November 28, 2024
আঞ্চলিকলেটেস্টশীর্ষ সংবাদ

পূরণ হচ্ছে সেই আঁখির স্বপ্ন

দায়িত্ব নিলেন সংসদ সদস্য সালাম মূর্শেদী

দ. প্রতিবেদক
খুলনার রূপসা উপজেলার বাগমারার রূপসা চরের কিশোরী আঁখির (১৭) লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায় দারিদ্র্যের কশাঘাতে। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে তার পরিবার। সেই মেয়েটি করোনা মোকাবিলায় মাস্ক তৈরি ও দরিদ্রদের কাছে কম দামে সেটি বিক্রি করার জন্য পেলো জাতিসংঘের ‘রিয়েল লাইফ হিরো’ স্বীকৃতি।
গত ১৯ আগস্ট বিশ্ব মানবিক দিবস উপলক্ষে চার বাংলাদেশিকে ‘রিয়েল লাইফ হিরো’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ। অন্য তিনজন হলেন ব্র্যাকের স্থপতি রিজভী হাসান, অনুবাদক সিফাত নূর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানভীর হাসান সৈকত।
শনিবার এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সেই আঁখিকে পোশাক খাতের উদ্যোক্তা বানাতে গার্মেন্টস মেশিনারিজ প্রদান করেছেন খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মূর্শেদী। সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত অর্থায়নে ‘সালাম মূর্শেদী সেবা সংঘ’র মাধ্যমে আঁখিকে ফ্যাটলক, ওভার লক, প্লেন, স্টিচ ও কাটিং মেশিনসহ ১৫টি মেশিন প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সালাম মূর্শেদী সেবা সংঘের চেয়ারম্যান মিসেস সারমিন সালাম। এসময় উপস্থিত ছিলেন খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চু, রূপসা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সভাপতি মোঃ কামাল উদ্দিন বাদশা, দিঘলিয়া উপজেলা আ’লীগের সভাপতি খাঁন নজরুল ইসলাম, তেরখাদা উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ শহিদুল ইসলাম, দিঘলিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ মারুফুল ইসলাম, তেরখাদা উপজেলা আ’লীগের সভাপতি এফ. এম. অহিদুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন, তেরখাদা উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মোল্লা আকরাম হোসেন, দিঘলিয়া উপজেলার সামছুন্নাহার।
এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ক্রীড়াবিদ আজাদ আবুল কালাম (মিষ্টার বাংলাদেশ), তেরখাদা ও দিঘলিয়া উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, ফারহানা আফরোজ মনা, নাজমা খাঁন এবং রূপসা, তেরখাদা ও দিঘলিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জোবায়ের হোসেন, সারাফাত হোসেন মুক্তি, এম এ রিয়াজ বাচা, অধ্যাপক আশরাফুজ্জামান বাবুল, ইউপি চেয়ারম্যান ইসাহাক সরদার, ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ কামাল হোসেন বুলবুল, ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ জাহাঙ্গীর শেখ, ইউপি চেয়ারম্যান সাধন অধিকারী, মোঃ মোতালেব হোসেন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পারভেজ হাওলাদার, মোঃ মারুফ, এবিএম কামরুজ্জামান, আবেদা সুলতানা, অলোক চন্দ্র দাস প্রমুখ।
আঁখি বলেন, ‘দরিদ্রদের সহায়তা করার জন্য এত বড় স্বীকৃতি পেয়েছি। তাই সারাজীবন অসহায়দের পাশে থাকতে চাই। ভবিষ্যতে নিজের দোকানের পরিধি আরও বড় করে পরিবারের খরচ মেটানোর পাশাপাশি অসহায় মেয়েদের কাজের সুযোগ দেওয়ার ইচ্ছে আছে।’
বাগমারার রবের মোড় এলাকার মাসুদ মোল্লা ও আনোয়ারা বেগমের দ্বিতীয় মেয়ে আঁখি। পঞ্চম শ্রেণি পাস করা এই কিশোরীর কথায়, ‘করোনা ভাইরাস মহামারির শুরুতে বাজারে মাস্ক পাওয়া যাচ্ছিল না। কিছু দোকানে দাম ছিল চড়া। দরিদ্র্র মানুষেরা সেটি কিনতে পারতো না। কিন্তু করোনা থেকে মুক্ত থাকতে মাস্কই ভরসা। তাই নিজেই মাস্ক বানিয়ে কম দামে বিক্রি করেছি। দরিদ্ররা সেগুলো ব্যবহার করেছেন। অসহায় অনেককে বিনামূল্যে মাস্ক দিয়েছি।’
জানা গেছে, চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় কাজ করার সময় আঁখির বাবা দুর্ঘটনায় শারীরিক ভাবে অক্ষম হয়ে পড়েন। মা চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় কাজ করতেন। কিন্তু তার একার রোজগারে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। বড় বোনের সঙ্গে আঁখি চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণের একটি কারখানায় যোগ দেয়। এ কারণে তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।
দুই বছর আগে ওয়ার্ল্ড ভিশন পরিচালিত ‘জীবনের জন্য’ প্রকল্পের কর্মী আবেদা সুলতানা চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় কাজ করতে দেখেন আঁখিকে। তখন আগ্রহ দেখে মেয়েটিকে সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে আঁখি ওই প্রকল্প থেকে একটি সেলাই মেশিন ও কিছু থান কাপড় পায়। এরপর শুরু হয় তার পোশাক তৈরির গল্প। ঘরে বসেই স্থানীয়দের পোশাক বানিয়ে মাসে গড়ে তিন হাজার টাকা রোজগার করতে থাকে ‘সত্যিকারের এই নায়ক’।

দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ এম জে এফ

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *