পাপিয়াকাণ্ডে ওয়েস্টিনযোগ পেলে আলাদা অনুসন্ধান হবে: দুদক
ক্ষমতাসীন দলের যুব সংগঠনের বহিষ্কৃত নেতা শামীমা নূর পাপিয়ার বিরুদ্ধে অবৈধ অর্থ উপার্জনের অভিযোগের চলমান তদন্তে ওয়েস্টিন হোটেল কর্তৃপক্ষের সম্পৃক্ততার কোনো তথ্য পেলে তা আলাদাভাবে অনুসন্ধান করবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সোমবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত একথা জানান।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিমানবন্দর থেকে পাপিয়াসহ চারজনকে গ্রেপ্তারের পর রাজধানীর গুলশানের অভিজাত ওয়েস্টিন হোটেলে অভিযান চালিয়ে প্রেসিডেনশিয়াল সুইট থেকে চার তরুণী, বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ ও মাদক দ্রব্য, অস্ত্র ও একাধিক ভিনদেশি মুদ্রা উদ্ধার করে র্যাব।
প্রতিদিন দুই হাজার ডলারে বিলাসবহুল কক্ষটি ভাড়া নিয়ে পাপিয়া যৌনবাণিজ্য চালাতেন বলে র্যাবের ভাষ্য। এছাড়াও স্বামী সুমন চৌধুরীকে নিয়ে পাপিয়া ‘অস্ত্র ও মাদকের কারবার, চাঁদাবাজি, চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণাসহ বিভিন্নভাবে মানুষের অর্থ আত্মসাত করে’ বিপুল সম্পদ গড়ার অভিযোগের কথাও বলা হয়।
এই অভিযোগের তদন্তের স্বার্থে এক চিঠির জবাবে ওয়েস্টিনে পাপিয়ার পরিশোধ করা তিন কোটি ২৩ লাখ টাকার বিল এবং সেখানে ১০ অতিথিকে নিয়ে তার অবস্থানের বিষয়ে তথ্যসহ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র জমা পড়েছে বলে দুদকের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে দুদক সচিব বলেন, অভিযোগের অনুসন্ধানের স্বার্থে তথ্য চেয়ে ৫৯টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বিএফআইউতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
“হোটেল ওয়েস্টিনেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। হোটেল কর্তৃপক্ষ কিছু তথ্য দিয়েছে। তদন্তের স্বার্থেই এই মুহূর্তে বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না।”
পাপিয়ার কর্মকাণ্ডের সঙ্গে হোটেলের মালিক নূর আলীর সম্পৃক্ততার অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “তার (পাপিয়ার) অবৈধ সম্পদ অর্জনের সাথে হোটেল কর্তৃপক্ষের সম্পৃক্ততার কোনো তথ্য পাওয়া গেলে তা আলাদা অনুসন্ধানের মাধ্যমে দেখা হবে।”
ওয়েস্টিন হোটেলের প্রেসিডেনশিয়াল স্যুইট মাসের পর মাস ভাড়া রেখে পাপিয়ার বানানো সেই ডেরায় কারা কারা যেতেন, সে বিষয়ে গোয়েন্দা পুলিশও হোটেল কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য চাইছে।
এছাড়া ওয়েস্টিনের কাছে পাপিয়ার বিপুল পরিমাণ মদ কেনার তথ্য চেয়ে গত সপ্তাহে চিঠি দিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরও।
‘দি ওয়েস্টিন ঢাকা’ ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের একটি হোটেল, যে কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে রয়েছেন ব্যবসায়ী নূর আলী। তার সঙ্গে পাপিয়াসহ তার সঙ্গী তরুণীদের সঙ্গে একটি ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল।
ওয়েস্টিন কর্তৃপক্ষ দাবি করে আসছে, পাপিয়ার কারবারের বিষয়ে তারা কিছুই জানতেন না।
পাপিয়াসহ গ্রেপ্তার চারজনকে বিমানবন্দর থানায় হস্তান্তর করা হয়। জাল মুদ্রা উদ্ধারের ঘটনায় ওই থানায় একটি মামলা করা হয়, যেখানে পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরীসহ চারজনকেই আসামি করা হয়।
এছাড়া অস্ত্র ও মদ উদ্ধারের ঘটনায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় আরও দুটি মামলা করা হয় পাপিয়া ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে।
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন মামলায় পাপিয়া ও তার স্বামীকে ১৫ দিনের এবং এক মামলায় তাদের সহযোগী সাব্বির খন্দকার ও শেখ তায়্যিবাকে পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতে দিয়েছে আদালত।