পুলিশি নিপীড়নে কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যু: উত্তাল মিনিয়াপোলিস
যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়াপোলিসে পুলিশের নিপীড়নে এক কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে টানা তৃতীয় দিনের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচিও অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও তুমুল ধ্বংসযজ্ঞের রূপ নিয়েছে।
সোমবার সন্ধ্যায় শ্বেতাঙ্গ এক পুলিশ কর্মকর্তার হাতে ৪৬ বছর বয়সী জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর থেকেই মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের বৃহত্তম এ শহর অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। মঙ্গলবার ও বুধবার মিনিয়াপোলিসে সহিংস বিক্ষোভ হয়েছে।
ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ঠেকাতে মিনেসোটার গভর্নর টিম ওয়ালজ শহরটিতে ন্যাশনাল গার্ড বাহিনী মোতায়েন করলেও বৃহস্পতিবার প্রতিবাদকারীদের ক্ষোভের আগুন দমাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে খুব বেশি তৎপর দেখা যায়নি বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
বিক্ষোভকারীরা এদিন একটি গাড়ি এবং অন্তত তিনটি ভবনে অগ্নিসংযোগ করেছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে; টানা দ্বিতীয় রাতের মতো দোকানে লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে।
বুধবার রাতে দাঙ্গা পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ ও অন্তত ১৬টি ভবনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছিল।
গভর্নর ওয়ালজ ন্যাশনাল গার্ড বাহিনী মোতায়েনের আদেশে স্বাক্ষর করলেও বৃহস্পতিবার বিক্ষোভের কেন্দ্রস্থল পুলিশের কার্যালয় কিংবা দিনব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচিতে ওই বাহিনীর সদস্যদের দেখা যায়নি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প পরে এক টুইটে মিনিয়াপোলিসে অরাজকতা ঠেকাতে মেয়র জ্যাকব ফ্রের ব্যর্থতার কড়া সমালোচনা করেছেন।
মেয়র শহরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে ন্যাশনাল গার্ড বাহিনী পাঠিয়ে ‘সব ঠিক করা হবে’ বলে মন্তব্যও করেছেন তিনি।
“যখন লুটপাট শুরু হবে, তখন গুলিও শুরু হবে,” বৃহস্পতিবার রাতে দেওয়া টুইটে হুঁশিয়ার করেছেন তিনি।
স্থানীয়, অঙ্গরাজ্য ও কেন্দ্রীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বিক্ষোভকারীদের শান্ত হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত চলছে জানিয়ে দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করারও আশ্বাস দিয়েছেন তারা।
ফ্লয়েডের উপর পুলিশি নিপীড়নের একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর মিনিয়াপোলিসসহ যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ শুরু হয়।
প্রাথমিক ভাষ্যে পুলিশ জানায়, ফ্লয়েডের গাড়িতে জাল নোট থাকার খবর পেয়ে সোমবার কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। তারা ফ্লয়েডকে গাড়ি থেকে নেমে সরে যেতে বললে তিনি কর্মকর্তাদেরকে বাধা দেন এবং গ্রেপ্তার এড়ানোর চেষ্টা করেন।
পুলিশের সঙ্গে ফ্লয়েডের সংঘাতের সূত্রপাত কীভাবে, ভিডিওতে তা দেখা যায়নি। কেবল দেখা গেছে এক পুলিশ কর্মকর্তা ফ্লয়েডের ঘাড়ের ওপর হাঁটু দিয়ে তাকে মাটিতে চেপে ধরে রেখেছেন।
সেসময় ফ্লয়েড বলেছেন, “প্লিজ, আমি শ্বাস নিতে পারছি না”, “আমাকে মারবেন না।” এক পথচারীকে সে সময় ফ্লয়েডকে ছেড়ে দিতে পুলিশকে অনুরোধ করতেও দেখা গেছে।
পরে অ্যাম্বুলেন্সে করে ফ্লয়েডকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট চার পুলিশ সদস্যকে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মিনিয়াপোলিস পুলিশ। বরখাস্তদের মধ্যে ফ্লয়েডের ঘাড়ে হাঁটু রাখা পুলিশ কর্মকর্তাও আছেন।
বৃহস্পতিবারের বিক্ষোভে আন্দোলনকারীরা বরখাস্ত পুলিশ সদস্যদের গ্রেপ্তার ও তাদের বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান।
“আমরা কৃপা চাইছি না, যা করা সঠিক, তাই চাইছি,” দোষী পুলিশ সদস্যদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে বলেছেন নাগরিক অধিকারকর্মী রেভারেন্ড আল শার্পটন।
এদিনের বিক্ষোভে ২০১৪ সালে নিউ ইয়র্কে পুলিশের নির্যাতনে নিহত কৃষ্ণাঙ্গ যুবক এরিক গার্নারের মা গোয়েন কারও উপস্থিত ছিলেন।
ফ্লয়েডের ঘটনা ‘পুরনো ক্ষতে লবন লাগিয়ে দিয়েছে’ বলে মন্তব্যও করেছেন তিনি।
মিনিয়াপোলিসের পুলিশপ্রধান মেদারিয়া আরাদোনদো তার বিভাগের পক্ষ থেকে ফ্লয়েডের পরিবারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।
ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনায় দোষীদের শাস্তি নিশ্চিতে সময় চেয়েছেন অ্যাটর্নি মাইক ফ্রিম্যান।
পুলিশের নিপীড়নে ৪৬ বছর বয়সী এ কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যুর ঘটনায় বুধবার লস এঞ্জেলস এবং বৃহস্পতিবার ডেনভার ও মিনিয়াপোলিস সংলগ্ন সেইন্ট পল শহরেও বিক্ষোভ হয়েছে।