November 28, 2024
জাতীয়লেটেস্ট

ফেঁসে যাচ্ছেন বাবুল আক্তার, স্ত্রীকে খুনের জন্য ৩ লাখ টাকায় ‘খুনি’ ভাড়া

স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার আসামি সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার ফেঁসে যাচ্ছেন। প্রমাণ হওয়ার পথে হত্যাকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততা।

প্রস্তুত করা হয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর তদন্ত প্রতিবেদন।

তদন্তে প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, স্ত্রীকে খুনের জন্য বাবুল আক্তার ৩ লাখ টাকায় ‘খুনি’ ভাড়া করেন। এতে নেতৃত্ব দেন তার সোর্স মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা। সঙ্গে ছিল এহতেশামুল হক প্রকাশ হানিফুল হক প্রকাশ ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু ও শাহজাহান মিয়া।

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় মিতুকে প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে যোগ দিতে ওই সময় ঢাকায় ছিলেন বাবুল আক্তার। হত্যাকাণ্ডের পর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেছিলেন বাবুল।

আদালতের আদেশে পরে মিতু হত্যা মামলা যায় পিবিআইয়ের হাতে। হত্যাকাণ্ডের প্রায় পাঁচ বছরের মাথায় গত ১১ মে বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চট্টগ্রাম পিবিআই কার্যালয়ে ডেকে নেওয়া হয়। এর পরদিন ১২ মে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, মিতু হত্যার সঙ্গে তার স্বামী বাবুল আক্তারের ‘সম্পৃক্ততার প্রমাণ’ পেয়েছেন তারা। সেদিনই চট্টগ্রামে আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় ৫৭৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছিলেন পিবিআইর পরিদর্শক মামলার তৎকালীন আইও সন্তোষ কুমার চাকমা। এরপর ওইদিনই পাঁচলাইশ থানায় মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন একটি হত্যা মামলা করেন। সর্বশেষ পিবিআই পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক দায়িত্ব নিয়ে তদন্ত কার্যক্রম শেষ করেন।

মামলায় সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন উল্লেখ করেন, কক্সবাজার জেলায় চাকরি করার সময় বাবুল আক্তারের সঙ্গে ইউএনএইচসিআরে ফিল্ড অফিসার (প্রোটেকশন) পদে কর্মরত ভারতীয় নারী গায়ত্রী অমর সিংয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তার প্রতিবাদ করায় মিতুকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হতো। ২০১৪ সালের জুলাই থেকে পরের বছরের জুন পর্যন্ত সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরত ছিলেন বাবুল। তখন তার মোবাইল ফোন চট্টগ্রামের বাসায় রেখে গিয়েছিলেন। ওই ফোনে গায়ত্রীর পাঠানো ২৯টি এসএমএস মিতু দেখে সেগুলো তার একটি খাতায় লিখে রেখেছিলেন।

এতে আরও বলা হয়, ‘হত্যাকাণ্ডের এক মাস আগে বাবুল চীনে এক প্রশিক্ষণে গেলে স্ত্রী মিতু দুটি বই পান, সেগুলো ওই নারী বাবুলকে দিয়েছিল। বই দুটির দুটি পাতায় ওই নারী ও বাবুলের লেখায় তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের প্রমাণ মিলেছে। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে উভয়ের মধ্যে পারিবারিক অশান্তি চরমে পৌঁছেছিল। নির্যাতনের বিষয়টি মিতু তাকেও জানিয়েছিল’।

পিবিআইয়ের প্রতিবেদনেও এই বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘তদন্ত প্রায় শেষ হয়েছে। প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে আরও কয়েকদিন লাগতে পারে’।

এদিকে মিতু হত্যা মামলায় গ্রেফতার হওয়া ৪ জনকে খুনের দায় থেকে অব্যাহতি দিয়েছে পিবিআই। তারা হলেন- মো. সাইদুল ইসলাম সিকদার সাক্কু, নুরুন্নবী, রাশেদ ও গুইন্যা। নুরুন্নবী ও রাশেদ পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন। এছাড়া মামলার আসামিদের মধ্যে মুসা ও কালু পলাতক। ভোলাইয়া জামিনে আছে। কারাগারে আছে- বাবুল আক্তার, ওয়াসিম, শাহজাহান মিয়া ও আনোয়ার হোসেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, মিতু হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদনের সাক্ষ্যস্মারক রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মহানগর পিপি মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরীর কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করা গেছে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *