প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চান রিফাতের বাবা
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ছেলে হত্যার বিচার চেয়েছেন শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফের বাবা আ. হালিম দুলাল শরীফ। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমি একটু সাক্ষাৎ করতে চাই। তার কাছে ছেলে হারানোর যন্ত্রণার কথা বলতে পারলে এটা হবে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। একমাত্র পুত্রসন্তান হারিয়ে আমি আজ দিশেহারা। যদি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একটু কথা বলার সুযোগ পেতাম, যদি প্রাণ খুলে আমার মনে জমা কষ্টের কথা এই মমতাময়ী মা-কে জানাতে পারতাম, তবে কিছুটা শান্তি পেতাম।’ গতকাল শনিবার (২৯ জুন) দুপুরে বরগুনা প্রেস ক্লাব চত্বরে কথাগুলো বলেন ছেলের শোকে মুহ্যমান আ. হালিম দুলাল শরীফ।
দুলাল শরীফ বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা আমার সব শেষ করে দিলো; আমার আর কিছুই রইলো না। আগামী দিনগুলোতে আমি কী নিয়ে বাঁচবো? আলাহ, তুমি এ কোন শাস্তি দিলা আমাকে।’ তিনি বলেন, ‘যে সন্ত্রাসীরা আমার ছেলেকে মেরেছে, তারা এখনও গ্রেফতার হয়নি। আমার ছেলেকে তো আর ফিরে পাবো না। কিন্তু যে সন্ত্রাসীরা আমার ছেলেকে এভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে, আমি তাদের ফাঁসি চাই। চারদিন অতিবাহিত হলেও আজও হামলায় সরাসরি অংশ নেওয়া নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজীকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। আমি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করবো, যত দ্রুত সম্ভব আমার ছেলের হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনুন।’
দুলাল শরীফ আরও বলেন, ‘বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ যে কত ভারী, যে ব্যক্তির কাঁধে সন্তানের লাশ উঠেছে, সে ছাড়া আর কেউ এটা বুঝতে পারবে না; পৃথিবীতে এরচেয়ে বড় শাস্তি মানুষের জন্য আর কিছু হয় না।’
তিনি বলেন, ‘বরগুনার এই কুখ্যাত খুনিচক্র শুধু আমার কলিজার টুকরো রিফাতকেই কেড়ে নেয়নি; আমাকেও পঙ্গু করে ছেড়ে দিয়েছে। আমি দীর্ঘ ১০ বছর ধরে হৃদরোগে আক্রান্ত। আমার হার্টে রিং পরানো, জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বেঁচে আছি। অন্যদিকে, আমার স্ত্রী ডেইজি আক্তার নানা রোগেভোগে গত ১৮ বছর ধরে শয্যাশায়ী। একমাত্র মেয়ে ইসরাত জাহান মৌ কলেজে অনার্সে পড়ে। পরিবারের একমাত্র ভরসা, একমাত্র অবলম্বন ছিল রিফাত। সেই ছেলেকে ওরা ভরদুপুরে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করলো। আমার ভবিষ্যৎ কী, কোথায় আশ্রয় নেবো, কাকে অবলম্বন করে বেঁচে থাকবো?’
উলেখ্য, বুধবার (২৬ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে রিফাত শরীফকে। তার স্ত্রী আয়েশা আক্তার মিন্নি হামলাকারীদের সঙ্গে লড়াই করেও তাদের দমাতে পারেননি। একাধারে রিফাতকে কুপিয়ে বীরদর্পে অস্ত্র উঁচিয়ে এলাকা ত্যাগ করে হামলাকারীরা। তারা চেহারা লুকানোরও কোনও চেষ্টা করেনি। গুরুতর আহত রিফাতকে এদিন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে মূল আসামি নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজীকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।