ফিলিস্তিন ইস্যুতে বিভাজনের মুখে আরব বিশ্ব
ইসরায়েল-আমিরাতের মধ্যে কথিত ঐতিহাসিক চুক্তির প্রেক্ষিতে বুধবার বৈঠকে বসছেন আরব লিগের নেতারা। সেখানে ফিলিস্তিন ইস্যুতে জোর আলোচনা হতে পারে। তবে বরাবরের মতো এ ধরনের বৈঠকে পারস্পরিক ঐক্যের বদলে এবার বিভাজন সৃষ্টির সম্ভাবনাই বেশি।
ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের চুক্তি করে সংযুক্ত আরব আমিরাত ২০০২ সালের আরব শান্তি পরিকল্পনায় বাধা সৃষ্টি করেছে বলে অভিযোগ তুলেছে ফিলিস্তিন। ওই পরিকল্পনা অনুসারে ইসরায়েলের ১৯৬৭ সালের সীমান্ত প্রত্যাহার, ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের বিষয়ে স্থায়ী সমাধান এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে পূর্ব জেরুজালেমকে স্বীকৃতি দেয়ার পরেই কেবল ইসরায়েলিদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কথা আরব দেশগুলোর।
ফিলিস্তিনি প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হুসেইন হামায়েল বলেছেন, শান্তি পরিকল্পনার খসড়ায় বিরোধিতা করে বাহরাইন নিজেকে আরব ও মুসলিমদের শত্রুপক্ষে দাঁড় করিয়েছে।
ফিলিস্তিনি স্বার্থ বলি দেয়ার কারণ
গত ১৩ আগস্ট মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েল-আমিরাত চুক্তির কথা ঘোষণায় রীতিমতো হতবাক হয়েছিল ফিলিস্তিনি প্রশাসন। এর জন্য তারা আমিরাতের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে প্রতারণারও অভিযোগ করেছে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, আরব বিশ্বের আরও কয়েকটি দেশ শিগগিরই আমিরাতের পথ অনুসরণ করবে। ইতোমধ্যেই ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে বাহরাইন এবং ওমান
লন্ডনের কিংস কলেজের নিরাপত্তা গবেষণা বিষয়ক সহকারী অধ্যাপক আন্দ্রেস কিং বলেন, ফিলিস্তিন ইস্যুটি ঐতিহ্যগতভাবেই আরব লিগকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছে। তবে চলতি বছর সেই ইস্যুটাই বিভাজনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ অবস্থায় ফিলিস্তিনি নেতাদের উত্থাপিত অনেক প্রস্তাবেই উপসাগরীয় দেশগুলো আর সমর্থন করবে না বলে মনে করেন এ বিশ্লেষক।
তিনি বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে হয়তো আরব বিশ্বের আর কোনও দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে না। তবে ইসরায়েলিদের সঙ্গে লেনদেন ও ঘনিষ্ঠতা আরও বাড়বে, যেখানে ফিলিস্তিনি স্বার্থের কোনও যোগসূত্র থাকবে না।
আন্দ্রেস কিং বলেন, আমিরাত, বাহরাইন ও সুদানের ক্ষেত্রে আরব-ইসরায়েল দ্বন্দ্বকে ফিলিস্তিন- ইসরায়েলের সমস্যা বলে ধরা হয়েছে, যার ফলে ইসরায়েলের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কোন্নয়নে কোনও বাধা থাকার কথা নয়।
ফিলিস্তিনি পলিসি নেটওয়ার্ক আল-শাকাবার সদস্য মারওয়া ফাতাফতাও এ বিষয়ে একমত। তিনি মনে করেন, ভূরাজনৈতিক স্বার্থের কারণেই ফিলিস্তিনিদের অধিকারের বিষয়টি চাপা পড়ছে।
মারওয়া বলেন, উপসাগরীয় অনেক দেশই ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে আগ্রহী। সেক্ষেত্রে ইসরায়েল-আমিরাত চুক্তি বরফ ভাঙার সূচনা মাত্র।
তার কথায়, ইসরায়েলের সঙ্গে উপসাগরীয় দেশগুলোর সম্পর্কোন্নয়নের প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে এবং এটি এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। ফলে আরব লিগের বৈঠক থেকে ফিলিস্তিনিদের জন্য বড়জোর মৌখিক আশ্বাসই আসতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
সৌদির অবস্থান
আঞ্চলিক পরাশক্তি সৌদি আরব ফিলিস্তিনিদের স্বার্থরক্ষা ছাড়া ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে না বলে ঘোষণা দিলেও আমিরাতের সিদ্ধান্তের কোনও প্রতিবাদ জানায়নি।
বিশ্লেষকদের মতে, এ অবস্থায় রিয়াদ হয়তো আরব শান্তি পরিকল্পনার পক্ষে মৌখিক সমর্থন লাভের চেষ্টা করবে। তবে বিরোধিদের বিরুদ্ধে কোনও শক্ত অবস্থানে না গিয়ে তারা আরব দেশগুলোর জন্য স্বতন্ত্রভাবে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির পথ খোলা রাখতে পারে।
আন্দ্রেস কিং বলেন, সৌদি আরব মৌখিকভাবে ফিলিস্তিনি স্বার্থ, জেরাজালেম ইস্যু ও আরব শান্তি পরিকল্পনার পক্ষে প্রচারণা চালাবে। তবে কাজের ক্ষেত্রে রিয়াদ কী করবে, এখন সেটাই দেখার বিষয়।
তিনি বলেন, নেতৃস্থানীয় আরব দেশ হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাত ইতোমধ্যেই আমিরাতি নাগরিকদের সন্তুষ্ট করতে ফিলিস্তিনি স্বার্থকে বলি দিয়েছে। এ অবস্থায় আরব শান্তি পরিকল্পনার পক্ষে বহুপাক্ষিক সমর্থন তৈরি কঠিনই হবে।
মারওয়া ফাতাফতা বলেন, সৌদি আরব অতীতে বহুবারই ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা ইসরায়েলের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী, বিশেষ করে ইরানের ক্রমবর্ধমান হুমকির প্রেক্ষিতে। বস্তুত, সৌদি আরব দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচলে নিজেদের আকাশসীমা খুলে দিয়ে ইসরায়েল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের পথ সহজ করে দিয়েছে।