October 30, 2024
জাতীয়

পিপিই’র এখনও তেমন প্রয়োজন নেই : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

 

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

দেশে পারসোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্টের (পিপিই) এখনও তেমন প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফিংয়ে চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম (পিপিই) সংকট সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘চীনে যখন করোনাভাইরাস ধরা পড়েছিল, তখন তাদের কাছেও পিপিই ছিল না। এখনও আমাদের পিপিই অতটা দরকার নেই।’

সারাবিশ্বে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস নিয়ে ‘চিন্তার বিষয় নেই’ বলেও মন্তব্য করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। ‘কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার কারণে সারাদেশে এখন প্রায় ১৮ হাজার মানুষ সেলফ কোয়ারেন্টাইনে আছেন’ বলে জানান তিনি। সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এমন মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, করোনো শনাক্তকরণে এক লাখ কিট আমাদের হাতে আছে। কিট বা সরঞ্জাম নেই- এ বিষয় নিয়ে মানুষকে আতঙ্কিত করা ঠিক হবে না।

তিনি দাবি করেন, অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশের অবস্থা অনেক ভালো। আমরা যদি সেফল কোয়ারেন্টাইন বা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন যথাযথভাবে নিতে পারি তাহলে ভয়ের কিছু নেই, করোনা ছড়াবে না।

সরকারের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছি। জেলা পর্যায়ে ডিসি, এসপি, ইউনিয়ন পর্যায়ে চেয়ারম্যান, মেম্বাররা কাজ করছেন। সিটি করপোরেশনের মেয়র, কমিশনাররাও কাজ করছেন।

বিদেশফেরত ব্যক্তিদের সেলফ কোয়ারেন্টাইন না মানার বিষয়ে কিছুটা অসন্তোষ প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, যারা বিদেশ থেকে এসেছেন, তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। জোর করে তাদের ধরে আনা হচ্ছে। কিন্তু তারা যদি নিজেরাই কোয়ারেন্টাইনে থাকেন তাহলে আমরা তাদের সেবা দিতে পারব, তাদের পরিবারকেও রক্ষা করতে পারব। কিন্তু পালিয়ে বেড়ালে কোনোটাই সম্ভব নয়।

‘তাদের (বিদেশফেরত) কোয়ারেন্টাইনটা জরুরি’ উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীও ওয়াকিবহাল। তিনিও আমাদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিচ্ছেন। আমরা সেভাবে কাজ করে যাচ্ছি। যা যা প্রয়োজন সেগুলোর ব্যবস্থা করছি। ‘ইতোমধ্যে সব ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। দু-একটি চালু আছে। আশা করি তাও দ্রæত বন্ধ হয়ে যাবে’- বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

বিদেশফেরত বাংলাদেশিদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, ‘আপনাদের পূর্ণ চেষ্টা হবে কোয়ারেন্টাইনে থাকা। প্রয়োজন অনুযায়ী আমরাই চিকিৎসার ব্যবস্থা করব। খাওয়া-দাওয়ারও ব্যবস্থা করব। দেশের মানুষকে, আপনার নিজের পরিবারকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবেন না।’

মন্ত্রী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার পর পরিবার-পরিজন নিয়ে কক্সবাজার ভ্রমণেরও কঠোর সমালোচনা করেন। এ সময় সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিক ভাইদের অনুরোধে আমরা স্কুল-কলেজ বন্ধ করে ছুটির ঘোষণা দেই। কিন্তু কী হলো, পরিবার-পরিজন নিয়ে সবাই কক্সবাজার-চট্টগ্রাম বেড়াতে গেলেন।’ এ বিষয়ে সবাইকে আরও বেশি সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন ছিল বলে মন্তব্য করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

করোনার সংক্রমণরোধে মন্ত্রী ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোও সীমিত আকারে পালনের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমরা তো বন্ধ করে দিতে বলেনি, সীমিত আকারে পালনের কথা বলেছি। এটা তো সৌদি করেছে, আমিরাত করেছে, ইরান করেছে কিন্তু আমরা করতে পারিনি।’ বিষয়গুলো অনুধাবন করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহানে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাস এখন বৈশ্বিক মহামারি। এতে সারাবিশ্বে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ১৪ হাজারেরও বেশি মানুষ। এছাড়া চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন প্রায় ৯৯ হাজার মানুষ।

বাংলাদেশে এ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে গত ৮ মার্চ। এরপর দিন দিন এ ভাইরাসে সংক্রমণের সংখ্যা বেড়েছে। সর্বশেষ হিসাবে দেশে এখন পর্যন্ত ২৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন দুজন। করোনার বিস্তাররোধে এরই মধ্যে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে সভা-সমাবেশ ও গণজমায়েতের ওপর। চারটি দেশ ও অঞ্চল ছাড়া সব দেশ থেকেই যাত্রী আসা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

বন্ধ করে দেয়া হয়েছে দেশের সব বিপণিবিতান। এছাড়া মুলতবি করা হয়েছে জামিন ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি ছাড়া নিম্ন আদালতের বিচারিক কাজ। এমনকি মাদারীপুরের শিবচর উপজেলাকে লকডাউনও ঘোষণা করা হয়েছে।

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *