পার্সেল প্রতারক চক্রের ১০ জন রিমান্ডে
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় পার্সেল প্রতারক চক্রের ১০ জনের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. হাসিবুল হক শুনানি শেষে এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ডে যাওয়া আসামিরা হলেন-সুমন হোসেন ওরফে ইমরান (৩১), মোহসিন হোসেন ওরফে শাওন (৩০), ইমরান হাসান ওরফে ইকবাল (৩০), নাজমুল হক রনি (৩০), মোসা. নুসরাত জাহান (২৪)। এছাড়া নাইজেরিয়ান নাগরিক চিডি (৪০), ইমানুয়েল (২৬), জন (৩১), অ্যাঙ্গোলিয়ান নাগরিক উইলসন ডে কনসিকাউ (৩৫), ক্যামেরুনের নাগরিক গুলগ্নি পাপিনি (৩২।
এ মামলার প্রধান বাংলাদেশি মূলহোতা বিপ্লব লস্কর (৩৪) অন্য মামলায় রিমান্ডে থাকায় তাকে আজ আদালতে হাজির করা হয়নি।
এর আগে সোমবার রাতে রাজধানীর মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের ওয়েব বেজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম। এসময় একটি বিদেশি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগজিন, ২৮টি মোবাইল, একটি কম্পিউটার, ৪৯১টি এটিএম কার্ড, ২৬টি চেক বই, তিনটি ওয়ারলেস পকেট রাউটার, একটি প্রাইভেটকার, সাড়ে তিন লাখ জাল টাকা, নগদ ১১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ও ২৬৩টি সিমকার্ড জব্দ করা হয়।
এ ঘটনায় মিরপুর মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। পরদিন গত মঙ্গলবার তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মিরপুর মডেল থানার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাদের সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করে পুলিশ। তবে আদালত রিমান্ড শুনানির জন্য বুধবার দিন ধার্য করেন।
মঙ্গলবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি প্রধান) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, পার্সেল প্রতারক কখনো বাংলাদেশে বসে আবার কখনো দেশের বাইরে থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বন্ধুত্ব গড়ে পার্সেলে ডলার অথবা মূল্যবান উপহার পাঠানোর ফাঁদ পেতে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। চক্রের দেশি-বিদেশি সদস্যরা বিভিন্ন পন্থায় সাধারণ মানুষের ফেসবুক আইডি, হোয়াটসঅ্যাপ, ই-মেইল সংগ্রহ করে ইউএস আর্মি, ইউএস নেভিসহ বিভিন্ন পরিচয় ব্যবহার করে টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলতেন। সম্পর্কের এক পর্যায়ে স্বর্ণ, মূল্যবান পাথর, হিরা, বিশাল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা, ডলার/ইউরো ইত্যাদি উপহার পাঠানোর কথা বলে ফাঁদে ফেলে।
এরপর সেগুলো ব্যক্তির নাম-ঠিকানা উল্লেখ করে ভুয়া পার্সেলের ছবি পাঠায়। প্রতারিত ব্যক্তিরা সরল বিশ্বাসে পার্সেল গ্রহনের অপেক্ষায় থাকেন। প্রতারক চক্রের কলিং বিভাগে কর্মরত বাংলাদেশি প্রতারকরা বিভিন্ন অপারেটরের নম্বর ব্যবহার করে নিজেকে কাস্টমস অফিসার পরিচয় দিয়ে জানায়, কিং এক্সপ্রেস সার্ভিস থেকে একটি পার্সেল এসেছে। পার্সেলটি ছাড়াতে কাস্টমস হাউজ ফি বাবদ মোটা অংকের টাকা পরিশোধ করতে হবে।
পার্সেল পাওয়ার আশায় কাস্টমস কর্মকর্তার দাবি করা টাকা পাঠিয়ে দেন। এরপর কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী ব্যক্তি আবারও ফোন করে জানান, বিদেশি বন্ধুর পাঠানো পার্সেলে বিপুল পরিমাণ অবৈধ ডলার রয়েছে। যা ছাড়াতে আরও বেশি টাকা প্রয়োজন। এ টাকা দিতে ব্যর্থ হলে প্রতারিত ব্যক্তির নামে মানি লন্ডারিং আইনসহ অন্যান্য আইনে মামলা হবে। এভাবে মিথ্যা ভয়ভীতি দেখান।
গ্রেফতার বিপ্লবের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর, খিলক্ষেত ও কাফরুল থানায় মানি লন্ডারিংয়ের মামলা রয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বনানী থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় শতাধিক মামলা রয়েছে। এ মামলায় তিনি একাধিকবার গ্রেফতার হয়েছেন।