প্লেনের ভেতর করোনা পজিটিভ যাত্রীর ৩ ঘণ্টা কাটলো বাথরুমে
বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে আইসল্যান্ডএয়ারের একটি ফ্লাইটে শিকাগো থেকে আইসল্যান্ডে যাচ্ছিলেন মারিসা ফোটিও নামে এক নারী। তবে তাদের আসল গন্তব্য ছিল সুইজারল্যান্ড। আইসল্যান্ডের রেইক্যাভিক নেমে সেখান থেকে সুইজারল্যান্ডের ফ্লাইট ধরার কথা ছিল তাদের। কিন্তু রওয়ানা দেওয়ার পরে মাঝআকাশেই করোনা পজিটিভ শনাক্ত হন মারিসা, যার কারণে ফ্লাইটের বাকি সময় প্লেনের বাথরুমে বসে কাটাতে হয়েছে তাকে।
সিএনএনের খবর অনুসারে, প্লেনে ওঠার আগে শিকাগোয় থাকতে দু’বার পিসিআর এবং পাঁচবার র্যাপিড করোনা টেস্ট করিয়েছিলেন মারিসা। দুই ডোজ টিকা নেওয়ার পর সম্প্রতি বুস্টার ডোজও নিয়েছেন। তিনি স্থানীয় একটি স্কুলের শিক্ষক। টিকা না নেওয়া শিশুদের সংস্পর্শে নিয়মিত যাওয়ায় কিছুদিন পরপর করোনা টেস্ট করাতেন এ নারী। এর আগে যতবার টেস্ট করিয়েছেন, প্রতিবারই ফলাফল নেগেটিভ দেখিয়েছে। কিন্তু অবকাশযাপনে যখন সুইজারল্যান্ড রওয়ানা দিলেন, তখন মাঝপথেই করোনা পজিটিভ আসে তার।
জানা যায়, প্লেনে ওঠার আগেও পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন মারিসা। কিন্তু প্লেন উড়তে শুরু করার ঘণ্টা দেড়েক পরেই গলার ভেতর খুসখুস করতে থাকে তার। তখন মনের সন্দেহ দূর করতে প্লেনের ভেতরই করোনা টেস্টের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে দেখা যায়, ফলাফল পজিটিভ।
মারিসা জানান, তিনি বাথরুমে বসে করোনা টেস্টের ফলাফল দেখেন। ওই সময় প্লেনটি আটলান্টিক মহাসাগরের ওপর ছিল। ফলে তিনি খুবই ঘাবড়ে যান।
মারিসা বলেন, আমি প্রথমেই যে ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টের কাছে দৌড়ে যাই, তার নাম রকি (আসল নাম রাগনহিলদুর ইরিক্সদোত্তির)। আমি উন্মাদের মতো ছিলাম, আমি কাঁদছিলাম। আমার পরিবারের জন্য চিন্তায় ছিলাম, যাদের সঙ্গে মাত্রই রাতের খাবার খেয়ে এসেছি। প্লেনের অন্য লোকদের জন্যও চিন্তা হচ্ছিল, নিজের জন্য তো অবশ্যই।
এসময় সেই ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট মারিসার কাছে দৌড়ে যান এবং তাকে অভয় দিয়ে সাহায্য করতে থাকেন। রকি বা রাগনহিলদুর ইরিক্সদোত্তির সিএনএন’কে বলেন, কারও সঙ্গে এমন কিছু ঘটলে তা অবশ্যই চিন্তার বিষয়। কিন্তু এটি আমাদের কাজের অংশ।
এ ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট জানান, তিনি মারিসার জন্য নিরিবিলি কোনো সিট খুঁজছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে পুরো প্লেন ছিল যাত্রীভর্তি।
মারিসা জানান, রকি যখন ফিরে এসে জানালেন, আমার জন্য অন্য সিট পাওয়া যাচ্ছে না, তখন আমি বাথরুমেই থাকার সিদ্ধান্ত নেই। আমি ফ্লাইটের অন্য লোকদের কাছে যেতে চাচ্ছিলাম না।
এরপর সেই বাথরুমের দরজায় নোট ঝুলিয়ে দেওয়া হয়, এটি ‘আউট অব সার্ভিস’। ফ্লাইটের বাকি সময় ওই বাথরুমই ছিল মারিসার সিট।
