January 20, 2025
আন্তর্জাতিক

পূর্ব ভূমধ্যসাগরে উত্তেজনা বাড়ছেই

সাম্প্রতিক সময়ে পূর্ব ভূমধ্যসাগরের বিতর্কিত এলাকাকে কেন্দ্র করে গ্রিস এবং তুরস্কের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। দু’পক্ষ একে অন্যের সঙ্গে এ নিয়ে বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েছে।

গত ১২ আগস্ট গ্রিক দ্বীপ কাস্তেলোরিজো উপকূলে তুরস্ক তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে ওরাক রেইস নামে একটি জাহাজ পাঠানোর পর থেকেই নতুন করে উত্তেজনা দেখা দেয়। জাহাজটির নিরাপত্তার দায়িত্বে রাখা হয়েছে তুর্কি নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজের ছোটখাটো একটি বহর।

গ্রিসও তুর্কিদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণে ওই অঞ্চলে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে। ফলে দুই পক্ষের মধ্যে কিছুটা সংঘর্ষ বেধে যায়। গ্রিস এ ঘটনাকে দুর্ঘটনা বললেও তুরস্ক এটিকে উসকানি বলে দাবি করেছে।

১৯৯৬ সালের পর জনশূন্য দ্বীপটিতে এই দুই ন্যাটো মিত্র দেশের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ সংঘাতের সূত্রপাত হয়েছে। এদিকে, পূর্ব ভূমধ্যসাগর এলাকায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান এবং উপকূলীয় এলাকা নিয়ে গ্রিস এবং সাইপ্রাসের সঙ্গে দ্বন্দ্বে তুরস্ক অনেকটা একা হয়ে পড়েছে। তুরস্কের এই অনুসন্ধান কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে গ্রিসের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

এদিকে, গ্রিসের প্রতি প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়ে ফ্রান্স ওই এলাকায় তুরস্ককে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান না করার আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে ভূমধ্যসাগরে গ্রিসের নৌবাহিনীর সঙ্গে মহড়ায় অংশ নিতে দু’টি জাহাজ পাঠিয়েছে ফ্রান্স।

গ্যাস-সমৃদ্ধ পূর্ব ভূমধ্যসাগরে অনুসন্ধান নিয়ে আশপাশের দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়। তুরস্ক, গ্রিস, সাইপ্রাস, ইসরায়েলের মধ্যে এক দশকের বেশি সময় ধরেই বিরোধ চলছে।

বেশ কিছু দেশ ওই অঞ্চলে আঞ্চলিক শক্তির কেন্দ্রে পরিণত হওয়ার চেষ্টা করছে। একই সঙ্গে রাশিয়ার গ্যাসের কৌশলগত বিকল্প এবং ইউরোপীয়ান বাজার সরবরাহে সহায়তার চেষ্টা করছে বিভিন্ন দেশ।

এই উত্তেজনার মধ্যেই পূর্ব ভূমধ্যসাগরের বিতর্কিত এলাকায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। প্রতিপক্ষদের উদ্দেশে তিনি বলেন, পূর্ব ভূমধ্যসাগর এলাকায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমের অধিকার থেকে তুরস্ককে কেউ বঞ্চিত করতে পারবে না।

এরদোয়ান বলেন, তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ইস্যুতে আমরা শতভাগ সঠিক অবস্থানে আছি। যদি আমরা জলদস্যুদের কাছে আত্মসমর্পণ করি তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আমরা মুখ দেখাতে পারব না।

বিতর্কিত ওই এলাকায় গ্রিস এবং তুরস্কের অবস্থান সব সময়ই প্রতিদ্বন্দ্বী। গত নভেম্বরে তুরস্ক এবং লিবিয়ার মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ওই চুক্তিতে সমুদ্রের বিস্তৃত এলাকা দাবি করা হয়েছে যার বিরুদ্ধে আপত্তি তুলেছে গ্রিস। একই সঙ্গে তা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে, গ্রিস এবং তুরস্ককে আলোচনায় আনার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জার্মানি। অপরদিকে, গ্রিস এবং মিসর চলতি মাসের শুরুতে তুরস্ক ও লিবিয়ার মধ্যকার সামুদ্রিক অঞ্চল নিয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর তোড়জোড় শুরু করেছে। এর জবাবে তুরস্ক ওই অঞ্চলে নৌবাহিনীর একটি বহরে ভূমিকম্প-গবেষণা জাহাজ প্রেরণ করেছে।

পূর্ব ভূমধ্যসাগরে তুরস্ককে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছে ফ্রান্স। প্রতিবেশী ন্যাটো সদস্যদের মধ্যে শান্তিপূর্ণ আলোচনার সুবিধার্থে তুরস্কের অনুসন্ধান স্থগিত করা উচিত বলে মনে করে তারা।

লিবিয়া সংঘর্ষের জেরে এমনিতেই ফ্রান্স ও তুরস্কের মধ্যে সম্পর্কের চরম অবনতি হয়েছে। পূর্ব ভূমধ্যসাগরে ফরাসিদের সামরিক উপস্থিতি জোরদারের কারণে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা আরও বেড়ে গেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে বিড়ম্বনার মূল কারণ হচ্ছে মূল্য হ্রাস এবং সাইপ্রাসের কাছে বড় বড় তেল কোম্পানিগুলোর কার্যক্রমে বেশি সময় ক্ষ্যাপণ হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন কোম্পানি নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রেই বিনিয়োগের দিকে জোর দিচ্ছে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *