পানির ধরে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন
রংপুরের আশরাফ উদ্দিন। ৮০ হাজার টাকা দিয়ে কয়েকজন মিলে একটি গরু কিনেছিলেন। কোরবানির চামড়াটি সরাসরি বিক্রি করে সেই অর্থ মসজিদে দান করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু চামড়া বিক্রি করতে গিয়ে দাম শুনে অবাক হয়েছেন। মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছে তিনি শেষ পর্যন্ত বড় গরুর চামড়াটি মাত্র সাড়ে ৩০০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন।
শুধু আশরাফ উদ্দিন নন, তার মত অনেকেই এবার গরু চামড়া বিক্রি করতে গিয়ে সরকার নির্ধারিত দাম তো পাননি, উল্টো পানির ধরে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। আর এই চামড়ার অধিকাংশই কিনেছেন মৌসুমী ও ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা।
গেল কয়েক বছর থেকে চামড়া শিল্পে কাঁচা চামড়া দামে ধস নেমেছে। প্রতিবছর সরকার চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিলেও মধ্যস্বত্বভোগী ও ট্যানারি মালিকদের সিন্ডিকেটের কারণে প্রকৃত দাম পান না বিক্রেতারা। এবারও তাই হয়েছে। সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম নিয়ে তামাশা করা হয়েছে বিক্রেতাদের সাথে। গরুর চামড়া বিক্রি করতে গিয়ে অনেকে অর্ধেক দামও পায়নি। আর ছাগলের চামড়া পানির দামে দিতে হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে চামড়া বিক্রি করতে না পেরে ফেলে দিয়ে এসেছেন অনেকে। গরু ও ছাগলের চামড়া বিক্রি হলেও এবার মাথার চামড়া কোনোভাবে বিক্রি করা যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৫ সাল থেকে কাঁচা চামড়ার দামে ধস নামতে শুরু করে। তার আগে প্রতিটি গরুর চামড়া সাড়ে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন অনেকে। কিন্তু গেল সাত বছর থেকে আর কোনো দাম মিলছে না। প্রতিবছর সরকার দাম নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু সরকারের নির্ধারিত দামকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সিন্ডিকেট করে মধ্যস্বত্বভোগী ও ট্যানারি মালিকরা লাভবান হচ্ছেন। বিশেষ করে বিভিন্ন মসজিদ মাদরাসা থেকে সংগৃহীত চামড়া বিক্রি করতে গিয়ে কোনো দাম পাওয়া যাচ্ছে না।
ঈদের পরদিন ঢাকার ফরিদাবাদ মাদরাসায় সংগৃহীত গরুর চামড়া বিক্রি করা হয়েছে সাড়ে সাতশ টাকা পিস এবং ছাগলের চামড়া ১৫ টাকা ফুট। কিন্তু এই টাকা তারা এখনো হাতে পাননি ট্যানারি মালিকদের কাছে চামড়া বিক্রি করার ফলে। তাতে চামড়াগুলো মাদরাসা থেকে বিক্রি করার সময়ে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা তেমন কোনো দাম বলেনি।
মোহাম্মদপুর জামিয়া রহমানিয়া আজাদীয়া মাদরাসার কোষাধক্ষ্য ও শিক্ষক আবু বকর সিদ্দিক বলছিলেন, আমরা এবারও চামড়া কালেকশন করেছি। সেগুলো এক ট্যানারি মালিককে দিয়েছি। তবে বাজার দর অনুযায়ী যা মূল্য আছে সেটা মনে হয় পাবো না। আমরা দাম পেলেও অবশ্য শহরগুলোতে যারা এই চামড়া বিক্রি করছেন তারা কোনভাবে দাম পাচ্ছেন না বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ট্যানারি মালিক সমিতির নেতা শাহিন আহমেদসহ লেদার গুডস অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাদের কারই বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।