বা ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলারের আয়-ব্যয় দেখাশোনা করেন।
ফোবর্সের মতে, ২০২১ সালে বহু জিনিসের মতো বিশ্বজুড়ে নারী ক্ষমতার দৃশ্যপটেও বিশাল পরিবর্তন এসেছে। শীর্ষ ক্ষমতাধরদের মধ্যে ব্যবসায়ীর সংখ্যা বাড়লেও কমে গেছে রাষ্ট্রপ্রধানের সংখ্যা। গত বছরের তুলনায় এবারের তালিকায় দুজন রাষ্ট্রপ্রধান কম।
ফোর্বস যে ১৮বার ক্ষমতাধর নারীর তালিকা করেছে, তাতে মাত্র তিনবার ছাড়া প্রতিবারই শীর্ষে দেখা গেছে সাবেক জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মেরকেলকে। কিন্তু এ বছর তিনি অবসর নেওয়ায় তালিকার শীর্ষে জায়গা করে নিয়েছেন নতুন একজন- বিলিয়নিয়ার সমাজসেবী ম্যাকেঞ্জি স্কট। তিনি বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ ধনী নারী হলেও মূলত ‘অর্থপূর্ণ এবং বৈপ্লবিকভাবে’ দান করার সংকল্পই তাকে প্রতিযোগিতার ঊর্ধ্বে নিয়ে গেছে।
ম্যাকেঞ্জির পরে, অর্থাৎ দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। আগের বছর দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্ডকে পেছনে ফেলেছেন তিনি। ফলে ল্যাগার্ড নেমে গেছেন তৃতীয় অবস্থানে।
ফোর্বসের মতে, তালিকায় জায়গা পাওয়ার জন্য কেবল অর্থ বা ক্ষমতাসীন অবস্থান যথেষ্ট নয়। তার জন্য অবশ্যই নিজের অর্থ, কণ্ঠস্বর বা পাবলিক প্ল্যাটফর্ম দিয়ে কিছু করতে হবে। যেমন, স্টারবাকসের সাবেক চিফ অপারেটিং অফিসার রোজালিন্ড ব্রিউয়ারের কথাই ধরা যাক। গত মার্চে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফার্মেসি চেইন ওয়ালগ্রিনসের দায়িত্ব নেন এবং বর্তমানে একমাত্র কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে এসঅ্যান্ডপি৫০০ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত একটি কোম্পানি চালাচ্ছেন। এ বছর একলাফে ১৫ ধাপ ওপরে উঠে তালিকায় ১৭তম হয়েছেন ব্রিউয়ার।
বলা যায় বায়োএনটেকের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও ইমিউনোলজিস্ট ওজলেম তুরেসির কথা। তালিকায় প্রথমবারের মতো নাম লেখানো ২০ নারীর একজন তিনি এবং প্রথমবারেই ১০০ জনের মধ্যে ৪৮তম হয়েছেন তুরেসি। এর কারণ তিনি শুধু একটি বায়োটেক কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছেন বলেই নয়, মার্কিন ফার্মা জায়ান্ট ফাইজারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে একটি করোনাভাইরাসরোধী এমআরএনএ টিকা তৈরিতেও বড় ভূমিকা ছিল তার।
অবশ্য তালিকায় থাকা কিছু নারীর ক্ষমতা গত বছরের তুলনায় কমে গেছে, বিশেষ করে চীনাদের। ব্যবসায়িক খাতে চীন সরকারের সাম্প্রতিক কড়াকড়ির জেরে গ্রি ইলেক্ট্রনিকসের ডং মিং ঝু (১১ ধাপ নেমে ৫৮তম) এবং ইয়াম চায়না সিইও জোই ওয়াট (৩৯ ধাপ নেমে ৭৩তম) আগের জায়গা হারিয়েছেন।
এমনকি রানি এলিজাবেথ নেমে গেছেন ২৪ ধাপ নিচে। তার অবস্থান এখন ৭০তম। একই অবস্থা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও। ২০২০ সালে তিনি ফোর্বসের তালিকায় ৩৯তম থাকলেও এ বছর নেমে গেছেন ৪৩তম স্থানে।
ফোর্বসের মতে, বিশ্বের ১০০ ক্ষমতাধর নারীর তালিকা নিয়ে যদি কোনো সারাংশ দাঁড় করানো হয়, তবে সেটি এমন হতে পারে: এই নারীরা যারা ব্যবসা, অর্থ ও রাজনীতির নিয়মকানুন নতুন করে লিখছেন, তাদের কাজ এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি প্রয়োজন।