পুলিশি হামলার প্রতিবাদে আজ সারাদেশে বিএনপির বিক্ষোভ
দলের নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশি হামলা ও কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযানের প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। এদিকে আজকে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেও তা স্থগিত করেছে দলটি।
বুধবার (৭ ডিসেম্বর) রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠকে বিক্ষোভের সিদ্ধান্ত হয়।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী মহানগর ও জেলা পর্যায়ে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে।
সভায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশের হামলা, হত্যা, গণ-গ্রেফতারের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হয়।
সভায় অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করে পুলিশ প্রশাসনের প্রতি হামলা, গুলি, দমন-নিপীড়ন, গ্রেফতার ও হয়রানি বন্ধের আহ্বান জানানো হয়।
সংঘর্ষের খবরে কার্যালয়ে এসে ঢুকতে পারেননি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ফুটপাতে অবস্থান শেষে রাত ৮টার দিকে চলে যান বিএনপি মহাসচিব।
যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মির্জা ফখরুল বলেন, অন্যায় ও পাশবিকভাবে বিএনপি নেতাদের ওপর হামলা ও আটক করা হয়েছে। পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী অভিযান চালিয়ে ছয় শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিজেরাই ব্যাগে করে বিস্ফোরক এনে এখন মিথ্যে তথ্য দিচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন , সরকারের নীতিনির্ধারকটা নানা উস্কানিমূলক বক্তব্যে বলেছিলেন যে, এমন ঘটনা ঘটাবেন। এটা শুধু বিএনপির ওপর আঘাত নয়, দেশ ও গণতন্ত্রের ওপর আঘাত। সরকার পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।
ফখরুল বলেন, পুলিশ সব ডকুমেন্ট নিয়ে গেছে লাইট, সিসি ক্যামেরা ভেঙেছে। কোনো গণতান্ত্রিক দেশে এমন ঘটনা ঘটতে পারে না।
এদিকে বিএনপির কার্যালয়ে পুলিশ কয়েক ঘণ্টা ধরে অভিযান চালায়। রাত ৮টার দিকে অভিযান শেষে পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে পুলিশ। নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত দুই পাশের রাস্তা বন্ধ রয়েছে। দুই পাশে বিপুলসংখ্যক পুলিশ অবস্থান নিয়েছে।
রাতে বিএনপি কার্যালয়ে অভিযান সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান হলেন হারুন অর রশীদ জানান, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে ১৫টির মতো ককটেল, ১৬০ বস্তা চাল, নগদ টাকা ও বিপুল পরিমাণ পানি উদ্ধার করা হয়েছে।
আলোচিত এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বিএনপির কার্যালয়ের ভেতর থেকে ১৫টির মতো অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করা করা হয়েছে। ১৬০ বস্তা চাল পাওয়া গেছে। দুই লাখের মতো নগদ টাকা ও বিপুল পরিমাণ পানির বোতল উদ্ধার করা হয়েছে।
হারুন বলেন, ৩০০ জনের মতো লোক আটক করা হয়েছে। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে। আজকে পুলিশের ওপর হামলা, বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। যাচাই বাছাই করে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন পুলিশ নিজেরা ককটেল নিয়ে গেছে। এমন অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিবি প্রধান বলেন, এগুলো ভিত্তিহীন কথা। আপনাদের (গণমাধ্যম) সামনে আমাদের লোকজন কার্যালয়ের ভেতরে গিয়ে এগুলো উদ্ধার করেছে।
এদিকে অভিযানের পরিকল্পনা না থাকলেও সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার পরই সেখানে পুলিশি অভিযান চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার বিশ্বাস।
বুধবার (৭ ডিসেম্বর) রাত পৌনে ৮টার দিকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, অভিযানে অসংখ্য বোমা জব্দ করা হয়েছে। যখন আমরা কার্যালয়টির সামনে অবস্থান নিয়েছি তখন আমাদের উদ্দেশ্য করে বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে। যখন অসংখ্য সাংবাদিক ও আমাদের পুলিশ সদস্যরা আহত হচ্ছে, যখন জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে, আমরা কিন্তু অভিযান চালানোর জন্য এখানে আসিনি কিন্তু যখন আমাদের সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে তখন আমরা অভিযান চালাতে বাধ্য হয়েছি।
এর আগে বুধবার দুপুরে নয়াপল্টন এলাকায় একাধিক সাজোয়া যান, প্রিজন ভ্যান এবং অতিরিক্ত ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করে পুলিশ। বিকেল তিনটায় বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। সংঘর্ষ শেষে গ্রেফতার অভিযান চালায় পুলিশ। সংঘর্ষের ঘটনায় একজন নিহত হয়েছে।