প্রেসিডেন্ট পার্কে থাকতে পারবেন না বিদিশা : খালেদ
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
এরশাদের ছোট ছেলে শাহতা জারাব এরিকের দেখভাল নিয়ে মা বিদিশা এরশাদ ও চাচা জি এম কাদেরের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের মধ্যে সামনে এলেন তার দেখভালে গঠিত ট্রাস্টের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান খালেদ আখতার।
এরশাদের ভাতিজা ও সাবেক সামরিক কর্মকর্তা খালেদ প্রেসিডেন্ট পার্কে বিদিশার প্রবেশকে অবৈধ বলছেন। সেখানে তার থাকার কোনো অধিকার নেই বলে দাবি করেছেন তিনি। বারিধারায় এরশাদের বাসভবন প্রেসিডেন্ট পার্কে এখন বিদিশার অবস্থানের কারণে এরিক জানমালের ক্ষতির শঙ্কা জানিয়ে শনিবার সন্ধ্যায় গুলশান থানায় জিডি করেছেন খালেদ আখতার।
এর আগে বিকালে বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য খালেদ আখতার বলেন, ট্রাস্টের নিয়ম অনুযায়ী এরিক এরশাদ তার মা বিদিশাকে নিয়ে প্রেসিডেন্ট পার্কে অবস্থান করতে পারবেন না। এরিকের এখানে চাওয়ার কোনো এখতিয়ার নাই। এরিকের সমুদয় দায়িত্ব ট্রাস্টের। আপনারা অনুসন্ধান করে দেখেন, এটা তার নিজস্ব বক্তব্য না।
গত জুলাইতে মৃত্যুর আগে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তার সমুদয় সম্পত্তি দান করে যান ট্রাস্টে। ছেলে এরিকের দেখভাল করার জন্য এই ট্রাস্ট গঠন করা হয়। ট্রাস্টের সদস্য হিসেবে এরিক আর ভাতিজা খালেদ আখতারকে রাখলেও ভাই জি এম কাদেরকে রাখেননি এরশাদ।
এরশাদের মৃত্যুর পর এরিকের দেখভাল ঠিকমতো হচ্ছে না অভিযোগ এনে গত ১৪ নভেম্বর বিদিশা চলে আসেন প্রেসিডেন্ট পার্কে। এরপর থেকে বারিধারার দূতাবাস রোডের এই বাড়িতেই ছেলের সঙ্গে থাকছেন তিনি।
বিদিশা বলছেন, প্রেসিডেন্ট পার্কের কর্মীরা এরিকের উপর ‘শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন’ করছেন এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি ছেলের কাছে ছুটে আসেন। ‘নিরাপত্তাহীনতায়’ ভুগতে থাকা এরিক এরশাদও তার মায়ের সাথে থাকবেন জানিয়ে গত ১৮ নভেম্বর গুলশান থানায় এক জিডি করেন।
এরপর গত শুক্রবার প্রেসিডেন্ট পার্কে এক সংবাদ সম্মেলনে বিদিশা অভিযোগ করেন, ভাতিজার দেখভালের জন্য নয়, এরিকের সম্পত্তি ভোগদখল করার জন্যই জি এম কাদের ‘রাজনীতি করছেন’।
তার জবাবে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দেন জি এম কাদের। এর পরদিন বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে এলেন এরিকের দেখভালের দায়িত্বে থাকা ট্রাস্টের সদস্যরা। বিদিশার প্রেসিডেন্ট পার্কে ঢুকে পড়াকে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশ’ আখ্যা দেন ট্রাস্টের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান খালেদ আখতার।
