প্রকাশ্য মতপার্থক্য বাড়ছে ১৪ দলে
নানা টানাপড়েন ও মতপার্থক্যের মধ্য দিয়েই চলছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল। বিশেষ করে সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপে জোটের অন্য দলগুলো একমত হতে পারছে না।
বরং বিভিন্ন ইস্যুতে প্রকাশ্য মতপার্থক্য বাড়ছে।
এর মধ্যে কোনো কোনো দল প্রকাশ্যে সরকারের কিছু সিদ্ধান্তের সমালোচনা করছে এবং এর বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছে ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
সম্প্রতি জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। এর আগে ভোজ্যতেলের সংকটসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি নিয়েও সোচ্চার হয়ে ওঠে ১৪ দলের শরিকরা।
জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে এ জোটের কোনো কোনো দলের পক্ষ থেকে জোর প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। জোটের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ বিক্ষোভ কর্মসূচিও পালন করেছে। সরকারি দলের নেতৃত্বাধীন জোটের অংশীদার দলগুলোর এ অবস্থানের ফলে জোটের সম্পর্ক নিয়েও ভিন্নমত এসেছে। দীর্ঘদিন ধরে এটাকে আদর্শিক জোট বলা হলেও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এর সঙ্গে আদর্শের কোনো বিষয় নেই বলে মন্তব্য করেছেন।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণার পরপর ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর পক্ষ থেকে বলা হয়, এমনিতেই মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি জনজীবনে ত্রাহী অবস্থা, তার ওপর এ মূল্য বৃদ্ধি জনজীবনে কঠিন সংকট তৈরি করবে। এর অভিঘাত পড়বে কৃষি, পরিবহন ও দৈনিন্দন জীবনে। বিশ্বে যখন জ্বালানি পণ্যের মূল্য কমছে, তখন এ মূল্য বৃদ্ধি কার স্বার্থে? বস্তুত সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে যে ঋণ চেয়েছে, তাদের সেই শর্ত পূরণের জন্যই জ্বালানি খাতের ভর্তুকি প্রত্যাহারের কৌশলী ব্যবস্থা হিসেবে এ মূল্যবৃদ্ধি ঘটিয়ে জনগণের ওপর দায় চাপানো হলো। এ নিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টি বিক্ষোভ সমাবেশও করেছে।
১৪ দলের আরেক শরিক জাসদও এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে। এতে দলটির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ানো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি অর্থনীতি ও জনজীবনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে।
জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে ১৪ দলের শরিক কোনো কোনো দলের আন্দোলন প্রসঙ্গে ১১ আগস্ট সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, এটা তাদের বিষয়। তাদের সঙ্গে জোট হয়েছিলো নির্বাচনী জোট। সেখানে আদর্শের কোনো বিষয় নেই।
ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যে ১৪ দলের শরিক নেতারা অনেকেই অবাক হয়েছেন। তিনি ‘হঠাৎ করে’ কেন এই ধরনের কথা বললেন তা ‘বোধগম্য নয়’ বলে তারা মন্তব্য করেন। তবে এ বিষয়ে তারা সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ১৪ দলের ঐক্যের স্বার্থে বিষয়টি এড়িয়ে চলার চেষ্টাও করছেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, জানি না তিনি (ওবায়দুল কাদের) হঠাৎ করে এ কথা কেন বললেন। ১৪ দল যে আদর্শিক জোট তা ইতিহাস থেকেই জানা আছে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠা ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ করার লক্ষ্য নিয়ে ও ঘোষণা দিয়ে ২৩ দফার ভিত্তিতে এ আদর্শিক জোট হয়েছিল। বাংলাদেশ এখনো সাম্প্রদায়িকতা জঙ্গিবাদ মুক্ত নয়। ১৪ দল এখনও আছে, যে আদর্শের ভিত্তিতে জোট গড়ে উঠেছিল সেটাকে সামনে নিয়ে এগিয়ে যাবে।
এ বিষয়ে কমিউনিস্ট কেন্দ্রের যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. অসিত বরণ রায় বাংলানিউজকে বলেন, তিনি (ওবায়দুল কাদের) ভুল বলেছেন। অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ ২৩ দফার ভিত্তিতে ১৪ দল গড়ে উঠেছিল। একটি আদর্শকে ধারণ করেই এ জোট গড়ে উঠেছিল। আমরা এখনো এটাকে আদর্শিক জোটই বলি।
বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০২২