January 20, 2025
জাতীয়

প্রবাসী ভাইদের ভালোর জন্য বলেছি, শেষ কথায় রায়হান

সম্প্রতি কাতারভিত্তিক আল জাজিরা টেলিভিশন চ্যানেলের একটি প্রতিবেদনে সাক্ষাৎকার দেন নারায়ণগঞ্জের রায়হান কবির। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় মালয়েশিয়া সরকারের নেওয়া পদক্ষেপে সেখানকার অভিবাসীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।

এটি প্রচারিত হওয়ার পর রায়হানকে গ্রেফতার করে মালয়েশিয়া পুলিশ। রায়হান নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন বন্দরের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের শাহী মসজিদ এলাকার শাহ আলমের ছেলে। শাহ আলম একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন।

রোববার (২৬ জুলাই) রাতে সঙ্গে কথা হয় রায়হানের বাবার। দীর্ঘ আলোচনায় তিনি জানান, মালয়েশিয়ায় তার ছেলের জীবনযাপন এবং প্রবাসে তার নানা ভূমিকার কথা।

তিনি বলেন, ‘২০১৪ সাল থেকে মালয়েশিয়ায় থাকে রায়হান। ছয় বছরে চারবার দেশে এসেছে সে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের রোজার ঈদে দেশে আসে সে। এর মধ্যে তার সঙ্গে আমাদের ফোনেই যোগাযোগ হতো। সে অনলাইনে ভয়েস মেসেজ দিতো, আমি শুনে তাকে রিপ্লাই দিতাম। আমিতো অতো টাইপ করতে পারি না। এর মধ্যে ওই সাক্ষাৎকার প্রচার হওয়ার পর থেকে তার সঙ্গে এক সপ্তাহ ধরে যোগাযোগ করতে পারিনি। তাকে পাচ্ছিলাম না ফোনে। পরে মালয়েশিয়ায় থাকা আমার এক ভাগ্নের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সে ওই সাক্ষাৎকার এবং এতে ওর চাকরি চলে যাওয়া ও আত্মগোপনে থাকার বিষয়টি জানায়। এতে আমরা খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই। ওর মা এখনো সারাদিন কান্না করে আর জানতে চায় তার ছেলে কেমন আছে। এখন অনেক কষ্ট করেও ওখানের কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। সরকার যদি চায় তাহলে আমাদের সন্তানকে আমরা কাছে পেতে পারি। মানুষ আমাদের বলছে তারা আমাদের পাশে আছে, আমার ছেলে নাকি সত্য বলতে গিয়েই গ্রেফতার হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিংবা মালয়েশিয়া দূতাবাস কোথাও যোগাযোগ করতে পারছি না আমরা। তাকে নাকি দু’দিন পর আদালতে নেওয়া হবে। ’

‘গত বৃহস্পতিবার তার সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয়েছিল। এখন তো সে জেলে তাই জানি না কেমন আছে। শেষ কথার সময় বলেছিল, বাবা ভালো আছি, চিন্তা করো না। তোমরা যেমন আমার জন্য কষ্ট করছো, তেমনি আমিও প্রবাসী ভাইদের জন্য কথা বলেছি। তাদের যেন ভালো হয়, তারা যেন ভালো থাকতে পারে সেজন্য আমি কথা বলেছি। ’

রায়হান পরোপকারী ছিলেন জানিয়ে তার বাবা বলেন, ‘সে দেশের মানুষের জন্য অনেক কিছু করতো বলে শুনেছি। কেউ মালয়েশিয়া গিয়ে না খেতে পেলে তাকে খাবার দিতো, থাকতে দিতো। সে অনেককে কাজও যোগাড় করে দিয়েছে। দেশে থাকলেও কেউ বিপদে পড়লে নিজের সবটুকু দিয়ে সাহায্য করতে চেষ্টা করতো সে। ’

২০১৩ সালে সরকারি তোলারাম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ২০১৪ সালে মালয়েশিয়া যান রায়হান। সেখানেই বিএ পাস করেন তিনি। সেখানে পার্ট টাইম জব করে নিজের লেখাপড়ার খরচ বহনের পাশাপাশি বাড়িতেও কিছু টাকা পাঠাতেন। জানুয়ারিতে সেখানকার একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি পান তিনি। কোম্পানি থেকে তাকে গাড়ি ও থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম বেতন পাওয়ার পর লকডাউনে বেতন বন্ধ হয়ে যায় তার।

সম্প্রতি আল জাজিরা টিভির একটি প্রতিবেদনে সাক্ষাৎকার দেন রায়হান। এরপর তাকে খুঁজছিল মালয়েশিয়া পুলিশ। ১২ জুলাই মালয়েশিয়া পুলিশের মহাপরিদর্শক আব্দুল হামিদ বাবর জানান, কাতারের আল জাজিরা টিভিতে সাক্ষাৎকার দেওয়ায় বাংলাদেশি নাগরিক রায়হান কবিরের ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করা হয়েছে। তাকে এখন মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে। তারপর ফেরত পাঠানো হবে।

এদিকে গ্রেফতার হওয়া এড়াতে আত্মগোপনে চলে যান রায়হান। পরে ২৪ জুলাই তাকে গ্রেফতার করে মালয়েশিয়া পুলিশ।

শুধু সাক্ষাৎকার দেওয়ায় বাংলাদেশি নাগরিক রায়হানকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে খোঁজা, ওয়ার্ক পারমিট বাতিল এবং পরে গ্রেফতার করার বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যেই উদ্বেগ জানিয়েছে অভিবাসী বিষয়ক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো। দেশে তার পরিবারও গভীর উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে। এ ঘটনায় মানবাধিকার কমিশনও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *