ফের অশান্ত খুলনার পাটকল : ৪টি মিলে উৎপাদন বন্ধ করে শ্রমিক বিক্ষোভ
দ: প্রতিবেদক
সপ্তাহিক বকেয়া মুজরীর দাবিতে রাষ্ট্রায়ত্ব প্লাটিনাম ও স্টার জুট মিলের উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। গতকাল রবিবার বেলা ৩টায় স্টার জুট মিল, সন্ধ্যা ৬টায় প্লাটিনাম জুবিলী জুট মিলের শ্রমিকরা উৎপাদন বন্ধ করে দিয়ে সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছে। এরপর অন্যান্য মিলগুলো বন্ধ করার ডাক দিয়েছে শ্রমিকরা।
আগামী ২/৩ দিনের মধ্যে বিজেএমসি থেকে বকেয়া মজুরী পরিশোধের ব্যবস্থা করা না হলে উত্তেজনার পারদ আরো বৃদ্ধি পাবে, এমন অবস্থা বিরাজ করছে জুট মিলগুলোতে। ১১ থেকে ১২ সপ্তাহ মুজরী পাচ্ছেনা শ্রমিকরা। অনেকটা অনাহারে দিন কাটাচ্ছে খুলনা-যশোর অঞ্চলের প্রায় অর্ধলক্ষ শ্রমিক। এর আগে পাওনা সহ ৯ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে খুলনা-যশোর অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকলে ৯৬ ঘন্টা ধর্মঘট ও ৪ ঘন্টা রাজপথ-রেলপথ অবরোধ কর্মসূচীর পালন করেছে পাটকল শ্রমিকলীগ। তৃতীয় দফায় গত ১৫ এপ্রিল এ আন্দোলনের ১ম দিনে কর্মসূচী চলাকালে শ্রম ও কর্মস্থাপন প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের সঙ্গে শ্রমিকলীগ ও সিবিএ নন-সিবিএ নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ২৫ এপ্রিলের মধ্যে শ্রমিকদের ১০ সপ্তাহর মজুরী, ৩ মাসের বেতন ও আগামী ১৮ মে“র মধ্যে মজুরী কমিশনের অর্থের হিসাব প্রতিটি শ্রমিকরে অনুকুলে শ্লিপ দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয় এ বৈঠকে। সে অনুযায়ী লিখিতও দেন বিজেএমসির চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ নাসিম। ২৫ এপ্রিলের মধ্যে ১০ মজুরী ও ৩ মাসের বেতন পরিশোধে বিজেএমসি ব্যর্থ হলে রাষ্ট্রায়ত্ব ২৬টি পাটকলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
পরে পাটকল শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তিনি শ্রমিক নেতাদের কাছ থেকে আরো এক সপ্তাহ সময় নেন । এর পরও শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ না হওয়ায় শ্রমিকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ দেখা যায়। এক পর্যায়ে প্লাটিনাম ও ষ্টার জুট মিলের শ্রমিকরা দফায় দফায় বিক্ষোভ করে। দুপুর ২টায় ষ্টার জুট মিলের শ্রমিকরা নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগ না দিয়ে প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান করে। এ সময় বকেয়া মজুরী পরিশোধের দাবিতে বিক্ষোভ করে উৎপাদন বন্ধ রাখে। ষ্টার জুট মিলের উৎপাদন বন্ধের খবর অন্যান্য পাটকলের শ্রমিকদের কাছে ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিকরা সন্ধ্যা ৬টায় প্লাটিনাম মিলের উৎপাদন করে। পরে আন্দোলনকারীরা বিআইডিসি রোড়ের দু’পাশের যান চলাচল বন্ধ করে দেয়।
এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা রাস্তার উপর টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে। রাত সোয়া ৮টায় ক্রিসেন্ট, দৌলতপুর জুট মিলের শ্রমিকরা মিলের উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। এদিকে পাটকল শ্রমিকলীগের ৯দফা দাবিতে গতকাল রবিবার বিকাল সাড়ে ৫টায় ক্রিসেন্ট জুট মিলের গেটে এক শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মোঃ মুরাদ হোসেন। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিবিএ সাধারণ সম্পাদক মোঃ সোহরাব হোসেন, এস এম আজম, মোঃ বাচ্চু মিয়া, জাহিদ হোসনে জাহাঙ্গীর, মোঃ ওমর ফারুক ।
সমাগত রমজান মাসে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার টাকা হাতে না থাকায় শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভের এ সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল বেলা ৩টায় স্টার জুট মিলের শ্রমিকরা মিলের সকল বিভাগের উৎপাদন বন্ধ করে দিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। এ সংবাদ শোনার পরেই সন্ধ্যা ৬ টায় প্লাটিনাম জুবিলী জুট মিলের শ্রমিকরাও উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। তারা বকেয়া মুজরী প্রদানের দাবিতে বিআইডিসি রোডে টায়ারে আগুন জ¦ালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। মিলের উৎপাদন বন্ধ করে শ্রমিকদের বিক্ষোভের সংবাদ পেয়ে শ্রমিক নেতারা মিল গেটে এসে শ্রমিকদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু শ্রমিকরা এতোটাই ক্ষিপ্ত যে শ্রমিক নেতাদের কোন কথাই তারা শুনছেননা।
প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক নুর ইসলাম জানান, চলতিসহ তাদের ১২ সপ্তাহের মুজরী বকেয়া পড়ে আছে। কাজ করছেন কিন্তু বিল পাচ্ছেননা। পরিবার নিয়ে চলতে কষ্ট হচ্ছে তাদের। ধার দেনা করে এই কয় সপ্তাহ চললেও এখন কেউ আর টাকা ধার দিচ্ছেনা। দোকান থেকে বাকি নিতে গেলে গালমন্দ করে ফিরিয়ে দিচ্ছে।
স্টার জুট মিলের শ্রমিক মোঃ শাহিন জানান, বিজেএমসি শ্রমিকদরে সাথে প্রতারণা করছে। মুজরী পরিশোধ করার আশ^াস দিয়ে পরিশোধ করছেনা। তারা শুভংকরের ফাঁকির মধ্যে রেখেছে শ্রমিকদের।
প্লাটিনাম জুট মিলের প্রকল্প প্রধান এস,এম মইনুল হোসেন জানান, সন্ধ্যাা সোয়া ৬ টায় হঠাৎ করে শ্রমিকরা উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। চলতিসহ ১২ সপ্তাহের শ্রমিকদের মজুরী ও কর্মকর্তা, কর্মচারীদের ৪ মাসের বেতন বকেয়া আছে। মজুরী ও বেতন নিয়েপ্লাটিনাম নাম জুট মিলে ১১ কোটি টাকা এবং স্টার জুট মিলে প্রায় ৯ কোটি টাকা বকেয়া মজুরী ও বেতন পরিশোধ করা হয়নি। একই অবস্থা খুলনা যশোর অঞ্চলের খালিশপুর, দৌলতপুর, ক্রিসন্টে, আলিম, ইর্ষ্টান, কার্পেটিং ও জেজেআই জুট মিলে। ঈদুল ফিতরের আগে বকেয়া মজুরী পরিশোধ করা হলে আন্দোলন আরো বাড়বে বলে বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা জানান।