প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত প্রণোদনার নামে অভিনব প্রতারণার ফাঁদ
দ. প্রতিবেদক
করোনা পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত দরিদ্রদের ২৫০০ টাকার প্রণোদনার নামে ভুয়া ওয়েবসাইট খুলে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে যশোর থেকে তিন যুবককে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৬। বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় নগরীর লবণচরাস্থ র্যাব-৬ সদর দপ্তরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- যশোর সদরের হামিদপুরের মোঃ আনোয়ার হোসেনের ছেলে শাহরিয়ার আজম আকাশ (২০), চাঁদপাড়া এলাকার মোঃ মশিয়ার রহমানের ছেলে মোঃ মুশফিকুর রহমান (২১) ও একই থানাধীন হামিদপুরের মোঃ আব্দুল লতিপের ছেলে মোঃ আহসান কবীর রনি (২০)। তাদের কাছ থেকে প্রতারণায় ব্যবহৃত কম্পিউটারসহ ইলেক্ট্রিক যন্ত্রাংশ ও বিভিন্ন ডিভাইস, মোটরসাইকেল ও অর্থ জব্দ করা হয়েছে।
র্যাব জানিয়েছে, যশোরের শার্শার গোগা এলাকায় বিকাশের মাধ্যমে একজন প্রতারক ওয়েবসাইট ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে বলে গোপন খবরের ভিত্তিতে বুধবার জানতে পারে র্যাব-৬। বুধবার দিবাগত গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে বিকাশের মাধ্যমে প্রতারণাকারী শাহরিয়ার আজম আকাশকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে দু’জন সহযোগী মোঃ মুশফিকুর রহমান ও মোঃ আহসান কবীর রনি পৃথক স্থান থেকে গ্রেফতার করে র্যাব।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা র্যাবকে জানিয়েছে, তারা অনেক আগে থেকেই ওয়েব ডিজাইনিংয়ের কাজ করতো। কিছুদিন তারা বিভিন্ন ওয়েবসাইট নিয়ে কাজ করার পর মুভি/সিনেমা ডাউনলোড করার একটি ওয়েবসাইট ডিজাইন করে। সেখানে গ্রাহকদের ইউসি ব্রাউসার প্রমোট করে ডাউনলোড করানো এবং অনলাইন বিজ্ঞাপন দেয়ার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতো। পরবর্তীতে ইউসি ব্রাউজারের মালিকানা পরিবর্তন হওয়ায় তারা ফেইসবুকে নিজস্ব পেইজ প্রমোট করা শুরু করে। পেইজ প্রমোট করার সময় তারা বুঝতে পারে, প্রমোটিংয়ের সময় গ্রাহকদেরকে দৈনিক টাকা উপার্জনের প্রলোভন দেখিয়ে খুব তাড়াতাড়ি পেইজের লাইক বাড়ানো যায়। এ থেকে তারা বুঝতে পারে পেইজ প্রমোটিংয়ের সময় গ্রাহকদের বোকা বানিয়ে গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য খুব সহজেই সংগ্রহ করা যায়। এই বিষয়টি থেকেই ফেসবুকে বিনামূল্যে ৫০০টাকা পাওয়া যাবে এধরনের একটি পোষ্ট দেখে তারা বিকাশের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করে।
এরই মধ্যে শাহরিয়ার আজম আকাশ তার অনেক আগে থেকেই Daraz.com এ রেজিস্ট্রেশন করা সেলার এ্যাকাউন্ট থেকে Free fire নামক একটি অনলাইন ভিক্তিক গেইম’র ফি কারেন্সি ডায়মন্ড বিক্রি করা শুরু করে। প্রাথমিকভাবে তারা প্রায় ২৮ হাজার টাকার ডায়মন্ড বিক্রি করে। Daraz.com ওই টাকা শাহরিয়ার আজম আকাশের দেয়া একটি এ্যাকাউন্টে পরিশোধ করে। এরপর তারা তাদের আগের ক্রয়কৃত ডোমেইন ব্যবহার করে একটি প্রতারণার ওয়েবসাইট ডিজাইন করে। যার ডোমেইন নেইম 2500taka.online। সেখানে তারা মাঝে মাঝেই ডোমেন নেইম পরিবর্তন করে, যাতে করে পেইজ প্রমোটিংয়ের সময় তার এই প্রতারণা সহজেই কেউ শনাক্ত করতে না পারে। ওই 2500taka.online পেইজটিতে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত করোনা পরিস্থিতিতে দরিদ্রদের মাঝে ২৫০০টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের প্রেরণ করা হবে, এমন ঘোষণার মতো একটি মহতি উদ্যোগকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে প্রতারণার ফাঁদ পাতে।
প্রতারণামূলক পেইজটিতে বলা হয়- করোনা পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ২৫০০ টাকা বিকাশে দেয়া হচ্ছে, যার জন্য কিছু তথ্য পূরণ করতে হবে। ওই তথ্যের মধ্যে নাম ঠিকানা ছাড়াও বিকাশের জন্য ব্যবহৃত ফোন নম্বর এবং পিন কোড দেয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। তারা সার্বক্ষনিক এই কাজগুলো মনিটর করতে থাকতো। প্রতারণামূলক ওয়েবসাইটে গ্রাহক তথ্য পূরণ করার সাথে সাথেই তারা কম্পিউটারে গ্রাহকের বিকাশ নম্বর ও পিন কোড পেয়ে যেতো। বিকাশ নম্বর ও পিন কোড পাওয়ার সাথে সাথে তারা কম্পিউটার থেকে Daraz.com এ তাদেরই সহযোগী শাহরিয়ার আজম আকাশের খোলা অনলাইন শপ থেকে কেনাকাটা করতো। এসময় পিন কোড দেয়ার পর বিকাশ ব্যবহারকারীর মোবাইলে একটি OTP যেত। এসময় উক্ত পেইজটি থেকে উক্ত গ্রাহকে ২৫০০টাকা পেতে হলে গ্রাহকের মোবাইলে আসা OTP টি ওই প্রতারণামূলক পেইজের নির্ধারিত বক্সে প্রেরণ করতে বলা হতো। প্রতারণামূলক পেইজের ওয়েবসাইটে ঙঞচ দেয়ার সাথে সাথেই তারা OTP ব্যবহার করে Daraz.com এ তাদেরই নিজস্ব অনলাইন শপ থেকে কেনাকাটা সম্পন্ন করতো। কেনাকাটা সম্পন্ন হলে সে নির্ধারিত সময় পর Daraz.com কে পণ্য ডেলিভারী করা হয়েছে। তার রিসিভিং এ্যাকাউন্ট থেকে রিসিভ করা হয়েছে দেখাতো, ফলশ্রুতিতে উধৎধু.পড়স তার পণ্যের মূল্য Daraz.com এর নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী তাদের দেয়া এ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে নিতো। গত ২/৩ মাসে এই রূপ প্রতারণার ফাঁদ পেতে তারা প্রায় ১৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে র্যাব জানায়।
তাদের কাছ থেকে তিনটি ল্যাপটপ, একটি সিপিইউ, একটি মনিটর, ৫টি মোবাইল ফোন, ৮টি সীমকার্ড ও একটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় যশোর সদর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা প্রক্রিয়াধীন।
দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/এম জে এফ