November 24, 2024
লাইফস্টাইল

পোড়া ক্ষত ও দাগ সারানোর সেরা ঘরোয়া উপায়

দুর্ঘটনাবশত আগুনে পুড়ে যাওয়ার ঘটনা অনেকের সঙ্গেই ঘটে। যদিও এমন ঘটনা মোটেও কারো কাম্য নয়। শরীরের পোড়া ক্ষত কতটা তা দ্বারা এর তীব্রতা অনুমান করেন চিকিৎসকরা।

যেমন- প্রথম ডিগ্রি পোড়াকে সবচেয়ে কম গুরুতর বলে মনে করা হয়, কারণ এতে শুধু ত্বকের বাইরের স্তর প্রভাবিত হয়। এক্ষেত্রে হালকা ব্যথা, লালভাব ও ফোলাভাবের সৃষ্টি হয়।

অন্যদিকে দ্বিতীয় ডিগ্রি পোড়া ত্বকের গভীর স্তর পর্যন্ত পৌঁছায়। ফলে ফোসকা ও সাদা হয়ে যায় ত্বক। আর তৃতীয়-ডিগ্রি পোড়া ত্বকের সব স্তরের ক্ষতি করে, যখন চতুর্থ-ডিগ্রি পোড়া হয় তখন জয়েন্ট ও হাড় পর্যন্ত পুড়ে যেতে পারে। তখন পোড়া রোগীকে বাঁচানো মুশকিল হয়ে ওঠে।

চিকিৎসকরা তৃতীয় ও চতুর্থ ডিগ্রি পোড়াকে চিকিৎসা জরুরি হিসাবে বিবেচনা করেন। তবে প্রথম ও দ্বিতীয় ডিগ্রি অর্থাৎ ৩ ইঞ্চির কম ব্যাসের পোড়ার চিকিৎসা ঘরেও করা যায়।

হালকা পোড়া সম্পূর্ণরূপে সারতে সাধারণত এক বা দুই সপ্তাহ সময় লাগে। এক্ষেত্রে ত্বকে তেমন দাগেরও সৃষ্টি হয় না। পোড়া চিকিৎসার লক্ষ্য হলো ব্যথা কমানো, সংক্রমণ প্রতিরোধ করা ও ত্বককে দ্রুত নিরাময় করা।

কিছু উপাদান ও কৌশল আছে যার মাধ্যমে ঘরেই পোড়া ক্ষত ও দাগের চিকিৎসা করা সম্ভব। জেনে নিন করণীয়-

>> কোথাও পুড়ে গেলে যত দ্রুত সম্ভব ২০ মিনিটের জন্য ওই স্থানে পানি ব্যবহার করা উচিত। তারপর পোড়া স্থানটি স্যাভলন বা ডেটল দিয়ে হালকাভাবে পরিষ্কার করে ধুয়ে ফেলতে হবে।

>> শীতল কম্প্রেস বা পরিষ্কার ভেজা কাপড় পোড়া জায়গায় রাখলে ব্যথা ও ফোলাভাব দ্রুত কমে যায়। ৫-১৫ মিনিট পরপর কম্প্রেস প্রয়োগ করতে পারেন। অতিরিক্ত ঠান্ডা কম্প্রেস ব্যবহার করবেন না।

>> অ্যান্টিবায়োটিক মলম ও ক্রিম সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। আপনার পোড়া স্থানে ব্যাসিট্রাসিন বা নিওস্পোরিনের মতো একটি অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল মলম লাগান। তারপর ক্লিং ফিল্ম বা জীবাণুমুক্ত, নন-ফ্লফি ড্রেসিং বা কাপড় দিয়ে ঢেকে দিন।

>> অ্যালোভেরাকে ‘বার্ন প্ল্যান্ট’ বলা হয়। গবেষণায় প্রমাণ দেখানো হয় যে, অ্যালোভেরা প্রথম থেকে দ্বিতীয় ডিগ্রি পোড়া নিরাময়ে কার্যকর। এটি প্রদাহবিরোধী, রক্তসঞ্চালনকে উৎসাহিত করে ও ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিকে বাধা দেয়। পোড়ার চিকিৎসায় তাজা অ্যালোভেরার রস ব্যবহার করুন। স্বস্তি মিলবে।

>> মধুতে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য আছে। ছোটখাটো পোড়ার সমস্যার সমাধান করে মধু। এতে থাকা অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান পোড়ার চিকিৎসায় বিশেষ কার্যকরী।

>> সরাসরি সূর্যের আলোতে পোড়া ক্ষত কখনো খোলা রাখবেন না। কারণ পোড়া ত্বক সূর্যের প্রতি খুব সংবেদনশীল।

>> পোড়া ক্ষতের স্থানে ফোসকা পড়া স্বাভাবিক বিষয়, কখনো নিজের থেকে সেটি ফাটাবেন না। কারণ ফোসকা ফাটালে সংক্রমণ বাড়তে পারে আক্রান্ত স্থানে। পোড়ার কারণে গুরুতর বা বড় আকারের ফোসকা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

পোড়া স্থানে ভুলেও যা ব্যবহার করবেন না-

>> অনেকেই পোড়ার উপর মাখন ব্যবহার করেন, এটি ভুল। পোড়ার প্রতিকার হিসাবে মাখনের কার্যকারিতা সমর্থন করে এমন কোনও প্রমাণ নেই। মাখন ব্যবহারে পোড়ার ক্ষত আরও খারাপ হতে পারে। কারণ মাখন তাপ ধরে রাখে ও ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া পোড়া ত্বককে সংক্রামিত করতে পারে।

>> অনেক স্থানেই প্রচলিত আছে, বিভিন্ন তেল সবকিছু নিরাময় করে। তবে ভুলেও কখনো পোড়া স্থানে নারকেল তেল, জলপাই তেল কিংবা রান্নার তেল ব্যবহার করবেন না। কারণ সব ধরনের তেলই তাপ ধরে রাখে, ফলে ত্বক আরও পুড়ে যেতে পারে।

যদিও ল্যাভেন্ডার তেল পোড়া নিরাময়ে সাহায্য করে বলে জানা গেছে। তবে এখনো বিষদ আকারে গবেষণার প্রয়োজন আছে।

>> আরেকটি লোককথা হলো, পোড়া স্থানে ডিমের সাদা অংশের ব্যবহার। তবে এর ফলে আক্রান্ত স্থানে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। আবার ডিম অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়ারও সৃষ্টি করতে পারে।

>> কোথাও পুড়লেই টুথপেস্ট লাগাবেন না। টুথপেস্ট পোড়াকে আরও যন্ত্রণা দেয়। ফলে সংক্রমণের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। এছাড়া এটি জীবাণুমুক্তও নয়।

>> পোড়া স্থানে কখনো বরফ বা খুব বেশি ঠান্ডা পানি ব্যবহার করবেন না। এতে পোড়া স্থানের ক্ষত আরও বেড়ে যেতে পারে।

কখন ডাক্তার দেখাবেন?

>> পোড়ার স্থান ৩ ইঞ্চি ব্যাসের বেশি হলে
>> মুখ, হাত, নিতম্ব বা কুঁচকির অংশ পুড়ে গেলে
>> ক্ষত বেদনাদায়ক বা দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে উঠলে
>> শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে
>> যদি মনে করেন তৃতীয়-ডিগ্রি বার্ন হয়েছে (ক্ষত স্থান সাদা হয়ে গেলে)।

এসব লক্ষণ দেখলে দ্রুত রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *