পুনর্নির্বাচিত হতে শি’র সাহায্য চেয়েছিলেন ট্রাম্প: বোল্টন
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে পুনর্নির্বাচিত হতে ডনাল্ড ট্রাম্প চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সহায়তা চেয়েছিলেন বলে সাবেক মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনের লেখা এক বইতে দাবি করা হয়েছে।
পুনর্নির্বাচিত হওয়ার লক্ষ্যে ট্রাম্প চীনের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য বিক্রি করতেও চেয়েছিলেন বলে বোল্টনের বইটিতে বলা হয়েছে, জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম।
রোনাল্ড রিগ্যান, সিনিয়র ও জুনিয়র বুশের প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা বোল্টন তার বইতে ট্রাম্পকে নিয়ে লিখেছেন, “কীভাবে হোয়াইট হাউস চালাতে হয়, তিনি এখনো সে বিষয়ে অজ্ঞ।”
৫৭৭ পৃষ্ঠার ‘দ্য রুম হয়ার ইট হ্যাপেনড: অ্যা হোয়াইট হাউস মেমোয়ার’ আগামী সপ্তাহ থেকে বাজারে আসার কথা থাকলেও বইটির প্রকাশ ঠেকাতে ট্রাম্প প্রশাসন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
বুধবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ বোল্টনের বইয়ের বাজারে আসা ঠেকাতে জরুরি আদেশ জারির আবেদন নিয়ে এক বিচারকের দ্বারস্থ হয়েছে।
তাৎক্ষণিকভাবে ট্রাম্প প্রশাসনের এ পদক্ষেপের প্রতিবাদ জানিয়েছে বইটির প্রকাশক সাইমন অ্যান্ড শুস্টার। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন বইয়ের দোকানে এরই মধ্যে বইটির কয়েক হাজার কপি পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে তারা।
ফক্স নিউজের এক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বোল্টনের বিরুদ্ধে আইন লংঘনের অভিযোগ এনেছেন।
“তিনি আইন ভেঙেছেন, এগুলো চূড়ান্ত গোপনীয় তথ্য এবং তা প্রকাশের অনুমতি নেননি তিনি,” বলেছেন তিনি।
বোল্টন গত বছরের এপ্রিলে নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদে নিয়োগ পান; যদিও সেপ্টেম্বরেই তাকে পদ ছাড়তে হয়।
বোল্টন বলছেন, তিনি নিজেই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদ ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। অন্যদিকে ট্রাম্প বলেছেন, তীব্র মতবিরোধের কারণে তিনি বোল্টনকে বরখাস্ত করেছিলেন।
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর গত সাড়ে তিন বছরে হোয়াইট হাউসের ভেতর ক্ষমতার অন্তর্দ্বন্দ্ব নিয়ে অসংখ্য প্রতিবেদন এসেছে; প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরোধের বিষয়ও গোপন থাকেনি। কিন্তু এবারই প্রথম প্রশাসনের সাবেক কোনো কর্মকর্তা ট্রাম্পের প্রশাসন পরিচালনা ও পররাষ্ট্র নীতির মৌলিক বিষয়বস্তু সম্পর্কে তার অজ্ঞতা নিয়ে বিস্ফোরক সব তথ্য হাজির করলেন।
প্রেসিডেন্ট তার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে প্রায়ই পররাষ্ট্র নীতিকে বদলেছেন- বইতে বোল্টন এমন চিত্রই হাজির করেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
ডেমোক্রেট প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেন সম্পর্কে ‘ধ্বংসাত্মক তথ্য’ দিতে ইউক্রেইনের উপর চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যেই ট্রাম্প দেশটির জন্য প্রতিশ্রুত সামরিক সাহায্য প্রত্যাহার করে নিতে চেয়েছিলেন বলে বইতে বোল্টন জানিয়েছেন।
গত বছরের জুনে জাপানের ওসাকায় অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে দুই নেতার এক বৈঠকে ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হতে চীনা প্রেসিডেন্টের সাহায্য চেয়েছিলেন- নিজের বইতে বোল্টন এমনটাই লিখেছেন বলে জানিয়েছে নিই ইয়র্ক টাইমস।
বৈঠকে শি জিনপিং চীনবিরোধী মার্কিন সমালোচকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, তারা নতুন একটি স্নায়ুযুদ্ধ বাধিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে।
চীনা প্রেসিডেন্ট মূলত ডেমোক্র্যাট শিবিরের বিরুদ্ধেই এ অভিযোগ করেছেন বলে সেসময় ট্রাম্প মনে করেন।
“অবাক ব্যাপার, তিনি (ট্রাম্প) পুরো আলোচনাই যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী (২০২০ সালের) প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে ঘুরিয়ে নেন। চীনের অর্থনৈতিক সক্ষমতার ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি এবং নির্বাচনে তার জয় নিশ্চিত করতে শি’র সাহায্য চান।
“কৃষকদের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি চীনারা যেন নির্বাচনে তাকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে সয়াবিন ও গম কেনা বাড়ায় তার উপর জোর দেন,” লিখেছেন বোল্টন।
শি যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য আলোচনায় কৃষিপণ্যের বিষয়টিতে অগ্রাধিকার দেয়ার বিষয়ে সম্মত হলে ট্রাম্প তাকে ‘চীনা ইতিহাসের সবচেয়ে সেরা নেতা’ অ্যাখ্যা দেন।
বোল্টনের বইতে এমনটা লেখা হলেও বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট লাইটিজার বলেছেন, পুনর্নির্বাচিত হতে ট্রাম্পের সাহায্য চাওয়ার ঘটনাটি ‘কখনোই ঘটেনি’।
গত বছরের জি-২০ সম্মেলনের উদ্বোধনী ডিনারে ট্রাম্প ও শি চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় উইঘুর প্রদেশে কর্তৃপক্ষের নির্মাণ করা বিভিন্ন ক্যাম্প নিয়েও কথা বলেছিলেন বলে বোল্টন জানিয়েছেন।
ট্রাম্প সেসময় ক্যাম্প নির্মাণের প্রতি তার সমর্থন জ্ঞাপন করেছিলেন এবং ‘এটাই সবচেয়ে সঠিক কাজ হচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেছিলেন।
চীনা কর্তৃপক্ষের বানানো এসব ক্যাম্পে উইঘুরের প্রায় ১০ লাখ বাসিন্দা এবং বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনের উপর ‘নিপীড়ন চালাচ্ছে’ বলে অভিযোগ করছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন।
বেইজিং অবশ্য শুরু থেকেই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
তবে বোল্টনের কথার সঙ্গে উইঘুর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের পদক্ষেপে মিল দেখা যাচ্ছে না বলে পর্যর্বেক্ষকদের মত। ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রায়ই প্রকাশ্যে উইঘুরে চীনের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করতে দেখা গেছে। বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে মুসলিম নির্যাতনে জড়িত কর্মকর্তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারির আইনে অনুমোদনও দিয়েছেন।