January 21, 2025
আঞ্চলিক

ফকিরহাটে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা বানিজ্য, হুমকির সম্মূখীন জনস্বাস্থ্য

(ছবি সংগৃহীত)

আনন্দ কুমার দে, ফকিরহাট

বাগেরহাট ফকিরহাট উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ চুল্লিতে অবাধে কাঠ পুড়িয়ে তৈরি হচ্ছে কয়লা। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে বিভিন্ন বনজ ও ফলজ গাছ কেটে এখানে কাঠ সরবরাহ করা হয়। ফকিরহাট উপজেলার লখপুর ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি স্থানে স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে প্রায় ৮টি কয়লা তৈরির বিশেষ ধরনের চুলা। এতে একদিকে, যেমন বনজ সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে,পাশাপাশি সৃষ্ট ধোঁয়ায় তৈরি হচ্ছে শ্বাসজনিত বিভিন্ন রোগ ব্যাধি। অপরদিকে, পরিবেশ ও জীববৈচিত্রেরও মারাত্বক ক্ষতি হচ্ছে।

সরোজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার লখপুর ইউনিয়নের বড় খাজুরা গ্রামের মোঃ জাকির হোসেন চারটি কয়লা তৈরির চুলা নিয়ন্ত্রণ করেন। এয়াড়াও উপজেলার প্রায় ৮টি চুলায় কাঠ পোড়ানোর খবর পাওয়া গেছে। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব কয়লার কারখানায় দেদারছে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদফতরের কোনো অনুমোদন ছাড়াই এসব কয়লা তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। বিধিনিষেধ থাকার পরও জনবসতি এলাকায় ও ফসলি জমি নষ্ট করে এসব কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। শক্ত কাঁচা লাল মাটি, ইট ও কাঠের গুঁড়া মিশিয়ে তৈরি করা চুল্লিতে শতশত মণ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে।

কয়লা শ্রমিকরা জানান, চুল্লির মধ্যে সারিবদ্ধভাবে কাঠ সাজিয়ে একটি মুখ খোলা রেখে অন্য মুখগুলো মাটি এবং ইট দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়। খোলা মুখ দিয়ে আগুন দেয়া হয় চুল্লিতে। আগুন দেয়া শেষ হলে সেটিও বন্ধ করে দেয়া হয়। কয়েকদিন পোড়ানোর পর চুলা থেকে কয়লা বের করা হয়। প্রতিটি চুল্লিতে প্রতিবার ২০০ থেকে ২৫০ মণ কাঠ পোড়ানো হয়। কাঠ পুড়ে কয়লা হতে সময় লাগে ৮ থেকে ১০ দিন। পরে কয়লা ঠান্ডা করে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে চটের বস্তায় ভরে ট্রাক, পিকাপ, ট্রলারসহ বিভিন্ন যানবাহনযোগে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চালান করা হয়। বড় খাজুরা গ্রামের চুলার মালিক অবৈধ কয়লা ব্যবসায়ী মোঃ জাকির বলেন, কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি অবৈধ হলেও কিছু করার নেই। এ ব্যবসায় অল্প পুঁজিতে ভালো লাভ হয়। তাই এ ব্যবসা করে যাচ্ছি।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, একটি চুল্লিতে এক সপ্তাহে কমপক্ষে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ মণ কাঠ পোড়ানো হয়। প্রতি বস্তা কয়লা ৩৫০-৪৫০ টাকায় বিক্রি হয়। এভাবে শত শত টন কাঠ পুড়িয়ে কয়লা বানিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয় ভুক্তভোগীরা জানান, কয়লা তৈরির চুল্লির কালো ধোঁয়ায় শিশুসহ এলাকার মানুষের মধ্যে শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দিচ্ছে। দূষিত হচ্ছে এলাকার পরিবেশ, নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি। সেই সঙ্গে জীববৈচিত্রও হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্থ। বিভিন্ন গাছপালায় মড়ক দেখা দিয়েছে। নিয়মিত এই বিশাল পরিমানের গাছ, গাছের গুড়ি পুড়িয়ে কয়লা বানানোর ফলে খুবই দ্রæত ওই এলাকায় অক্সিজেন ঘাটতিসহ বিভিন্ন প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রোগবালাই বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন সচেতন এলাকাবাসী। তাদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে অবগত হয়েও কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না।

বাগেরহাট সিভিল সার্জন ডা. হুমায়ুন কবির বলেন, কয়লা তৈরিতে কাঁচা কাঠ পোড়ানোয় কার্বন ও সিসা নির্গত হয়। যে এলাকায় এসব চুলায় কাঠ পুড়িয়ে ধোঁয়ার সৃষ্টি করা হচ্ছে, সেখানে নিশ্চিতভাবে শিশু জন্মগতভাবেই ফুসফুসের সমস্যা নিয়েই জন্ম নেবে। এ ছাড়া এসব চুল্লির ধোঁয়ায় মানুষের অ্যাজমা সমস্যা, ফুসফুসের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ ও এলার্জির সমস্যা এবং চোখের সমস্যাসহ নানাবিধ রোগ হতে পারে।

বড় খাজুরা গ্রামের স্কুলছাত্র হাসান শেখ জানান, চুল্লির ধোঁয়ায় চোখ জ্বালাপোড়া করে, খুশখুশে কাশি হয়। সন্ধ্যায় প্রচন্ড গন্ধে পড়াশোনা করা যায় না।

এ প্রসঙ্গে বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মামুনুর রশিদ বলেন, কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরির বিষয়টির সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য আমার কাছে ছিল না। তবে সরকারি অনুমোদন ছাড়া কয়লার কারখানা স্থাপনের বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। তদন্ত সাপেক্ষ অবৈধ কয়লার কারখানা বন্ধসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *