পিটিয়ে হত্যার ভিডিও দেখে দেখে গ্রেপ্তার চলছে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
গণপিটুনির মত অপরাধে যারাই যুক্ত হবেন, তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানিয়েছেন, গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে গুজব রটিয়ে ৬ জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে নয়টি, জিডি হয়েছে ১৫টি।
আমরা কিন্তু বসে নেই, আমরা সবগুলো ঘটনাকে সামনে এনে, এদের ভিডিও ফুটেজ দেখে, কারা কারা সম্পৃক্ত হয়েছিলেন, এগুলো দেখে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। ইতোমোধ্য আমরা ৮১ জনকে গ্রেপ্তার করেছি, আমরা আরও গ্রেপ্তার করব।
পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজে ‘মানুষের মাথা লাগবে’ বলে স¤প্রতি ফেসবুকে গুজব ছড়ানো হয়, যাতে বিভ্রান্ত না হতে দেশবাসীর প্রতি আহŸান জানিয়েছিল সরকার। গুজব ছড়ানোর অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়।
এরমধ্যে গত বৃহস্পতিবার নেত্রকোণা শহরে এক যুবকের ব্যাগ তলাশি করে ‘শিশুর মাথা’ পাওয়ার পর তাকে পিটিয়ে হত্যা করে এলাকাবাসী। তারপরও দেশের বিভিন্ন স্থানে গণপিটুনির ঘটনা ঘটে চলছে প্রতিদিন। পুরনো শত্র“তার জেরে মিথ্যা অভিযোগ তুলে জনতাকে লেলিয়ে দিয়ে হত্যার ঘটনাও রয়েছে এর মধ্যে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যেসব অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে, তার সবগুলাই নিছক গুজব, সবগুলোই ভিত্তিহীন। একজনে যদি হত্যাকাণ্ড ঘটান, কিংবা ১০০ জনে ঘটান, শাস্তি কিন্তু একই রকম। এই ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটালে অবশ্যই আমরা তাকে আইনের মুখোমুখি করব। আইন অনুযায়ী শাস্তি পেতেই হবে। যারা ঘটনার সত্যতা বিচার না করে নিজেরা আইন হাতে তুলে নিচ্ছেন, তাদর নিকট সবিনয় অনুরোধ করব, আপনারা কোনোক্রমেই আইন হাতে তুলে নেবেন না।
কারও বিষয়ে কোনো সন্দেহ হলে তাকে প্রয়োজনে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার হাতে সোপর্দ করতে, অথবা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে ফোন করে জানাতে, অথবা জাতীয় জরুরি সেবার নম্বর ৯৯৯ এ ফোন করে জানাতে, অথবা এলাকার সবাইকে জানাতে বলেন মন্ত্রী।
ছেলেধরার সন্দেহে ঢাকার বাড্ডায় এক নারীকে পিটিয়ে মারার প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী বলেন, মা তার সন্তানকে ভর্তির তথ্য নিতে গিয়ে স্কুলের সামনে যে ঘটনার শিকার হলেন, এটা সারা দেশবাসীকে ব্যথিত করেছে। আমরাও এ ঘটনা খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।
কেন এই ঘটনা ঘটাল, যারা যারা সম্পৃক্ত ছিল, এই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে ইতোমধ্যে আমরা সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছি। যারা যারা সেখানে ছিল, সবাইকে শনাক্ত করে তার ব্যবস্থা আমরা নেব।
গুজবে কান না দেওয়ার আহŸান জানিয়ে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, আমি আবেদন রাখছি, কেউ যেন সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে অহেতুক উত্তেজিত না হয়ে ঘটনাটা জানতে চেষ্টা করেন, বুঝতে চেষ্টা করেন। এটা তো একটা বোঝারও বিষয় আছে। মা গেছে সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করার জন্য, সে কোনো দিন এই ধরনের ঘৃণ্য ঘটনা করতে পারে না, এটা তো নিজেরও বোঝা উচিৎ।
আর গুজব ছড়ানোর বিষয়ে সতর্ক করে তিনি বলেন, ফেসবুকে যারা রটনায় ঘটনা ঘটাচ্ছেন, আমাদের পুলিশ কিন্তু বসে থাকবে না। যারাই ঘটাবেন, তাদেরকে আমরা শনাক্ত করব, তাদেরকে আইনের মুখোমুখি আমরা অবশ্যই করব। আমাদের পুলিশকে আর এত অদক্ষ ভাববেন না।
‘পদ্মা সেতুর জন্য মাথা লাগবে’ বলে যারা গুজব ছড়িয়েছে, তাদের মধ্যে চারজনকে শনাক্ত করে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে তিনি মন্ত্রী। তিনি বলেন, মানসিক প্রতিবন্ধী, তাকেও এই পিটুনির শিকার হতে হয়েছে। সমাজের যে শাসন সেইটার মনে হয় অবক্ষয় ঘটেছে, সেইজন্যই এই ধরনের ঘটনাও আমাদের দেখতে হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের গুজব যারা রটিয়েছে, তাদের একটা উদ্দেশ্য নিশ্চয় ছিল। উদ্দেশ্যমূলকভাবে তারা এ ধরনের ঘটনা হয়তো ঘটিয়েছে। অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করা, মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্যই এই গুজব। এই গুজবের নিশ্চয়ই কোনো উদ্দেশ্য আছে, আমরা তা দেখছি।