তিনি বলেন, বিদিশার এ প্রবেশ অনধিকার প্রবেশ, বেআইনি। সেখানে (প্রেসিডেন্ট পার্কে) তাকে ঢোকানোর কোনো অধিকার এরিকের নাই। ট্রাস্টের যে ডকুমেন্ট, তার বাবা সে অধিকার তাকে দিয়ে যায় নাই। অন্যখানে থাকুক গে, এখানে থাকবে না।
এরিকের দেখভালের দায়িত্ব ট্রাস্টের। ট্রাস্ট ডিসিশন নেবে, এখানে কে থাকবে। এরিক যদি মাকে নিয়ে থাকতে চায়, তবে অন্যখানে থাকতে পারবে, কিন্তু এখানে থাকতে পারবে না।
এ সময় তার পাশে থাকা ট্রাস্টি বোর্ডের আরেক সদস্য মো. জাহাঙ্গীরও এই বক্তব্যের সমর্থন জানাচ্ছিলেন। বনানীর এই কার্যালয়ে এরশাদের জিনিসপত্র দেখেশুনে রাখতেন তিনি। চার সদস্যের ট্রাস্টের অপরজন এরশাদের আপন চাচাত ভাই শামসুজ্জামান মুকুল।
গুলশান থানায় জিডির কথা তুলে ধরে খালেদ বলেন, ট্রাস্টের উক্ত সম্পত্তিতে বিদিশা সিদ্দিকের প্রবেশ করার আইনগত কোনো অধিকার নাই। একজন অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে অবস্থান করে বিদিশা সিদ্দিক জাতীয় পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান সম্পর্কে অনাকাঙ্ক্ষিত ও মানহানিকর বক্তব্য দিয়ে আসছে। শুধু তাই নয়, তিনি এরিক এরশাদকে প্রভাবিত করে তাকে দিয়েও অনাকাঙ্ক্ষিত বক্তব্য প্রচার করে আসছেন।
জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে সম্পত্তি লোভের যে অভিযোগ বিদিশা করেছেন তার জবাবে খালেদ আখতার বলেন, সম্পত্তি দখল ও অপব্যবহারের করার কোনো সুযোগ নাই। ট্রাস্টে পরিষ্কার করে দেওয়া আছে। এটা কেউ বিক্রি ও হস্তান্তর করতে পারবে না। এমনকি এরিকও এটা পারবে না। তাহলে অপব্যবহার করার সুযোগ থাকল কোথায়? জি এম কাদের কোথায় দখল করতে গেল?
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একবার অভিভাবকত্বের মামলা করে বিদিশা হেরে গেছে। এখন যদি সে মা হিসেবে আবার আইনের আশ্রয় নেয়, তাহলে আমরা দেখব আইনিভাবে পরবর্তী পদক্ষেপ কী নেওয়া যায়।
এখনই আগাম বলা যাচ্ছে না। আইন যদি বলে, বিদিশা তার ছেলের সাথে থাকবে, তাহলে সেখানে তো আমাদের বক্তব্য আছে। ছেলে এরিকের অভিভাবকত্ব নিয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন বিদিশাও।
সে বিষয়ে খালেদ আখতার বলেন, আমরা মনে করি, আমরা এখনও এরিকের অভিভাবক। বিদিশা এখন সাময়িক অবস্থান করছেন। সেটার তো কোনো আইনগত ভিত্তি নাই। এখন অভিভাবকত্ব নিয়ে তারা যদি আইনের দিকে যায়, আমরা মোকাবেলা করব।
২০০৫ সালে এরশাদ ও বিদিশার বিবাহ বিচ্ছেদের পর ২০০৯ সালে এরিকের অভিভাবকত্বের দাবিতে আদালতে যান বিদিশা। পরে ২০১১ সালে আসে রায়। সে রায়ে হেরে যান বিদিশা। অটিস্টিক এরিক বড় হতে থাকেন এরশাদের প্রেসিডেন্ট পার্কে।
এরশাদ মারা যাওয়ার আগে এরিকের নামে এফডিআর, বারিধারার দূতাবাস রোডের প্রেসিডেন্ট পার্ক, গুলশানে একটি আবাসিক ফ্ল্যাট, রংপুরের পলী নিবাস, একটি কোল্ড স্টোরেজ, কামাল আতাতুর্ক এভিনিউতে ইউএই মার্কেটে একটি দোকান রেখে গেছেন। খালেদ আখতার জানান, এই সম্পত্তির অর্থমূল্য ’৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা।’