এ নারী জানান, তিনি প্লেনের বাথরুমে প্রায় তিন ঘণ্টা ছিলেন। এর মধ্যে ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট রকি বারবার তার খোঁজখবর নিয়েছেন এবং প্রচুর খাবার ও পানি এগিয়ে দিয়ে গেছেন।
মারিসা বলেন, আমি হতবুদ্ধি হয়ে ছিলাম যে, পরিবারের সঙ্গে আর ভ্রমণে যেতে পারবো না। আইসল্যান্ডে আমাকে একাই থাকতে হবে। আমি ফেলে আসা ২০টি পরিবারকে নিয়ে চিন্তায় ছিলাম, যারা আমাকে ক্লাসে পেয়েছে।
বাথরুমের ভেতর সময় কাটাতে ইন্টারনেটের ডেটা কেনেন মারিসা এবং নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে টিকটক ভিডিও বানাতে থাকেন। এছাড়া, স্কুলে কল করে তাদেরও বিষয়টি জানিয়ে দেন।
মারিসা জানান, তিনি বাথরুমে খুশি ছিলেন এই ভেবে যে, তাকে প্লেনের বাকি যাত্রীদের মধ্যে থাকতে হচ্ছে না, যাদের ভেতর তার ৭০ বছর বয়সী বাবাও ছিলেন।
আইসল্যান্ডে কোয়ারেন্টাইন
প্লেনটি আইসল্যান্ডে পৌঁছানোর পর সবার শেষে মাটিতে পা রাখেন মারিসা ও তার পরিবার। তবে তার ভাই ও বাবার শরীরে কোনো উপসর্গ না থাকায় তারা সুইজারল্যান্ডগামী কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার অনুমতি পান। মারিসাকে বিমানবন্দরে আবারও র্যাপিড ও পিসিআর টেস্ট করাতে হয়, যার ফলাফল পজিটিভই আসে।
এরপর স্থানীয় একটি রেড ক্রস হোটেলে মারিসাকে ১০ দিনের জন্য কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে দিনে তিনবার করে দেখেছেন, তাকে খাবার দেওয়া হয়, ওষুধও সহজেই পাওয়া যায়।
মারিসার কথায়, সত্যি বলতে এই অভিজ্ঞতা ভালোই। বিশেষ করে রকি ও আইসল্যান্ডের লোকদের জন্য। এখানে সবাই খুব উদার। এমনকি রকি বড়দিনে উপহারও পাঠিয়েছে।
আইসল্যান্ড এয়ারের ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট রকি বলেন, আমি জানতাম, আইসল্যান্ডে তিনি (মারিসা) একা হয়ে পড়বেন। তাছাড়া, আইসোলেশনে থাকা সত্ত্বেও আপনার যদি এমন কেউ থাকে, যে আপনার জন্য কিছু আনতে পারে, তা চমৎকার। আমি সেই ‘একজন’ হতে চেয়েছিলাম।
গত ৩০ ডিসেম্বর ছিল মারিসার কোয়ারেন্টাইনের শেষ দিন এবং এরপরেই তার সঙ্গে পরিবারের দেখা হওয়ার কথা। পারিবারিক ভ্রমণের শেষ অংশটুকু তারা হয়তো সবাই মিলে আইসল্যান্ড ঘুরে কাটাবেন। কারণ, তাদের যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার ফ্লাইট আগামী ৩ জানুয়ারি ঠিক হয়ে রয়েছে।
মারিসা জানিয়েছেন, তিনি আইসল্যান্ড ছেড়ে যাওয়ার পরেও রকির সঙ্গে দেখা করতে চান। রকিও বলেছেন, তার শিকাগোর ফ্লাইট থাকলে মারিসার সঙ্গে দেখা করে আসবেন।
মারিসার কথায়, এই অভিজ্ঞতা থেকে আমার একটি নতুন বন্ধু হয়েছে। আর ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টদের কতটা কাজ করতে হয় সে সম্পর্কে আমার ধারণাও বদলে গেছে। রকি এবং ফ্লাইট ক্রুরা আমাকে নিয়ে ব্যস্ত ছিল, কিন্তু তাদের অন্য যাত্রীদেরও দেখতে হয়েছে।